প্রকাশ: শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৯:৩৯ PM
অপরিকল্পিত ভাবে মাছের খামার গড়ে তোলায় জলাবদ্ধতার ফলে দুইশত একর জমি গত ৮ বছর ধরে জমি অনাবাদী অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ বিষয়টি খোঁজ নেয়নি কোনদিন। ভূক্তভোগি কৃষকরা ক্ষমতার ধাম্ভিকতায় অসহায় হয়ে পড়ে। সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক. ম মোজাম্মেল হকের ছেলের বন্ধু পরিচয়ে স্থানীয় সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ এলাকাবাসির। জলাবদ্ধতার সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে ভুক্তভোগী এলাকাবাসি বিভিন্ন সময় মানববন্ধন করেন, প্রতিবাদ সভা ও লিখিত অভিযোগ দিয়েও পায়নি কোন পরিত্রাণ। ঘটনাটি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ীর ইউনিয়নের বাদামিয়া গ্রামে। ভূক্তভোগী পরিবারগুলো জানান, উপজেলার মঠবাড়ী ইউনিয়নের বাদামিয়া গ্রামের আইত্তাকুড়ি ও হিংরাকুড়ি বিলের পানি নামতো খিরু নদীতে। ২০১৭ সালের দিকে বাদামিয়া এলাকায় ১০০ একর জমিতে মাছের খামার করেন সাজ্জাদ হোসেন (লালন) নামের এক ব্যাক্তি। তিনি একই ইউনিয়নের অলহরি খারহর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি সদ্য সাবেক সদ্য সাবেক মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হকের ছেলেকে বন্ধু পরিচয় দিতেন। এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে অন্তত ৭০ একর জমি লীজ নিয়ে এবং নিজের ক্রয়কৃত জমিতে মাছের খামারটি শুরু করেন। মাছের খামার করার কারণে বিল এলাকার পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ২০০ একর জমি অনাবাদী অবস্থায় রয়েছে। গত ৮ বছর ফসলী জমি অনাবাদী হয়ে পড়ে থাকায় প্রতিকার চেয়ে ২০১৭ সাল থেকে প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের কাছে কাছে ঘুরছেন ভুক্তভোগীরা। কিন্তু মন্ত্রীর ছেলের বন্ধু হওয়ায় মেলেনি কোন প্রতিকার।
দুইশত এইকর জমিই ধান উৎপাদনের একটি ভূমি। যেখান থেকে প্রতি সিজনে দেড় কোটি টাকারও অধিক পরিমাণ ধান উৎপাদন হয়ে থাকতো। পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দেয়ায় গত আট বছরে ওই এলাকার কৃষকদের ১২ কোটি টাকার অধিক পরিমাণের ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ভুক্তভোগী শতাধিক মানুষ মানববন্ধন করেন, করেছেন প্রতিবাদ সভা, বিভিন্ন দপ্তরে দিয়েছেন অলিথিক অভিযোগও। ব্যানারে লেখা ছিল- আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতা অপব্যবহার করে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হকের পরিবারের ব্যবসায়িক পার্টনার ত্রিশাল উপজেলার ভূমিদস্যু সাজ্জাদ হোসেন ও তার দোসরদের বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে মানববন্ধন। এতে আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঞ্চালনায় শাহ নেওয়াজ লিটনসহ বক্তব্য রাখেন স্থানীয় অনেকে।
স্থানীয়রা বলেন, সাবেক মন্ত্রীর বন্ধু পরিচয়ে জমি লিজ নিয়ে, লিজের টাকাও দিতেন না সাজ্জাদ। টাকা চাইলে হুমকি, মামলা দিয়ে হয়রানী করার ভয় দেখানো হতো। তারা আরো জানান, অপরিকল্পিতভাবে মাছের খামার করার কারণে ২০০ একর জমি পানিতে তলিয়ে থাকায় ফসল হচ্ছে না। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রেখে খামার করায় সমস্যার কথা জানিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে আবেদন করা হয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে আবদেন করার পর তৎকালীন উপজেলা প্রশাসন পানি নিষ্কাশনে খাল খননের পদক্ষেপও নিলেও পরবির্তিতে অদৃশ্য কারণে থেমে যায়। পরে আবারও ২০১৯ সাল ও চলতি বছরের জানুয়ারিতে পানি নিষ্কাশনের পদক্ষেপ নিতে উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন ভুক্তভোগীরা। সর্বশেষ গত ৩০ আগস্ট পূণরায় প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছেন এলাকাবাসী।
উপজেলা শহরের কাছাকাছি দুইশত একর জমি জলাবদ্ধতার কারণে চাষাবাদ বন্ধ থাকলেও খবর রাখেনি স্থানীয় কৃষি বিভাগ। তাদের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি কোন উদ্যোগ। তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে মৎস্য খামারের মালিক সাজ্জাদ হোসেন (লালন) জানান, খাল খনন করা আছে, অভিযোগকারীরা সাথে থেকে যেভাবে করলে তাদের ভাল হয় তারা করতে পারেন। তাছাড়াও প্রশানের পক্ষ থেকেও উদ্যোগ নিলে আমার কোন আপত্তি নেই। আমার সীমানায় যতটুকু আছে আমি আমার নিজ দায়িত্বে ওইটুকু করে দিবো। ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জুয়েল আহমেদ বলেন, জলাবদ্ধতার বিষয়ে অফিযোগ পেয়েছি। অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যা নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।