কীটনাশক ও জীবাণু পরিষ্কার করতে ফল ও সবজি ভালো মতো ধোয়া জরুরি। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে ফল ও সবজির বিকল্প নেই। তবে এসব খাবার অবশ্যই ভালোমতো ধুতে জানতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অণুজীববিজ্ঞানী ও ‘দ্য জার্ম ফাইলস’ গ্রন্থের লেখক জেসন টেট্রো ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন।
তার মতে, “ফল ও সবজি ধোয়ার গুরুত্ব, পদ্ধতি এবং বাজারজাতকৃত ‘রেডি টু ইট’ কতটা কার্যকর এসব সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা থাকা জরুরি।”
যে কারণে ফল ও সবজি ধোয়া জরুরি
জেসন টেট্রো জানান, ১৯৫০-এর দশক থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে ফল ও সবজি ধোয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ, এগুলোর গায়ে পোকামাকড়নাশক, ধুলোবালি এবং নানান ধরনের ক্ষতিকর জীবাণু থাকতে পারে। আর এসব জীবাণু মানুষের শরীরে খাদ্যবাহিত রোগ ছড়াতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)’ একই পরামর্শ দিয়ে থাকে। যে উৎস থেকেই ফল বা সবজি আনা হোক না কেন, রান্না বা খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া বাধ্যতামূলক।
অনেক সময় আলসেমি কিংবা সময়ের অভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি উপেক্ষা করা হয়। তাই বর্তমান বাজারে পূর্বধোয়া প্যাকেটজাত সবজি যেমন- লেটুস, পুঁইশাক বা বেবি ক্যারট পাওয়া যায়। যদিও সেগুলোর গায়ে লেখা থাকে প্রি-ওয়াশড বা ‘রেডি টু ইট’।
তারপরও এফডিএ বলছে, নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি ফল ও সবজি রান্নার আগে ভালো করে ধুয়ে নেওয়া উচিত।
তাহলে ধোয়ার জন্য শুধু পানি কি যথেষ্ট?
বাজারে নানান ধরনের ফল ও সবজি ধোয়ার তরল বা স্প্রে পাওয়া যায়। লেবু, ভিনেগার, লবণ ওয়াশ প্রলুব্ধ করে তুলতে পারে। তবে এগুলো আসলে কতটা কার্যকর?
এফডিএ-র সুস্পষ্ট বক্তব্য হল, চলমান পানির নিচে ধুয়ে নেওয়াই সবচেয়ে ভালো ও নিরাপদ পদ্ধতি। খোসা মোটা যেসব ফল, সবজি যেমন- পেঁপে, আম, বেগুন- এগুলো হালকা করে ঘষে ধোয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে জীবাণু এবং ময়লা ভালোভাবে দূর হয়।
জেসন টেট্রো বলেন, “সাধারণ পানি এবং হালকা হাতের ঘষামাজা প্রায়শই বাজারজাত ওয়াশের মতোই কার্যকর হতে পারে।”
তবে কারও যদি বেশি নিশ্চিন্ত থাকতে ইচ্ছা হয়, তাহলে প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি পরিষ্কারক ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ এখনকার ওয়াশগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাকৃতিক উৎস থেকে তৈরি। যেমন- ভিনেগার, লবণ, কম মাত্রার অ্যাসিড, এমনকি ফল থেকেই নিষ্কাশিত উপাদান।
তাহলে বাজারের ওয়াশ ব্যবহার করলে কোনো ক্ষতি হয় না?
টেট্রোর মতে, “বাজারের ‘ফ্রুট অ্যান্ড ভেজি ওয়াশ’ ব্যবহার করলে ক্ষতির সম্ভাবনা কম। কারণ এগুলো এখন আর আগের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক দিয়ে তৈরি হয় না। তবে কার্যকারিতা নিয়ে কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়।”
গবেষণা বলছে, অনেক সময় কীটনাশক পুরোপুরি দূর করতে পাঁচ থেকে দশ মিনিট পর্যন্ত সময় লাগে। তবে এই ওয়াশগুলোর নির্দেশনায় সাধারণত এক মিনিটের বেশি ব্যবহার করতে বলা হয় না।
ফলে এর মাধ্যমে পুরোপুরি পরিষ্কার হওয়া নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়।
যেভাবে ধোয়া উচিত
জেসন টেট্রো পরামর্শ দেন, “আমার পছন্দ হল চলমান পানির নিচে ছাঁকনিতে রেখে ধোয়া এবং হালকা হাতে ঘষা। খোসা মোটা হলে স্ক্রাব করাও ভালো।”
তবে কেউ যদি আরেকটু গভীরভাবে পরিষ্কার করতে চান, তাহলে বাড়িতে থাকা কিছু উপাদান দিয়েই নিরাপদ মিশ্রণ তৈরি করা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘উইনিভার্সিটি অফ মেইন’ সুপারিশ করে যে, দুই কাপ পানির সঙ্গে আধা কাপ সাদা ভিনেগার মিশিয়ে তাতে কিছু সময় ফল বা সবজি ভিজিয়ে রাখলে ধুলাবালি, ব্যাক্টেরিয়া এবং কিছু কীটনাশক দূর হয়।
পানিতে বেইকিং সোডা মিশিয়েও ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে ধোয়া যেতে পারে। এটি কীটনাশকের উপস্থিতি কমাতে বিশেষভাবে সহায়ক।
তাহলে প্রধান বিষয় হল
বর্তমানে সামাজিক মাধ্যমে ফল ও সবজি পরিষ্কারের নানান নতুন পদ্ধতির ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে। দেখতে আকর্ষণীয় লাগলেও প্রতিটি পদ্ধতি যে কার্যকর তা বলা যায় না।
জেসন টেট্রো বলেন, “অনেকেই কীটনাশকের জন্য উদ্বিগ্ন থাকেন, তবে একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট হিসেবে আমি আরও বেশি উদ্বিগ্ন থাকি প্যাথোজেন বা জীবাণু নিয়ে, যেগুলো খাবারের মাধ্যমে শরীরে ঢুকে নানান রোগ সৃষ্টি করতে পারে।”
আমরা দেখেছি, “পাতাযুক্ত সবজি যেমন- পালংশাক, লেটুস, এমনকি তরমুজ বা পেঁয়াজ থেকেও বড় ধরনের খাদ্যবাহিত রোগ ছড়িয়েছে। এগুলো থেকে বাঁচতে হলে সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হল— ফল ও সবজির গায়ে থাকা জীবাণুর মাত্রা কমানো, যা শুধুমাত্র সাবলীলভাবে ধোয়ার মাধ্যমেই সম্ভব।”
জেসন টেট্রো স্পষ্ট করে বলেন, “প্রাকৃতিক ওয়াশ বা অর্গানিক উপাদান এই জীবাণু দূর করতে পারবে না। তবে সাধারণ পানি ও একটু সময় নিয়ে ঘষে ধোয়াতে কাজ হবে বেশি।”