পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের আবাসিক এলাকায় বস্তায় ভরে পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে আট কুকুর ছানাকে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) রাত ১টার দিকে শহরের পিয়ারপুর এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে নিশি রহমান নামে অভিযুক্ত সেই নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
অভিযুক্ত নিশি রহমান ঈশ্বরদী উপজেলা ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক হাসানুর রহমান নয়নের স্ত্রী।
এর আগে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বাদী হয়ে ঈশ্বরদী থানায় একটি মামলা করেন। তিনি জানান, প্রাণী কল্যাণ আইন-২০১৯ এর ৭ ধারায় মামলা করা হয়েছে। মামলায় ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের ঈশ্বরদীর ব্যবস্থাপক হাসানুর রহমান নয়নের স্ত্রী নিশি রহমানকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে।
ঈশ্বরদী থানার ওসি আ স ম আব্দুন নূর মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার রাতে ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রণব কুমার, ঢাকা থেকে আসা ‘পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার’র চেয়ারপারসন রাকিবুল হক অমিত, সদস্য সাজেদুল ইসলাম শিশির, সমাজকর্মী মোশাররফ হোসেন মুসা, রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসনিম রহমান প্রাপ্তিসহ ঈশ্বরদীর বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রায় অর্ধশত মানুষের উপস্থিতিতে ঈশ্বরদী থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়।
মামলার বাদী ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বলেন, ‘ঘটনাটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত সমালোচিত হয়েছে। এ কারণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার আমাকে ফোন করে বলেছেন, এই ঘটনা অমানবিক। এই ঘটনা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। তাই প্রাণী হত্যায় জড়িতদের কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালকও আমাকে ফোন করে মামলা করার নির্দেশনা দিয়েছেন।’
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, ‘৮ কুকুর ছানা হত্যার ঘটনায় ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক হাসানুর রহমান নয়নকে গেজেটেড সরকারি কোয়ার্টার ছাড়তে লিখিত নির্দেশ এবং কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার পর তারা সরকারি বাসা ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন। মামলার পর আসামিও গ্রেফতার হয়েছেন।
জানা গেছে, ঈশ্বরদী উপজেলার সদ্য বদলি হওয়া নির্বাহী অফিসার সুবির কুমার দাশের পোষা কুকুর ছিল মা কুকুরটি। ঈশ্বরদী থেকে বদলি হয়ে বর্তমানে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত সুবির কুমার দাশ মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমি ঈশ্বরদী থেকে কিছুদিন হলো ঝিনাইদহে পদোন্নতি পেয়ে বদলি হয়ে এলেও আমার কুকুরগুলোকে ঈশ্বরদীতেই ঠিকমতো খাওয়া ও লালন পালন করার ব্যবস্থা করা ছিল। বদলি হয়ে আসার কারণে তাৎক্ষনিকভাবে ওদের ঝিনাইদহে আনতে পারিনি। কুকুর ছানাগুলোকে হত্যা করার খবর শুনে আমি মর্মাহত হয়েছি। এ ঘটনায় অভিযুক্ত একমাত্র আসামি গ্রেফতার হয়েছে জেনে কিছুটা স্বস্তি অনুভব করছি। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
অভিযুক্ত ও গ্রেফতার নিশি আকতার বলেন, ‘কুকুর ছানাগুলো আমাদের বাসার সিঁড়ির পাশে থাকতো এবং খুব বিরক্ত করতো। তাই আমি বাজারের ব্যাগে ভরে পুকুরের পাশে একটি গাছের গোড়ায় রেখে আসি। আমি নিজে ছানাগুলোকে পুকুরে ফেলিনি। কীভাবে পুকুরে পড়ে মারা গেছে আমি তা জানি না।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাড়ির কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সোমবার সকালে নয়ন স্যার মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। আমি ছানাগুলোর কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি কিছু জানেন না বলেন। তখন তার ছেলে বলে ‘আম্মু ছানাগুলোকে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে দিয়েছে।’ এরপর আমরা পুকুরে গিয়ে একটি বস্তা ভাসতে দেখি। বস্তা তুলে আটটি ছানাকেই মৃত অবস্থায় পাই।