আগামী ৫ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২০২৬ বিশ্বকাপ ফুটবলের জমকালো ড্র অনুষ্ঠান। তবে ফুটবল বিশ্বের চোখ এখন বল বা গ্রুপ বিন্যাসের চেয়ে বেশি আটকে আছে মঞ্চের বাইরের রাজনীতিতে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। জোর গুঞ্জন রয়েছে, সম্প্রতি হাতছাড়া হওয়া নোবেল শান্তি পুরস্কারের আক্ষেপ হয়তো এবার ফিফার মঞ্চেই ঘুচতে চলেছে তার।
ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন ‘ফিফা পিস প্রাইজ’ বা ফিফা শান্তি পুরস্কারের। ধারণা করা হচ্ছে, এই নতুন পুরস্কারটিই তুলে দেওয়া হতে পারে ট্রাম্পের হাতে।
কিছুদিন আগেই ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেত্রী মারিয়া করিনা মাচাদোর কাছে নোবেল শান্তি পুরস্কারের দৌড়ে হেরে যান ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপরই ফিফা তাদের নিজস্ব শান্তি পুরস্কার চালুর ঘোষণা দেয়।
ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনো এর আগে ইনস্টাগ্রামে লিখেছিলেন, ট্রাম্পের ‘নিশ্চিতভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া উচিত’। মায়ামিতে এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প এই পুরস্কার পাবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ইনফান্তিনো রহস্য রেখে বলেছিলেন, ‘দেখা যাক।’
বিশ্লেষকদের মতে, নোবেল না পাওয়ার ক্ষত ভরাতে ট্রাম্পের জন্য এটি একটি ‘সান্ত্বনা পুরস্কার’ হতে পারে।
ইনফান্তিনো-ট্রাম্প সমীকরণ: বন্ধুত্ব নাকি স্বার্থ?
ইনফান্তিনো ট্রাম্পকে নিজের ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ দাবি করলেও বিশ্লেষকরা একে দেখছেন স্বার্থের সম্পর্ক হিসেবে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রাক্তন স্বেচ্ছাসেবক সিলভিয়া শেনকের মতে, ২০২৬ বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ যুক্তরাষ্ট্র হওয়ায় ট্রাম্পকে খুশি রাখা ইনফান্তিনোর জন্য জরুরি। অন্যদিকে ট্রাম্পের ইগো তুষ্ট করতে এই পুরস্কার কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
মানবাধিকার সংস্থার প্রশ্ন ও বিতর্ক
ফিফার এই পুরস্কার নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW)। সংস্থাটি ফিফাকে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছে এই পুরস্কারের মানদণ্ড কী, বিচারক কারা এবং মনোনয়ন প্রক্রিয়াই বা কেমন? চিঠির কোনো উত্তর দেয়নি ফিফা।
এমনকি ফিফা কাউন্সিলের অধিকাংশ সদস্যও জানতেন না যে এমন কোনো পুরস্কার চালু হতে যাচ্ছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মিঙ্কি ওয়ার্ডেন বলেন, ‘নোবেল বিজয়ীরা মানবাধিকারের জন্য জেল খাটেন, আর ফিফার এই পুরস্কারের কোনো নমিনি নেই, বিচারক নেই, প্রক্রিয়া নেই; এর কোনো বৈধতাও নেই।’
ভিসা জটিলতা ও হুমকি
রাজনীতির উত্তাপ ছড়িয়েছে মাঠের বাইরেও। ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে ভিসা জটিলতায় ড্র অনুষ্ঠানে প্রতিনিধি পাঠাতে পারছে না ইরান ও হাইতি। ইরান ফুটবল ফেডারেশন জানিয়েছে, ফিফা তাদের উপস্থিতির নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোতে কোনো ঝামেলা দেখলে সেখান থেকে বিশ্বকাপের ভেন্যু সরিয়ে নেওয়া হতে পারে।
সব মিলিয়ে, ৫ ডিসেম্বরের ড্র অনুষ্ঠানটি ফুটবলের চেয়ে বেশি ট্রাম্প ও ইনফান্তিনোর ‘রাজনৈতিক শো’-তে পরিণত হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তথ্যসূত্র: ডয়েচে ভেলে ও দ্য অ্যাথলেটিক