
দীর্ঘদিনের অনলাইন ‘বন্ধন’ অবশেষে রূপ নিলো উষ্ণ এক মুখোমুখি মিলনে। প্রবাসে বাংলা সাহিত্যচর্চার অন্যতম সংগঠন ‘আমাদের গল্পঘর’ প্রথমবারের মতো আয়োজন করল সরাসরি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবের। জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে অনুষ্ঠিত এই আয়োজন যেন হয়ে উঠেছিল প্রবাস জীবনের এক টুকরো বাংলাদেশ যেখানে গানের সুর, কবিতার ছন্দ, নাচের ভঙ্গি আর ভাষার মাধুর্যে জেগে উঠেছিল প্রবাসী হৃদয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জার্মানির নানা শহর থেকে আগত বিপুলসংখ্যক সাহিত্যপ্রেমী প্রবাসী। অনলাইনে দীর্ঘদিন ধরে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকা গল্পঘরের সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীরা প্রথমবার মুখোমুখি মিলিত হয়ে আবেগে আপ্লুত হন। জাতীয় ও সমবেত সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ১ম পর্বে অংশ গ্রহণ করে- সৈয়দা উদ্দিন শানু ও সৈয়দা রহমানের যুগলবন্ধি (পুঁথিপাঠ),সৃজিতা (নাচ),দিব্য (গান),তৈয়বা (নাচ),কণা ইসলাম (গান),সবুজ (গান),নিম্মি কাদের (গান) ও মিনহাজ দীপন (গান)।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ২য় পর্বে অংশ গ্রহণ করেন-রিয়েল আনোয়ার (গান), কাকন রহমান (আবৃত্তি),ইলিয়াস আহমেদ (গান),
তাসলিমা আজম বাঁশি (আবৃত্তি),খান বাবুল (গান),আলম (আবৃত্তি),নিম্মি কাদের (গান),খান লিটন (আবৃত্তি),এনামুল মোহাম্মদ (গান),সৈয়দা উদ্দিন শানু (আবৃত্তি)
,মিনহাজ দীপন (গান) ও দিলশাদ জাহান খান (আবৃত্তি ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার)করেন ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন ফাতেমা রহমান রুমা ও মিনহাজ দীপন যাদের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি পেয়েছিল অনন্য মাত্রা।
এই আয়োজনে সংবর্ধিত হয় প্রবাসে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চায় নিয়োজিত সংগঠনগুলো-রবি সন্ধ্যা পাঠচক্র, বাংলা-জার্মান সাংস্কৃতিক সংগঠন, বাংলাদেশ কালচার ফারাইন, কচিকাঁচার বর্ণমালা অনলাইন স্কুল এবং সুরের মূর্ছনা অনলাইন সঙ্গীতালয়। প্রতিটি সংগঠনই প্রবাসে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার প্রয়াসে অবিচলভাবে কাজ করছে এবং তার স্বীকৃতি স্বরুপ এই সকল সংগঠনগুলোকে সম্মাননা দেওয়া হয়।
বিশেষ পর্বে কবিতা ও সৃষ্টিশীলতার স্বীকৃতি হিসেবে সম্মাননা প্রদান করা হয় দুই প্রবাসী কবি কাকন রহমান ও দেওয়ান নিপু-কে।একই সাথে বীর মুক্তিযোদ্ধা আকন্দ মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেনকে উত্তরীয় পরিয়ে সম্মাননা দেওয়া হয়।
আবৃত্তি কারকদের কবিতা প্রবাসজীবনের নিঃসঙ্গতা ও মাতৃভূমির মমতায় সিক্ত এক আবেগময় দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রশংসিত হয়।
আয়োজক দিলশাদ জাহান, তাসলিমা আযম বাঁশি, সাজেদা বেগম ও মিনহাজ দীপন জানান, “আমাদের গল্পঘর" অনলাইনে বহু বছর ধরে সাহিত্যচর্চার একটি উন্মুক্ত মঞ্চ হিসেবে কাজ করছে। এই প্রথম সরাসরি আয়োজনে যে বিপুল সাড়া পেয়েছি, তা আমাদের ভবিষ্যৎ উদ্যোগের প্রেরণা হয়ে থাকবে।”
উপস্থিত প্রবাসীরা বলেন, এমন আয়োজন কেবল বিনোদন নয় বরং প্রবাসে বসেও ভাষা, সংস্কৃতি ও মানবিক সম্পর্কের বন্ধন অটুট রাখার এক উজ্জ্বল প্রয়াস। ভবিষ্যতে গল্পঘরের পক্ষ থেকে জার্মানির অন্যান্য শহরেও এ ধরনের মিলনমেলার আয়োজনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।