সোমবার ১৮ আগস্ট ২০২৫ ৩ ভাদ্র ১৪৩২
 
শিরোনাম:


শফিকুল আলমের এক বছর: দায়িত্ব, বিতর্ক, আস্থায় রাজনীতির অন্তর্বর্তী পাঠ
রাজু আলীম
প্রকাশ: রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫, ৫:০১ PM

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্যালেন্ডারে ২০২৪ সালের আগস্ট ছিল দেশব্যাপী রূপান্তরের মাস। দীর্ঘ শাসনের পর শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং তিন দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ। একদিকে জনরোষ, প্রত্যাশা ও গণঅভ্যুত্থানের অভিঘাত, অন্যদিকে রাষ্ট্রের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নতুন এক রাজনৈতিক কাঠামো। এমনই এক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং রাষ্ট্রক্ষমতার ভরকেন্দ্রে অবতীর্ণ হন নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনুস; তিনি ৮ আগস্ট ২০২৪-এ প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন, যার দায়িত্ব-পরিসর প্রধানমন্ত্রী-সমতুল্য বলে বিবেচিত। 

এ সময় থেকেই সরকারের মুখপাত্রের দায়িত্ব নেন অভিজ্ঞ সাংবাদিক শফিকুল আলম। যিনি আগে এএফপির ঢাকা ব্যুরোপ্রধান হিসেবে খ্যাতি কুড়িয়েছেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব হিসেবে নিয়োগ পান। এই এক বছরে তিনি যে কেবল সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাই নয়। বরং বারবার জনমত, গণমাধ্যম, রাজনৈতিক দল ও আন্তর্জাতিক অডিয়েন্সের সামনে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন, বিতর্কে গিয়েছেন, প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এবং কখনো কঠোর, কখনো সহনশীল ভাষায় রাষ্ট্রের চলমান অবস্থান ব্যক্ত করতে চেয়েছেন। তাঁর নিয়োগ ও পেশাগত পটভূমি বাংলাদেশি মূলধারার সংবাদমাধ্যমেও সংবাদের বিষয়বস্তু হয়েছে। যা তাঁকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম সারির নীতিনির্ধারণী যোগাযোগের অংশ হিসেবে দৃশ্যমান করেছে। এবং কখনো-কখনো ‘আলোচিত’ চরিত্রেও প্রতিষ্ঠা করেছে। 

দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, আইনশৃঙ্খলার চড়াই-উতরাই, নির্বাচনপূর্ব সংস্কার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার, সবকিছুর মধ্যে যে ‘রাষ্ট্রের কণ্ঠ’ শোনা যায়, তা উচ্চারিত হয় প্রেস সচিবের কণ্ঠে। এখানে তাঁর নিজস্ব ভাষা, ভঙ্গি ও যুক্তি বাংলাদেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক রূপান্তর বোঝার এক দরকারি পরোক্ষ সূত্র হয়ে ওঠে। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব তাঁর রাষ্ট্রীয় পেশাগত অবস্থানের এক বছর পূর্ণ হবার প্রাক্কালে এসেছিলেন চ্যানেল আই এর টু দ্য পয়েন্ট অনুষ্ঠানে। অনু্ষ্ঠানে তিনি কথা বলেছেন, এক বছরের ঘটনাক্রম, দৃষ্টিভঙ্গি ও দেশের রাজনীতির বর্তমান ও আগামীর সম্ভাবনা নিয়ে। 

আলোচনায় শফিকুল আলম তার দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই এই ভূমিকাকে একটি নতুন আঙ্গিকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেন। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রেস সচিবের পদটি সাধারণত একটি রাজনৈতিক পুরস্কারের মতো ছিল, যেখানে পূর্ববর্তী সরকারগুলো তাদের অনুগত সাংবাদিকদের পুরস্কৃত করত। কিন্তু তিনি বলেন, "আমি তো কোনোদিন কারো পা চেটে এখানে আসিনি। আমার ইতিপূর্বে সব লেখা বা তথ্য আপনারা খুঁজে দেখতে পারেন।" এই মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয় যে, তিনি তার কাজকে পেশাদারিত্বের এক ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চেয়েছেন। তার মতে, একজন প্রেস সচিবের কাজ কেবল তথ্য সরবরাহ করা নয়, বরং সরকারের মুখপাত্র হিসেবে সত্য ও বাস্তবতাকে তুলে ধরা। তিনি নিজেই বলেন, "আপনি যদি হোয়াইট হাউসের মডেল দেখেন, সেটা হচ্ছে যে প্রেস সচিব যখন থাকেন প্রেস সেক্রেটারি হি অলসো দা স্পোকসম্যান অফ দা গভমেন্ট।" এই দৃষ্টিভঙ্গিই তাকে প্রচলিত প্রেস সচিবদের থেকে আলাদা করেছে এবং তার প্রতিটি বক্তব্যকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এনেছে।

টু দ্য পয়েন্টে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য ও ম্যান্ডেট নিয়েও তাঁর ধারণা ব্যক্ত করেন শফিকুল আলম। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমরা ক্ষমতার ধারক নই, আমরা দায়িত্বের বাহক। এই সরকারের প্রতিটি সিদ্ধান্তের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশের জনগণকে আবার আস্থা ফিরিয়ে দেওয়া এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঠিক জায়গায় দাঁড় করানো।” এখানে তার বক্তব্য কেবল একটি নৈতিক বক্তব্য নয়; বরং একটি নীতিগত অবস্থান হিসেবেও চিহ্নিত করা যায়। তিনি সরকারকে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের ‘ব্রিজ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এই রূপান্তরকে সফল করতে হলে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি স্তরে আস্থা ফিরিয়ে আনা অপরিহার্য মনে করেন সরকারের এই মুখপাত্র।

তিনি বলেন, নির্বাচন একটি ‘কোর ইনস্টিটিউশন’। গত এক বছরে সে বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বার্তা ছিল ধারাবাহিক: নির্বাচন হবে। তবে পূর্বশর্ত হলো বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে কাঠামোগত ও প্রক্রিয়াগত সংস্কার। সাংবাদিকদের প্রশ্নে প্রেস সচিব বলেছেন “প্রফেসর ইউনুস ইজ আ ম্যান অব হিজ ওয়ার্ড” তিনি পরিষ্কার করেছেন যে ঘোষিত কাট-অফ ডেটের বাইরে সরকার যাবে না; একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের উদ্বেগ প্রশমনে রোডম্যাপকে ‘টাইম-বাউন্ড’ বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। 

]গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে শফিকুল আলম অত্যন্ত খোলামেলাভাবে কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন, জনগণ তাদের সহনশীলতা এবং সচেতনতার মাধ্যমে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়াতে পেরেছে। তার মতে, "একটা বিপ্লব-উত্তর একটা দেশে যেই ধরনের ক্যাওটিক সিচুয়েশন হওয়ার কথা তার চেয়ে কিছুই হয়নি। এবং আমরা অনেক ভালো ছিলাম। প্রফেসর ইউনুসের নৈতিক নেতৃত্বের কারণে দেশে একটা শান্তি ও স্থিতিশীলতা ছিল। " তিনি উদাহরণ হিসেবে শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যাপক সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটেনি। তিনি বলেন, "প্রফেসর ইউনূসের যে মোরাল লিডারশিপ এটার কারণে দেশে একটা স্থিতি ছিল, কাম এন্ড কোয়েটনেস ছিল।" তার মতে, এই সরকারের নৈতিক নেতৃত্বই ছিল দেশের স্থিতিশীলতার মূল ভিত্তি। তিনি আরও বলেন, "এত বড় সাড়ে ১৬ বছর একটা অপশাসনের পরে তারা যে যেই রিজিলিয়েন্স দেখিয়েছে এবং তারা যেই নিজেদের যে কে রেস্টেন করে রেখেছে তা অনেক... তাদের কালেক্টিভ লিডারশিপ এবং পলিটিক্যাল পার্টিগুলোরও ভালো রোল ছিল। আমাদের গর্ভমেন্টেরও একটা মোরাল লিডারশিপ ছিল এবং এই কারণে আমরা এই ধরনের এই ট্র্যাপে যাই নাই।"

এই স্থিতিশীলতার পেছনে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে শফিকুল আলম পরিসংখ্যান দিয়ে তার বক্তব্যকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, "আপনি যদি মার্ডার যদি দেখেন, পুরো এক বছরে গত বছরের মার্ডারের থেকে কিন্তু খুব বেশি না।" তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, খুনের হার বেশি দেখানোর কারণ হলো, আগের সরকারের শেষ দিকের অনেক মামলার নথিভুক্তকরণ এই সরকারের সময়ে হয়েছে। তিনি বলেন, "এটার কারণ হচ্ছে যে আপনি আমাদের একটা বছরে যে হাসিনার যে শেষের দিকে যে মার্ডারগুলো হয়েছে, সেই মার্ডারগুলোর কেসগুলো রেজিস্টারড হয়েছে আমাদের সময়ে। ফলে দেখা যাচ্ছে যে অনেক বেশি ৮৩১টা মার্ডার আমাদের সময়ে এক্সট্রা ইয়ে হয়েছে।" তার মতে, এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে যে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল ছিল।

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ, এবং এই বিষয়ে শফিকুল আলম তার সরকারের সাফল্যের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, "আমরা যা অর্জন করেছি সেটা মোর দেন এক্সপেক্টেড... ইকোনমিক রিকভারি এসছে।" তার মতে, গত সরকারের শেষ দিকে দেশের অর্থনীতি যে দুরবস্থার মধ্যে ছিল, সেখান থেকে উত্তরণ ঘটেছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, এই সরকার খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে, রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে এবং ডলারের বিপরীতে টাকার মান স্থিতিশীল করতে সক্ষম হয়েছে। এই অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা দেশের মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগিয়েছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি আরও বলেন, "আমাদের ব্যাংকগুলোকে খালি করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলো এখনো দাঁড়াতেই পারছে না। আমরা এত চেষ্টা করছি।" তিনি বলেন পূর্ববর্তী সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করা এই সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে শফিকুল আলমের বক্তব্যগুলো ছিল বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি অকপটে বলেন, "বাংলাদেশের ইতিহাসে এই গত এক বছরে গণমাধ্যম সবচেয়ে বেশি স্বাধীন।" তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, তার সরকার কোনো গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করেনি বা তাদের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করেনি। তার মতে, "আমরা কাউকে সেলফ সেন্সরশিপ করতে বলছি না। কারো মুখ বন্ধ করতে বলছি না... আমরা একটা ফ্যান্টাস্টিক একটা পরিবেশ এলাও করেছি। পিপল ক্যান সে এনিথিং। এনিথিং।" তবে, তিনি একই সাথে গণমাধ্যমের আত্মনিয়ন্ত্রণহীনতার সমালোচনাও করেন। তিনি বলেন, কিছু গণমাধ্যম ভুয়া খবর এবং মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে, যা একটি সুস্থ সমাজের জন্য ক্ষতিকর। তিনি উদাহরণ দেন, "একটা নিউজপেপারে লিখেছে যে এই জুলাই আগস্টের সময় জঙ্গিরা মানুষদের মেরেছে এটা লিডিং নিউজপেপার... একটা টিভি স্টেশন সে দেখাচ্ছে যে একটা শেখ ফ্যামিলির একজনকে ইন্টারভিউ নিয়ে বলছে যে সবাই যেন এই গভমেন্টের বিরুদ্ধে নেমে যায়। তো ওই শেখ ফ্যামিলি যে ছেলেটার কথা বলছে এটা লিডিং টিভি স্টেশন..." এই ধরনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি গণমাধ্যমকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান এবং বলেন, "সেলফ রেগুলেশনটা খুব জরুরি।" তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, গণমাধ্যম তাদের নিজস্ব ফ্যাক্ট-চেকিং ইউনিট তৈরি করবে এবং সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করবে।

আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সমালোচনায় তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে "এত ব্রুটাল ডিক্টেটর বাংলাদেশে কয়টা এসছে?" বলে প্রশ্ন করেন। তিনি তার শাসনের বিভিন্ন দিক নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন, বলেন ১৫৩ জন সংসদ সদস্যকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা এবং ব্যাংকগুলোকে খালি করে দেওয়ার কথা। ১৫ই আগস্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যক্তি হিসেবে শোক পালনের অধিকার সবার আছে কিন্তু নিষিদ্ধ সংগঠনের ব্যনারে করলে তার বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভারতীয় গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে মিথ্যা খবর প্রচারের অভিযোগও আনেন। তিনি বলেন, "ইন্ডিয়ান নিউজপেপারগুলো ম্যাসিভ মিস ইনফরমেশন ক্যাম্পেইন ছিল।" তিনি ভারতীয় গণমাধ্যমের সমালোচনা করে বলেন যে, তারা টাকা নিয়ে খবর তৈরি করে এবং তাদের সাংবাদিকতার মান খুবই নিচু। তিনি বলেন, "তারা ‍নিজেদের স্মার্ট মনে করছে কিন্তু সত্যিকার অর্থে ওয়ার্ল্ডের সবচাইতে পচা জার্নালিজমটা ইন্ডিয়ায় হয়।" তার মতে, আওয়ামী লীগ মিথ্যা খবর ছড়ানোর জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত মিথ্যা টিকে থাকেনি।

ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য শফিকুল আলমের প্রত্যাশা হলো, একটি প্রাণবন্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বলেন, "আমরা চাবো যে একটা ভাইব্রেন্ট বাংলাদেশ যেখানে ডেমোক্রেসিটা থাকবে এবং দেশে শেখ হাসিনার মত মনস্টার যেন আর আগামী ১০০-২০০ বছরে যেন না তৈরি হয়। এমন একটা পলিটিক্যাল সিস্টেম আমরা যেন ক্রিয়েট করতে পারি।" তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে এবং ফেব্রুয়ারি মাসে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার মতে, "আমরা যা অর্জন করেছি সেটা মোর দ্যান এক্সপেক্টেড।" তিনি এই সরকারের সময়কালে গৃহীত প্রতিটি সংস্কারকে একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক সমাজের ভিত্তি হিসেবে দেখেন।
শফিকুল আলমের বক্তব্যগুলোর বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ ছিল, তিনি একজন নিরপেক্ষ প্রেস সচিবের পরিবর্তে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির মতো কথা বলেছেন। এর উত্তরে তিনি বলেন যে, হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিবও সরকারের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন এবং তিনি তার দায়িত্বের গণ্ডির মধ্যেই রয়েছেন। তার মতে, "আমি এই পর্যন্ত এমন কোনো কাজ করিনি যেটার কারণে আমাকে মানুষ বলবে যে আমি নিরপেক্ষতা হারিয়েছি।" তিনি তার বিরুদ্ধে ওঠা 'প্রো-বিএনপি' বা 'প্রো-এনসিপি' অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, "আমরা মনে করি আমরা ট্রুলি নিরপেক্ষ আমরা এমন কোন কাজ করি নাই যেটা বলতে পারবে যে আমরা এই গভমেন্টকে এই পার্টিকে সাপোর্ট করছি ওভারঅনাদার পার্টি।" তিনি তার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে বলেন, "আমি জার্নালিজমে ফিরে যাব।"

শফিকুল আলমের চোখে, তার দায়িত্ব পালন ছিল এক নীরব বিপ্লবের অংশ। তিনি একটি ভাঙাচোরা ব্যবস্থার মধ্যে থেকে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, "আমার মনে হয় যে আমরা যা অর্জন করেছি সেটা মোর দ্যান এক্সপেক্টেড।" তিনি বিশ্বাস করেন, এই এক বছর দেশের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যেখানে মানুষ নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়েছে এবং গণতন্ত্রের সঠিক পথ খুঁজে পেয়েছে। তার মতে, এই সরকারের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো জনগণের মধ্যে সেই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা যে, একটি ভালো দেশ গড়া সম্ভব এবং তা একমাত্র সম্ভব একটি গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক সরকারের মাধ্যমে। তার এই এক বছরের যাত্রা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা শুধুমাত্র তথ্যের আদান-প্রদান নয়, বরং নীতি ও আদর্শের সংঘাতের এক দলিল।

লেখক: কবি, সাংবাদিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।







আরও খবর


 সর্বশেষ সংবাদ

চট্টগ্রাম সিটি গেটে পিকআপে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কা, নিহত ৪
বাংলাদেশসহ ২০২৬ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করেছে যেসব দেশ
রুক্মিণীর রাজকীয় লুক
গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতায় নিহত বেড়ে ৬২ হাজার ছুঁই ছুঁই
সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম অপু গ্রেফতার
আরো খবর ⇒


 সর্বাধিক পঠিত

ত্রিশালে বেগম খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকীতে কুরআনখানী ও দোয়া মাহফিল
আজমল হোসেন কুনু, কে প্যারিসে সংবর্ধনা
কন্যা মানহাকে নিয়েই ব্যস্ত মেহজাবীন মেহা
শেখ মুজিব জাতির পিতা নন, স্বাধীনতায় তার ত্যাগ স্বীকার করি: নাহিদ ইসলাম
শেরপুর প্রেসক্লাবের আয়োজনে চিত্রাংকন ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
প্রকাশক: এম এন এইচ বুলু
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মাহফুজুর রহমান রিমন  |   উপদেষ্টা সম্পাদক : রাজু আলীম  
বিএনএস সংবাদ প্রতিদিন লি. এর পক্ষে প্রকাশক এম এন এইচ বুলু কর্তৃক ৪০ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বুলু ওশেন টাওয়ার, (১০তলা), বনানী, ঢাকা ১২১৩ থেকে প্রকাশিত ও শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ফোন:০২৯৮২০০১৯-২০ ফ্যাক্স: ০২-৯৮২০০১৬ ই-মেইল: spnewsdesh@gmail.com