
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী চূড়ান্ত করছে বিএনপি। ইতোমধ্যে দুই শতাধিক প্রার্থীকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। ৫০টির মতো আসনে প্রার্থী যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সমমনা দল ও জোটকে আসন ছাড় দেওয়ার পর বাকি আসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার পাশাপাশি যেসব এলাকায় একাধিক প্রভাবশালী প্রার্থী রয়েছেন, সেখানে সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলছেন তারেক রহমান। তিনি মনোনয়ন পাওয়া নেতার পক্ষে কাজ করার জন্য সবাইকে তাগিদ দিচ্ছেন। দলের নির্দেশনা অমান্য করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হচ্ছে।
এর মধ্যে বরিশাল-৫ আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন তারেক রহমান। সেখানে সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরীন, নির্বাহী সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহসহ আরও কয়েকজন প্রার্থী হতে চান।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ বলেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত সবাইকে মেনে নিতে হবে। নির্বাচনে দলের চূড়ান্ত প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করতে হবে।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনের জন্য ইশতেহার প্রস্তুতের কাজও শুরু করা হয়েছে। খাত অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের ইশতেহার তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব আগামী নির্বাচনকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। এর অংশ হিসেবে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীর খোঁজে এরই মধ্যে একাধিক মাঠ জরিপ করা হয়েছে। সেই জরিপের ফল এবং দলের নীতিনির্ধারণী নেতাদের মতামত ও তৃণমূলে জনপ্রিয়তার নিরিখে প্রার্থী তালিকা অনেকটাই চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এই নেতারা জানান, ওই তালিকা ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্ভাব্য প্রার্থীকে সবুজ সংকেত দিচ্ছেন। তাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বলছেন। যেসব এলাকায় কোন্দল আছে, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে বিভাজন আছে, সেসব এলাকার প্রার্থীদের স্কাইপে সংযুক্ত করে দলের নির্দেশনা মেনে চলার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি। দল থেকে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক না কেন, তাঁর পক্ষে সবাইকে কাজ করতে বলছেন। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করলে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছেন। প্রকাশ্য বক্তৃতায়ও তিনি দলের ঐক্য ধরে রাখার ওপর জোর দিচ্ছেন গত কিছু দিন ধরে।
দলীয় সূত্র জানায়, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) নির্বাচন আর জুলাই সনদ নিয়ে জামায়াতে ইসলামী রাজপথে আন্দোলন শুরু করেছে। তারা নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতিও শুরু করেছে অনেক আগ থেকে। সারাদেশে জামায়াত তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত এবং ঘোষণাও করেছে। তাদের নেতাকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে গণসংযোগ করছেন। এ অবস্থায় বিএনপিও মৌখিকভাবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সবুজ সংকেত দিয়ে মাঠে নামাচ্ছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। এর মধ্যে মাঠ জরিপ, তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত সংগ্রহসহ কয়েক ধরনের উদ্যোগ চলছে। এসব প্রক্রিয়ায় যে প্রার্থী এগিয়ে থাকছেন, তাঁকে দল মনোনয়ন দেবে। তবে এখনই সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে যায়নি।
জ্যেষ্ঠ এবং মাঠ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা মহানগরের ১৫টি আসনের মধ্যে কয়েকটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-৪ আসনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবীন, ঢাকা-৮ আসনে মির্জা আব্বাস, ঢাকা-১৩ আসনে সমমনা দল এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, ঢাকা-১৬ আসনে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, ঢাকা-১৭ আসনে সমমনা দল বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থকে চূড়ান্ত বার্তা দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ববি হাজ্জাজ রোববার জানান, বিএনপির সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মোহাম্মদপুর আসনের (ঢাকা-১৩) বিষয়ে তাঁকে নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি এলাকায় কাজ শুরু করেছি।’
প্রার্থিতার বিষয়ে বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান বলেন, মনোনয়ন বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলবেন না। তবে তিনি এলাকায় কাজ করছেন।
গুলশান এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীরা বলেছেন, আন্দালিব রহমান পার্থের মনোনয়নের বিষয়ে দল থেকে তাদের বলা হয়েছে। তারা পার্থর পক্ষে কাজ করছেন। এর মধ্যে আন্দালিব রহমান পার্থর সঙ্গে সাংগঠনিক আলোচনা, মতবিনিময় সভাও করেছে স্থানীয় বিএনপি। ঢাকার বাকি আসনের প্রার্থীরা দলের সবুজ সংকেত পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।
উত্তরাঞ্চলের আসনগুলোর মধ্যে পঞ্চগড়-১ আসনে ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিনের ছেলে ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, পঞ্চগড়-২ আসনে ফরহাদ হোসেন আজাদ, কুড়িগ্রাম-৩ আসনে তাসভীরুল ইসলাম, পাবনা-২ আসনে একেএম সেলিম রেজা হাবিব, পাবনা-৩ আসনে হাসান জাফির তুহিন, পাবনা-৪ আসনে হাবিবুর রহমান হাবিবকে এলাকায় নির্বাচনী কাজ শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই কয়েকটি আসনের বিষয়ে নিশ্চিত হতে পেরেছে। এর মধ্যে অন্তত চারজন বলেছেন এবং এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এর বাইরেও কয়েকটি আসেন প্রার্থীদের সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সংসদীয় আসনগুলোর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে শামসুজ্জামান দুদু, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে মাহমুদ হাসান খান, ঝিনাইদহ-৪ আসনে সাইফুল ইসলাম ফিরোজকে প্রার্থিতার কথা জানানো হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত একজন দলের সবুজ সংকেত পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।
দক্ষিণাঞ্চলের সংসদীয় আসনের মধ্যে যশোর-৩ আসনে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, খুলনা-৩ আসনে রকিবুল ইসলাম বকুল, খুলনা-৪ আসনে আজিজুল বারী হেলাল, পটুয়াখালী-৪ এবিএম মোশারফ হোসেন, ভোলা-২ আসনে হাফিজ ইব্রাহীম, ভোলা-৩ আসনে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, ভোলা-৪ আসনে নুরুল ইসলাম নয়ন, বরিশাল-১ আসনে জহির উদ্দিন স্বপন, বরিশাল-৩ আসনে জয়নুল আবেদীন ও বরিশাল-৪ আসনে রাজীব আহসান দলের মনোনয়ন পাচ্ছেন। এর মধ্যে অন্তত তিনজনের সঙ্গে গণমাধ্যম কথা বলেছে। তারা দলের প্রার্থিতা এবং এলাকায় কাজ করার নির্দেশনা পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।
এ ছাড়া ফরিদপুর-৪ আসনে শহীদুল ইসলাম বাবুল, জামালপুর-১ আসনে রশিদুজ্জামান মিল্লাত, টাঙ্গাইল-৫ আসনে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, জামালপুর-৩ আসনে মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল এবং ময়মনসিংহ-৪ আসনে ওহাব আকন্দের নাম জানা গেছে। তাদের মধ্যে অন্তত একজনের সঙ্গে গনমাধ্যম কথা বলেছে এবং তিনি এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। সিলেট বিভাগে সুনামগঞ্জ-১ আসনে মাহবুবুর রহমানকে দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনী কাজ শুরু করার জন্য বলা হয়েছে।
এ ছাড়া দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আসনের বেশির ভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী কমিটির বেশির ভাগ সদস্য, দলের মহাসচিবসহ আরও অনেক নেতা রয়েছেন। আবার অনেক এলাকায় তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া হবে এবার। এর মধ্যে ছাত্রদলের প্রতিশ্রুতিশীল একাধিক নেতা থাকতে পারেন। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, ফজলুর রহমান খোকন, কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েলের মধ্য থেকে একাধিকজনের ভাগ্য এবার খুলতে পারে বলে বিএনপির দায়িত্বশীল একজন নেতা জানিয়েছেন।