
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ১নং পোড়াগাঁও ইউনিয়নের আমবাগান বাজার সংলগ্ন চেল্লাখালী নদী পারাপারে কয়েকটি গ্রামের মানুষের বর্ষাকালে একমাত্র বাহন হচ্ছে রশিটানা নৌকা। আমবাগান বাজার থেকে একটু পশ্চিম দিকে চেল্লাখালী নদীর বাতকুচি ঘাট। কয়েক বছর আগে নদী পারাপারের জন্য এখানে একটি মিনি স্টীল ব্রিজ নির্মান করা হয়েছিল। গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় ওই স্টীলের ব্রীজটি ভেসে যাওয়ায় আমবাগান বাজার থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে এই ইউনিয়নের সাথে সংযুক্ত বাকি গ্রামগুলো। এতে চরম দুর্ভোগে পরেছেন নদী তীরবর্তী কয়েক গ্রামের হাজার হাজার মানুষ।
নালিতাবাড়ী উপজেলার ১নং পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বুকচিরে বয়ে গেছে উজান থেকে নেমে আসা খরস্রোতা পাহাড়ি চেল্লাখালী নদী। বর্তমানে এই নদী পারাপারে রশিটানা নৌকাই যেন তাদের একমাত্র ভরসা। নদী পার হলেই শুরু হয় পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বাতকুচি, টিলাপাড়া, লক্ষিকুড়া, মেষকুড়া, তোয়ালকুচি, ছাইচাকুড়া, ধোপাকুড়া গ্রাম ও ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স।
এ সকল গ্রামের মানুষকে বাতকুচি ঘাটে রশিটানা নৌকা দিয়ে প্রতিদিন যেতে হয় স্থানীয় হাটবাজার কিংবা উপজেলা সদরে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরও এভাবেই পারাপার হতে হয়। আর পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস কিংবা উপজেলা প্রশাসনের কোনো গাড়ি বিশেষ বিশেষ কাজে ওই এলাকায় যাওয়ার প্রয়োজন হলে বারোমারী বাজার কিংবা নন্নী এলাকা দিয়ে অতিরিক্ত ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয়। পাহাড়ি ঢলে মিনি স্টীল ব্রিজ ভেসে যাওয়ার এক বছর পার হয়ে গেলেও নতুন সেতু নির্মাণে নেই কোন উদ্যোগ। তাই দুর্ভোগ কমছে না ওই এলাকার বসিন্দাদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রশিটানা নৌকায় জনপ্রতি ৫ টাকা দিয়ে নদী পারাপার হচ্ছেন স্থানীয়রা। নৌকায় ওঠার জন্য কোন অবকাঠামো না থাকায় বৃদ্ধ, স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও মহিলারা নৌকায় ওঠার সময় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। ফলে মানুষের যাতায়াত বিড়ম্বনা বেড়ে গেছে অনেকটা।
স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আছমত আলী বলেন, ‘ব্রীজটি ভেসে গেছে এক বছর হলেও কেউ এখনো খোঁজ নিতে আসেনি। ছেলে মেয়েদের স্কুলে যেতে খুব কষ্ট হয়। কেউ অসুস্থ হলে দ্রুত ডাক্তারের কাছেও নিয়ে যেতে পারিনা। দ্রুত এই ব্রীজটি নির্মাণ করা না হলে আমাদের দুর্ভোগ কমবেনা’।
অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক হাতেম আলী বলেন, ‘বাতকুচি ঘাট দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করি। আগে একটা স্টীলের ব্রিজ ছিলো। গত বন্যায় এটাও ভেসে গেছে। এখন চলাচল করতে কষ্ট হয়।’
১নং পোড়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাওলানা মো. জামাল উদ্দিন জানান, এই ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামই নদীর ওপারে। আমবাগান বাজার সংলগ্ন বাতকুচি ঘাটে নতুন করে সেতু নির্মাণ করা হলে এলাকার বাসিন্দাদের ব্যবসা বাণিজ্যসহ স্কুল কলেজের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের আর অসুবিধা থাকবে না। চব্বিশের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতির তালিকায় এই সেতুর নাম উল্লেখ করে আমরা উপজেলায় জমা দিয়েছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া পিয়াল জানান, যাতায়াতের জন্য সেতুটির খুবই প্রয়োজন। আমরা সেতুটি নির্মাণের জন্য গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছি। প্রকল্প অনুমোদন পেলে তা বাস্তবায়ন করে সেতুটি নির্মাণ করা হবে।