বাংলাদেশের দক্ষতা উন্নয়ন খাতে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে "ট্রেইনার্স মিট ২০২৫"। শনিবার সন্ধ্যায় Trainers’ Association of Bangladesh-এর আয়োজনে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় এই ব্যতিক্রমী মিলনমেলা, যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৫০ জনেরও বেশি প্রশিক্ষক, অভিজ্ঞ পেশাজীবী এবং প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন খাতের কিংবদন্তি ব্যক্তিত্বরা এক ছাদের নিচে মিলিত হন।
"যখন ট্রেইনাররা একত্রিত হয়, পরিবর্তন তখন শুরু হয়"—এই মূল প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি দেশের প্রশিক্ষক সমাজের মাঝে ঐক্য, সহযোগিতা ও জাতি গঠনের এক নতুন প্রত্যয় নিয়ে এসেছে। এই আয়োজনের মাধ্যমে সূচনা হয়েছে একটি বৃহৎ সামাজিক ও পেশাগত আন্দোলনের, যার উদ্দেশ্য প্রশিক্ষকদের জাতীয় অগ্রগতির অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কেএম হাসান রিপন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, “আমরা সবসময় বিশ্বাস করি—সহযোগিতা প্রতিযোগিতার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধুমাত্র একটি সমাবেশ নয়, এটি একটি শক্তিশালী ঐক্যের বার্তা। আমরা একসাথে বিশ্বকে দেখাতে চাই যে, বাংলাদেশ জ্ঞান, দক্ষতা ও প্রত্যয়ে এগিয়ে চলেছে।”
সন্ধ্যার এই অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী সহ-সভাপতি ইউসুফ এফতি। তিনি অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক ও নতুন প্রজন্মের আগ্রহী ট্রেইনারদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত ও উদ্দেশ্যমূলক করে তোলেন।
অনুষ্ঠানে অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালনা পর্ষদের অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে ছিলেন সহ-সভাপতি মোরাদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক লায়লা নাজনিন, কোষাধ্যক্ষ মেজর (অব.) ডেল এইচ. খান, এবং উদ্ভাবন ও কৌশল পরিচালক জিয়াউদ্দিন মাহমুদ। তাদের সক্রিয় উপস্থিতি প্রশিক্ষকদের জন্য একটি শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার প্রত্যয়ের প্রতিফলন।
অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল দেশের প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন খাতের শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের অংশগ্রহণ। উপস্থিত ছিলেন ড. মোশাররফ হোসেন, কাজী এম. আহমেদ, এজাজুর রহমান, নিলুফার ইয়াসমিন, গুলাম সামদানি ডন, ইকবাল বাহার, এবং জি এম কামরুল হাসান সহ আরো অনেকে। তারা সবাই বর্তমান সময়ে প্রশিক্ষকদের ভূমিকা, দায়িত্ব এবং সম্ভাবনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, একজন প্রশিক্ষকের দায়িত্ব শুধু ক্লাসরুমে সীমাবদ্ধ নয়। একজন ট্রেইনার সমাজ বদলে দেওয়ার শক্তি রাখেন। প্রশিক্ষণ পেশা নয়, এটি একটি আন্দোলন—যা মানুষকে পরিবর্তনের পথ দেখায়, সম্ভাবনার দরজা খুলে দেয় এবং একটি জাতিকে সামগ্রিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যায়।
অনুষ্ঠানে সবাই একমত হন যে, “একজন ট্রেইনার বেড়ে উঠলে, গোটা জাতি উন্নত হয়।”
ট্রেইনার্স মিট ২০২৫ শেষ হয় নতুন আশাবাদ ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। বাংলাদেশের প্রশিক্ষকরা আর বিচ্ছিন্ন নন। তারা এখন একটি সম্মিলিত শক্তি—দক্ষতা উন্নয়ন, সামাজিক পরিবর্তন এবং জাতি গঠনে নিবেদিত এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের অংশীদার।
এই ঐতিহাসিক মিলনমেলা প্রশিক্ষণ পেশার জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা করল যেখানে মূল ভিত্তি হলো: সহযোগিতা, উদ্ভাবন এবং অভিন্ন লক্ষ্য।