মঙ্গলবার ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৫ ভাদ্র ১৪৩২
 
শিরোনাম:


রকমারি
প্রত্যাহারের মুখে প্রতিশ্রুত সৌদি বিনিয়োগ
প্রকাশ: রোববার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৪:০৬ পিএম   (ভিজিট : ৬২)
একদিকে সরকার যখন বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই বিদেশী বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে তৎপর একটি মহল। এমন তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায় সম্প্রতি বিনিয়োগ বোর্ডকে লেখা সৌদি আরব ভিত্তিক একটি বিনিয়োগ কোম্পানির চিঠির সূত্র ধরে। ২১ আগস্ট ২০২৫ তারিখে বিনিয়োগ বোর্ডের কাছে নিজেদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে এক দীর্ঘ চিঠি লিখেন সৌদি আরব ভিত্তিক বিনিয়োগ কোম্পানি ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট এফজেডসিও। ২০১৮ সাল থেকে বর্তমান সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি অন্তত তিনটি ক্ষেত্রে আমলা তান্ত্রিক জটিলতা ও সরকারের পক্ষ থেকে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে এই চিঠির মাধ্যমে। 

উক্ত চিঠির প্রথমেই ২০২১ সালে এস জি ই এম সি ও (SGEMCO) নামের একটি যৌথ বিনিয়োগের কথা উল্লেখ করা হয়, যেখানে বাংলাদেশ জেনারেল ইলেকট্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির সাথে সৌদি এই প্রতিষ্ঠান প্রকৌশল সামগ্রী, এলিভেটর, সার্কিট ব্রেকার ও স্টিল স্ট্রাকচার উৎপাদনের চুক্তি করে। ‌ ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রথম ধাপে তারা ৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে এবং কারখানা স্থাপন করে। ‌ পরীক্ষামূলক উৎপাদন শেষে প্রতিষ্ঠানটি যখন বছরে ১০ হাজার ইউনিট প্রকৌশল ও বৈদ্যুতিক সামগ্রী উৎপাদনের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করে, ঠিক তখনই হঠাৎ করে সরকারি সিদ্ধান্তে নীতিগত পরিবর্তন ঘটিয়ে উৎপাদন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০২১ সাল থেকেই সেই কারখানা অচল করে রাখা হয়েছে।

এর আগে ২০১৮ সাল থেকেই এই সৌদি কোম্পানি বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের সাথে যৌথ বিনিয়োগের জন্য প্রতিষ্ঠা করে এস বি আই সি সি (SBICCL) এল নামক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের সিমেন্টসহ বিভিন্ন শিল্পে অত্যাবশ্যকীয় কাঁচামাল ক্রিংকার আমদানির বদলে নিজ দেশেই উৎপাদনের উদ্যোগ নেয় এই প্রতিষ্ঠান। দৈনিক ১৫ হাজার টন (টিপিডি) ক্লিংকার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মাঠে নামা প্রতিষ্ঠানটি মোট ৬০৩ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের চুক্তি করে সাড়া ফেলেছিল। তৎকালীন সৌদি রাষ্ট্রদূত এবং সফরররত সৌদি সরকারের মন্ত্রী ও এই চুক্তি স্বাক্ষরের পর উভয় দেশের মধ্যে বহুমাত্রিক বাণিজ্যিক বন্ধন সুদৃঢ় করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন প্রতিশ্রুত ভূমি হস্তান্তরের বদলে অনাবশ্যক জটিলতা সৃষ্টি করে। ফলে ঢাকায় অফিস স্থাপন, সার্ভে, অনুসন্ধান, সম্ভাব্যতা যাচাইসহ নানা খাতে সাড়ে ৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করার পর প্রকল্পটি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে কেবল আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে। ‌

দেশের চাহিদা মেটাতে আমদানি করা এল এন জি বর্তমানে মহেশখালীতে খালাস করা হয় এবং জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। এটি একমাত্র এলএনজি'র প্রবেশদ্বার বিধায় জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অপর একটি এলএনজি প্রবেশদ্বার অপরিহার্য। এক্ষেত্রে এগিয়ে আসে ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট । ৮৪ মিলিয়ন ডলার ব্যায়ে তারা সৌদি আরব কিংবা অন্য দেশ থেকে আমদানিকৃত এলএনজি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ইতোমধ্যে স্থাপিত গ্যাস পাইপ লাইন সম্প্রসারণ করে বাংলাদেশে সরবরাহের প্রস্তাব দেয়। এই উদ্দেশ্য নিয়ে সরকারের সাথে সৌদি রাষ্ট্রদূতের উপস্থিতিতে চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়, যা দেশ-বিদেশের বহু প্রচার মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে জানানো হয়। 

উক্ত চুক্তি মোতাবেক বেনাপোল ও যশোর হয়ে পাইপ লাইনে এই এল এন জি দেশের পশ্চিমাঞ্চলে সরবরাহের কথা ছিল। এতে মহেশখালী ভিত্তিক একমাত্র এলএনজি গেটওয়ের বিকল্প তৈরি হতো, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হতো এবং পশ্চিমাঞ্চলের শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার পরিবেশ সৃষ্টি হতো। এ সংক্রান্ত প্রাথমিক প্রস্তুতি নিতেও কোম্পানির ব্যয় হয় ৩ মিলিয়ন ডলার। এক্ষেত্রে সরকারে তেমন কোন আর্থিক খরচ প্রয়োজন হতো না বিধায় প্রকল্পটি ছিল অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও সরকারি ব্যয় সাশ্রয়ী। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, বিগত সরকারের অবহেলা ও আমলা তান্ত্রিক জটিলতায় এই প্রকল্পও ঝুলে যায়।

পরপর তিনটি প্রকল্পে সৃষ্ট এমন বিরূপ পরিস্থিতি ও অনাকাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতা বিশ্বের বুকে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে নেতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেয় এবং সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ককে শীতল করে তুলে।‌

দেশ ও কোম্পানির ভাবমূর্তি উদ্ধার এবং বাংলাদেশে ইতোমধ্যে তিনটি বাধাগ্রস্থ বিনিয়োগে যে ক্ষতি হয়েছে, তা কিছুটা পুষিয়ে তুলতে সৌদি আরবের এই ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট এবার নতুন প্রস্তাব দিয়েছে। ওই প্রস্তাবে ঢাকাস্হ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জেট ফুয়েল পাইপ লাইন ও জ্বালানি মজুদাগার  নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এই প্রস্তাবে নারায়ণগঞ্জের কাঞ্চন ব্রিজ সংলগ্ন শীতলগঞ্জ থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ভূগর্ভস্থ পাইপ লাইন নির্মাণ এবং নবনির্মিত তৃতীয় টার্মিনালসহ বিমানবন্দরে সুবিধাজনক স্থানে জেট ফুয়েল জ্বালানি মজুদাগার নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই প্রস্তাবটিও সৌদি আরবের বিনিয়োগকারীরা শতভাগ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করার প্রস্তাব দিয়েছে। 

নতুন এই প্রস্তাবটি দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা, বিমানবন্দরে আগত দেখি-বিদেশি এয়ারলাইন্সের জ্বালানি সরবরাহ সুরক্ষা করা ও জ্বালানি পরিবহন জড়িত ঝুঁকি ও আর্থিক ব্যয় সংকুলান নিশ্চিত করবে। অন্যথায় বাংলাদেশ কেবল আইনগত জটিলতায়ই পড়বে না, সমগ্র বিশ্বে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের দেশ নামে ধীকৃত হবে। জাতি ও উভয় দেশের সুসম্পর্কের বৃহত্তর স্বার্থে বর্তমান বিনিয়োগ প্রস্তাবটির বিষয়ে সরকারের বিশেষত্ব বিনিয়োগ বোর্ডের সহায়তা প্রত্যাশা করে সৌদি আরব ভিত্তিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন ইনভেস্টমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল।‌







আরও খবর


প্রকাশক: এম এন এইচ বুলু
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মাহফুজুর রহমান রিমন  |   উপদেষ্টা সম্পাদক : রাজু আলীম  
বিএনএস সংবাদ প্রতিদিন লি. এর পক্ষে প্রকাশক এম এন এইচ বুলু কর্তৃক ৪০ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বুলু ওশেন টাওয়ার, (১০তলা), বনানী, ঢাকা ১২১৩ থেকে প্রকাশিত ও শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ফোন:০২৯৮২০০১৯-২০ ফ্যাক্স: ০২-৯৮২০০১৬ ই-মেইল: spnewsdesh@gmail.com