মঙ্গলবার ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৮ ভাদ্র ১৪৩২
 
শিরোনাম:


রকমারি
এলজিইডি’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাবেদ করিমের সম্পদের পাহাড়!
প্রকাশ: সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৮:১৪ পিএম   (ভিজিট : ২০)
দুর্নীতির সুতিকাগার খ্যাত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা, ডিজাইন ও গবেষণা ইউনিট) জাবেদ করিম এর বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অঢেল বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বরাবর উত্তরা নিবাসী  জনৈক মো. আরমান হোসেন জাবেদ করিম এর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।অভিযোগনামায়     মো. আরমান হোসেন জাবেদ করিমের সম্পদের দীর্ঘ ফিরিস্তি তুলে ধরেন।

অভিযোগে বিবরণ অনুযায়ী,  গুলশান, বনানী, উত্তরা ও মিরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে জাবেদ করিমের রয়েছে অসংখ্য বাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লট। গুলশান-১ নম্বরের ১৩০ নম্বর সড়কের ১১/বি হোল্ডিংয়ে আশক্য আমারিওয়ে ডেভেলপার্সের এলটিডির পাশে ৩০ কাঠা জমির ওপরে রয়েছে তার একটি বিশাল গ্যারেজ। গ্যারেজটির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় দেড়শ কোটি টাকা।

বনানীর ২৫/এ সড়কের ৫৫ নম্বর আলিশান বাড়িটির মালিক তিনি। এই বাড়ি নির্মাণে তার ব্যয় হয়েছে প্রায় শতকোটি টাকা। প্রগতি সরণির শহিদ আব্দুল আজিজ সড়কের ৪৮ নম্বর প্লটটির মালিকও তিনি। প্লটটির আয়তন ৩০ কাঠা। প্রায় শতকোটি টাকা দিয়ে তিনি প্লটি কেনেন। সেখানে ‘পেইন টেকিং অটোমোবাইলস’ নামের একটি গ্যারেজ ভাড়া দিয়েছেন তিনি।

পূর্বাচলের ৩ নম্বর সড়কের ৬৫ নম্বর প্লটটি তিনি ১০ কোটি ৬৫ লাখ টাকায় কেনেন স্ত্রীর নামে। উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর সড়কের ৩৬ নম্বর বাড়িতে ৩২০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। ফ্ল্যাটটি কিনতে তার খরচ হয়েছে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। আফতাবনগরে ২ নম্বর সড়কের ৯৮ নম্বর প্লটটি তিনি ১০ কোটি ৬০ লাখ টাকায় স্ত্রীর নামে কিনেছেন তিনি।

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ডি-ব্লকে ৭ নম্বর সড়কের ৬৯ নম্বর প্লটটি ৪০ কোটি টাকায় কিনে সেখানে তিনি নির্মাণ করেছেন ৮ তলা বাড়ি। দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর ই-ব্লকের ৩ নম্বর সড়কের ৩৩ নম্বর প্লটটি তার ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকায় কেনা। কেরানীগঞ্জের ৬ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর বাড়িতে তিনি ৩৫০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন ১ কোটি ২০ লাখ টাকায়।

ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পের ৪ নম্বর সড়কের ৮৫ নম্বর প্লটটি তিনি স্ত্রীর নামে কেনেন ২ কোটি ৯০ লাখ টাকায়। ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ৯ নম্বর সড়কের ৩৬ নম্বর বাড়িটিও তিনি কিনেছেন। এ ছাড়া গাজীপুর চৌরাস্তাসংলগ্ন ৭৫ নম্বর বাড়িটিও তার। এটি কিনতে তার খরচ পড়েছে প্রায় ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

উপরোক্ত সম্পদ তার জ্ঞাত আয়ের সাথে স্ঙ্গতিপূর্ণ নয়। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী  জাবেদ করিম ও তার পরিবারের সদস্যদের জাতীয় পরিচয় পত্রের বিপরীতে অনুসন্ধান করলে তার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের প্রমান পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।

অন্যদিকে পতিত  আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে এখন জাতীয়তাবাদী সেজেছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের  অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী  জাবেদ করিম।

কেবল  ‘বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্র’ নামের প্রকল্প থেকেই শতকোটি টাকা লোপাট করেছেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বিদেশে পাচার করেছেন কম করে হলেও হাজার কোটি টাকা।

গড়ে তুলেছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদের পাহাড়। পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সহকারী একান্ত সচিব জাহিদ হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে মিলেমিশে তিনি দেদার আর্থিক লুটপাট চালান। তখন তিনি ছিলেন সড়ক ও সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে। লুটপাটের আধিক্য এতই ছিল যে, সেই সময়ে কোনো সড়ক কিংবা সেতু নির্মিত হয়নি, রক্ষণাবেক্ষণও হয়নি।

এ ছাড়া মন্ত্রীর এপিএসের আস্কারায় তিনি ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন কাউকেই পাত্তা দিতেন না। বিভিন্ন প্রকল্পে পরিচালক নিয়োগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলায় নির্বাহী প্রকৌশলী পদায়নেও তার প্রত্যক্ষ প্রভাব ছিল। চাউর রয়েছে, এসব নিয়োগ ও পদায়নে তাকে পদভেদে ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকারও বেশি দিতে হতো। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত জুলাই আন্দোলনের সময় তিনি আওয়ামী লীগের তহবিলে মোটা অংকের টাকা অনুদান দিয়েছেন। তখন গণভবনে তার ছিল অবাধ যাতায়াত।

দুর্নীতিতে জাবেদ করিম এর  হাতে খড়ি মুন্সীগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী থাকাকালে।মুন্সীগঞ্জে সেই সময় ‘মি. টু পার্সেন্ট’ হিসেবে তার খ্যাতি ছিল। তাকে টু পার্সেন্ট না দিলে কোনো ঠিকাদারের কাজই মিলত না। সেই জেলায় তখন শতকোটি টাকার উন্নয়নকাজ বাস্তবায়িত হয়। এরপর বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্র প্রকল্পের পরিচালক হয়ে তিনি নামকাওয়াস্তে কিছু কাজ করে সেই প্রকল্পের শতকোটি টাকা লোপাট করেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কারণ বরাবরই তিনি ছিলেন আওয়ামী শাসক শ্রেণির প্রিয়পাত্র। জাবেদ করিমের ভাগ্যের চাকা সমানে ঘুরতে থাকে এলজিইডির সদর দপ্তর আগারগাঁওয়ে যোগদানের পর থেকে। তখন থেকেই তার আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা ছিলেন ফ্যাসিস্ট সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে মো. তাজুল ইসলাম স্থানীয় সরকার মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেলে জাবেদ করিম যেন আলাদীনের চেরাগ হাতে পেয়ে যান।

অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী  জাবেদ করিম এর  জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ,অনিয়ম,দুর্নীতি  ও ক্ষমতার অপব্যবহার অনুসন্ধান করার জন্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মহল।







আরও খবর


 সর্বশেষ সংবাদ

সোনারগাঁয়ে নিখোঁজের একদিন পর নদী থেকে ৭ বছরের শিশুর লাশ উদ্ধার
ত্রিশালে ‘রসের মিষ্টি’কে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা
ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে সালথায় ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আনন্দ র্যা লি
পাহাড়সম অভিযোগ গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী তরিকুল আলমমের বিরুদ্ধে
সিলেটবৈষম্যের শিকার, ৮দফা দাবীতে কুলাউড়ায় প্রতিবাদ সমাবেশ
আরো খবর ⇒


 সর্বাধিক পঠিত

নুসরাতের ‘অর্ডার ছাড়া বর্ডার ক্রসের’ ঝড়
ত্রিশালে মাদ্রাসা ভবনের ভিত্তি স্থাপনে আইএমইডি ডিজি মাহাবুব
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন ঠেকানোর শক্তি নেই: প্রেস সচিব
নুরুল হক নুরের ওপর হামলার প্রতিবাদে শেরপুরে মধ্যরাতের লাঠি মিছিল
মার্কিন বাজার থেকে ২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রপ্তানি আয় হতে পারে: ড. জাহিদ হোসেন
প্রকাশক: এম এন এইচ বুলু
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মাহফুজুর রহমান রিমন  |   উপদেষ্টা সম্পাদক : রাজু আলীম  
বিএনএস সংবাদ প্রতিদিন লি. এর পক্ষে প্রকাশক এম এন এইচ বুলু কর্তৃক ৪০ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বুলু ওশেন টাওয়ার, (১০তলা), বনানী, ঢাকা ১২১৩ থেকে প্রকাশিত ও শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ফোন:০২৯৮২০০১৯-২০ ফ্যাক্স: ০২-৯৮২০০১৬ ই-মেইল: spnewsdesh@gmail.com