
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা প্রদানে অনিয়ম ও হয়রানির অভিযোগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার (২৫ আগস্ট) সকালে দুদক গাজীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এ অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানকালে কর্মকর্তারা হাসপাতালের ওষুধ সংরক্ষণাগার, বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ, ল্যাব, ভর্তি ওয়ার্ড ও রান্নাঘর পরিদর্শন করেন। এ সময় জেনারেটর, এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি মেশিনসহ যন্ত্রপাতি অচলাবস্থা ও রোগীদের খাবারে অব্যবস্থাপনার প্রমাণ মেলে। এছাড়া রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাইরে করাতে পাঠানোরও প্রমাণ পান তারা।
দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনিয়ম নিয়ে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। বিশেষ করে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানো, অতিরিক্ত অর্থ আদায়, নিম্নমানের খাবার এবং চিকিৎসক-নার্সদের অব্যবহার নিয়ে অভিযোগ ছিল প্রবল। রোগীরা জানান, ডাক্তাররা নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না, নার্সদের ব্যবহার খারাপ, টয়লেট দুর্গন্ধময়, পানি থাকে না এবং মশা-মাছির উপদ্রব বেশি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচও) ডা. রেজওয়ানা রশীদের কক্ষে নিয়োগকৃত ব্যক্তিগত সহকারীকে (পিএস) টেবিল দিয়ে বসানো হয়েছে, যিনি রোগীদের হয়রানি করতেন।
দুদকের সহকারী পরিচালক এনামুল হক সাংবাদিকদের জানান, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও গোপন অভিযোগের ভিত্তিতে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। তিনি বলেন,
“প্রাথমিকভাবে ওষুধ সরবরাহ, আয়-ব্যয় হিসাব, খাদ্য সরবরাহ, জরুরি বিভাগে চিকিৎসার নামে টাকা আদায়সহ নানা অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। আজ হাসপাতালে ভর্তি ৫০ জন রোগীর জন্য ১০ কেজি মাংসের পরিবর্তে মাত্র ৪ কেজি রান্না করা হয়েছে। নয় মাস ধরে রোগীদের কেবল ব্রয়লার মুরগি খাওয়ানো হচ্ছে, যা পরিমাণে অপ্রতুল। বিষয়গুলো আমরা প্রতিবেদন আকারে কমিশনে হস্তান্তর করব। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, রোগীদের মধ্যে ধারণা তৈরি হয়েছে যে দুপুর ১২টার পর ডাক্তাররা থাকেন না, ফলে এ সময়ের পর হাসপাতালে রোগীর উপস্থিতিও কমে যায়।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউএইচও ডা. রেজওয়ানা রশীদ জানান, প্রতিটি সেক্টরে আলাদা জনবল রয়েছে এবং তাদের অনিয়মের দায় তারা নিজেরাই নেবেন। তবে সামগ্রিক অনিয়মের দায় স্বীকার করে তিনি বলেন, “দুদকের অভিযানে যদি কোনো অনিয়ম পাওয়া যায় তবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দুদকের হঠাৎ অভিযানে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে স্বস্তি নেমে আসে। তারা আশা প্রকাশ করেন, নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত হবে এবং অনিয়ম-দুর্নীতি কমে আসবে।