বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫ ২ শ্রাবণ ১৪৩২
 
শিরোনাম:


আজিজ আল কায়সার: দূরদর্শী নেতৃত্বে এক উজ্জ্বল নাম
রাজু আলীম
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই, ২০২৫, ৫:৪১ PM আপডেট: ০৩.০৭.২০২৫ ৫:৪৯ PM

বাংলাদেশের কর্পোরেট ও ব্যাংকিং অঙ্গনে আজিজ আল কায়সার একটি সুপরিচিত নাম—তিনি কেবল একজন সফল ব্যবসায়ী নন, বরং একজন দূরদর্শী সংস্কারক, সংগঠক ও সমাজসেবক, যিনি আধুনিক বাংলাদেশের আর্থিক খাত ও শিল্প ব্যবস্থাপনায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর নেতৃত্ব, বিচক্ষণতা ও সংস্কারমুখী পদক্ষেপে সিটি ব্যাংক পিএলসি আজ দেশের অন্যতম শীর্ষ ও আধুনিক ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। একইসঙ্গে পারটেক্স গ্রুপ ও পারটেক্স স্টার গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি দেশের শিল্পখাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তরের পথপ্রদর্শক হয়েছেন।

আজিজ আল কায়সারের নেতৃত্বে সিটি ব্যাংক পিএলসি-র পুনর্গঠনের যাত্রা শুরু হয় ২০০৮ সালে। সে সময় বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত অনেকটাই ঐতিহ্যগত ও প্রযুক্তি-বিমুখ ছিল। কিন্তু তিনি তাঁর কৌশলী পরিকল্পনা ও আধুনিক ব্যাংকিং দর্শনের মাধ্যমে সিটি ব্যাংককে রূপান্তর করেন একটি গতিশীল, ডিজিটাল ও গ্রাহক-কেন্দ্রিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। ব্যাংকের ব্যবসা ও অপারেশনকে কেন্দ্রীয়ভাবে একত্রিকরণ, পূর্ণাঙ্গ অনলাইন ব্যাংকিং চালু, এবং আধুনিক রিটেইল ব্যাংকিংয়ের সূচনা—এসব উদ্যোগ ছিল তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বের ফসল। দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ড চালু করাও ছিল সিটি ব্যাংকের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ, যা আজও ব্যাংকটির বৈশ্বিক পরিচিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা বহন করে।

সিটি ব্যাংকের ডিজিটাল অভিমুখ নির্ধারণ, সিটিজেম প্রায়োরিটি ব্যাংকিং চালু করা, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ‘সিটি আলো’ নামে ব্যাংকিং সেবা এবং দেশের প্রথম বেসরকারি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ—এসব সৃষ্টিশীল উদ্যোগে আজিজ আল কায়সারের চিন্তার গভীরতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার পরিচয় স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। বিশেষ করে নারী ব্যাংকিং সেবা, এসএমই ও ডিজিটাল লোন চালু করার মধ্য দিয়ে তিনি শুধু একটি ব্যাংককে আধুনিক করেননি, বরং ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে করেছেন অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমাজমুখী।

আজিজ আল কায়সারের দৃঢ় নেতৃত্বেই সিটি ব্যাংক দেশের প্রথম ব্যাংকাসুরেন্স লাইসেন্স অর্জন করে। এর ফলে ব্যাংকিং ও বীমা খাতের মধ্যে একটি নতুন সেতুবন্ধ তৈরি হয়, যা ভবিষ্যতের আর্থিক পরিকল্পনা ও নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। একই সঙ্গে চারটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের—সিটি ব্রোকারেজ লিমিটেড, সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস লিমিটেড, মালয়েশিয়াভিত্তিক সিবিএল মানি ট্রান্সফার কোম্পানি ও সিটি হংকং লিমিটেড—প্রতিষ্ঠায় তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। এই উদ্যোগগুলো কেবল সিটি ব্যাংকের পরিধি ও বৈশ্বিক সম্পর্ক বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, বরং দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বৈচিত্র্য, বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও আস্থা বৃদ্ধির দিকেও একটি ইতিবাচক বার্তা পাঠায়।

২০২৪ সালে সিটি ব্যাংক তার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক হাজার কোটির বেশি মুনাফা করেছে, যা এ প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। একই বছর ব্যাংকটি বাংলাদেশে সর্বোচ্চ মুনাফাকারী তিনটি ব্যাংকের একটি হিসেবে স্থান করে নেয়, যেখানে ব্র্যাক ব্যাংক ও এইচএসবিসি বাংলাদেশ ছিল অন্য দুটি ব্যাংক। বিশেষজ্ঞদের মতে, সিটি ব্যাংকের এই সাফল্য সুশাসন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার নৈপুণ্য এবং গ্রাহকভিত্তিক নীতি অনুসরণের ফল। দেশের ব্যাংকিং খাতে যখন অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান লোকসানে নিমজ্জিত, তখন এই সাফল্য এক ধরনের মডেল তৈরি করেছে।

শুধু ব্যাংকিং নয়, শিল্পখাতেও আজিজ আল কায়সারের অবদান প্রশংসনীয়। পারিবারিক ব্যবসায় যোগদানের পর তিনি পারটেক্স গ্রুপের কার্যক্রম ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত ও বৈচিত্র্যময় করে তোলেন। স্টার পার্টিকেল বোর্ড মিলস, পারটেক্স রিয়েল এস্টেট এবং পারটেক্স ফার্নিচারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে তিনি এই গ্রুপকে এক সুপরিচিত ও স্থিতিশীল ব্র্যান্ডে রূপান্তর করেন। দেশীয় শিল্পে তাঁর এই ভূমিকাই প্রমাণ করে, তিনি শুধু একটি ব্যবসা পরিচালনা করেন না, বরং একটি দর্শন ও মিশন নিয়ে এগিয়ে যান—যেখানে টেকসই উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সামাজিক দায়িত্ববোধ সবকিছুর সমন্বয় ঘটে।

সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা অঙ্গনে নতুন একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) বোর্ড অব ট্রাস্টিজের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁকে নির্বাচিত করা হয়েছে। তিনি আজিম উদ্দিন আহমেদের স্থলাভিষিক্ত হন। বোর্ডের বার্ষিক সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা তাঁর প্রতি আস্থা ও সম্মান প্রদর্শনেরই প্রতিফলন। এই দায়িত্ব কেবল একটি প্রশাসনিক পদ নয়, বরং এটি তাঁর পারিবারিক উত্তরাধিকার ও শিক্ষাক্ষেত্রে অব্যাহত অবদানেরও প্রতীক।

নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পর আজিজ আল কায়সার বলেন, “নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি অনেক দূর এগিয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে সবার কঠোর পরিশ্রম ও দায়িত্বশীল নেতৃত্বের কারণে। আমি এই প্রতিষ্ঠানকে আরও উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই, যেন এটি বিশ্বমানের শিক্ষা ও গবেষণার একটি কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।” তাঁর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক উৎকর্ষতা, গবেষণা উদ্যোগ এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব নতুন মাত্রা পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী।

প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত এনএসইউ বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আজিজ আল কায়সার এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং সাবেক চেয়ারম্যান এম এ হাশেমের পুত্র। অতএব, এই দায়িত্ব তাঁর জন্য কেবল আনুষ্ঠানিক নয়, বরং পারিবারিক ঐতিহ্য ও ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার একটি অবিচ্ছেদ্য প্রকাশ।

আজিজ আল কায়সারের শিক্ষা ও দৃষ্টিভঙ্গির উৎস খুঁজতে গেলে দেখা যায়, তিনি লন্ডন থেকে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনায় ডিগ্রি অর্জন করেন। বিদেশি শিক্ষার অভিজ্ঞতা ও পরিবার থেকে পাওয়া ব্যবসায়িক মূল্যবোধ—এই দুইয়ের সংমিশ্রণ তাকে একজন আধুনিক, প্রগতিশীল ও বাস্তবভিত্তিক কর্পোরেট নেতা হিসেবে গড়ে তোলে। কর্পোরেট গভর্ন্যান্স উন্নয়ন, বড় বিনিয়োগ প্রকল্প তদারকি ও নীতিনির্ধারণে তিনি সব সময় ছিলেন অগ্রগামী। তাঁর নেতৃত্বে যেসব প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়েছে, সেখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও পেশাদারিত্বকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

কর্পোরেট ও ব্যাংকিং সাফল্যের বাইরেও আজিজ আল কায়সার সমাজসেবা ও ক্রীড়াক্ষেত্রে একটি আদর্শিক নেতৃত্বের প্রতীক। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ক্রিকেট দলের ম্যানেজার এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বেও ছিলেন সক্রিয়। খেলাধুলার প্রতি তাঁর ভালোবাসা এবং তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করার মনোভাব তাঁকে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্রীড়া সংগঠনের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে উৎসাহিত করেছে। এছাড়া Lions Club of Dhaka Oriental ও এম এ হাশেম ডায়াবেটিক হাসপাতালের মতো সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানেও তিনি নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন নিঃস্বার্থভাবে।

আজিজ আল কায়সার সেই বিরল ব্যক্তিত্ব, যিনি ব্যবসা, ব্যাংকিং, শিক্ষা, সমাজসেবা ও খেলাধুলা—এই পাঁচটি খাতে একযোগে দক্ষতা, নেতৃত্ব ও নিষ্ঠার মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ পরিসর গড়ে তুলেছেন। তাঁর চিন্তা ও কৌশল কেবল প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর ভেতরেও ইতিবাচক পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা তৈরি করছে।

ব্যক্তিত্বে সজ্জনতা, নেতৃত্বে স্বচ্ছতা, ও নীতিতে দৃঢ়তা—এই তিন গুণে বলীয়ান আজিজ আল কায়সার আজকের বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব। তাঁর অবদান শুধু একটি ব্যাংক বা একটি ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নের গল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। একজন দেশপ্রেমিক, মানবিক ও উদ্ভাবনী চিন্তার মানুষ হিসেবে তিনি আগামী প্রজন্মের জন্য এক অনুসরণীয় আদর্শ।




লেখক: রাজু আলীম, কবি, সাংবাদিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।







আরও খবর


 সর্বশেষ সংবাদ

২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলো বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
আমরা আবার গোপালগঞ্জে যাব,প্রত্যেকটা গ্রামে কর্মসূচি করব: নাহিদ ইসলাম
এইউবিতে জুলাই শহীদ দিবস উপলক্ষে স্মরণসভা
গণতন্ত্র হুমকির মুখে, রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকার আহ্বান বিএনপির
কলেজে ভর্তি-সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার দাবিতে ঢাকা বোর্ডের সামনে এসএসসিতে ফেল করাদের বিক্ষোভ
আরো খবর ⇒


 সর্বাধিক পঠিত

নালিতাবাড়ীতে নন্নী-পোড়াগাঁও মৈত্রী কলেজে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে সংঘর্ষ,আটক ১৮
কালীগঞ্জে নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য বিক্রয় ও প্রদর্শনী কেন্দ্রের উদ্বোধন
নালিতাবাড়ীতে সিএনজি চালকের মরদেহ উদ্ধার
সখীপুরে গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেপ্তার ২
শেরপুরে জুলাই বিপ্লব স্মরণে শিশুদের কবিতা আবৃত্তি
প্রকাশক: এম এন এইচ বুলু
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মাহফুজুর রহমান রিমন  |   উপদেষ্টা সম্পাদক : রাজু আলীম  
বিএনএস সংবাদ প্রতিদিন লি. এর পক্ষে প্রকাশক এম এন এইচ বুলু কর্তৃক ৪০ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বুলু ওশেন টাওয়ার, (১০তলা), বনানী, ঢাকা ১২১৩ থেকে প্রকাশিত ও শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ফোন:০২৯৮২০০১৯-২০ ফ্যাক্স: ০২-৯৮২০০১৬ ই-মেইল: spnewsdesh@gmail.com