দেশের ব্যাংকিং খাতের দীর্ঘদিনের সংকট মোকাবিলা ও খেলাপি ঋণ আদায়ে অর্থ ঋণ আইনে পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিডা ও ইউএনডিপির আয়োজিত ‘বিনিয়োগ সংলাপ’-এ তিনি এ তথ্য জানান।
‘ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, প্রতিষ্ঠান চলবে’
গভর্নর বলেন, “প্রতিষ্ঠান হচ্ছে জাতীয় সম্পদ। একটি ব্যক্তির অনিয়মের জন্য আমরা কোনও প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে পারি না। তবে আইনগত প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিষ্ঠান নয়—ব্যক্তিই দায় পাবেন।”
তিনি জানান, এ পর্যন্ত কোনও শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়নি। তবে খেলাপি ঋণ আদায়কে কাঠামোগতভাবে শক্তিশালী করতে অর্থ ঋণ আইনে সংশোধনীর প্রস্তাব সরকারকে পাঠানো হয়েছে।
ব্যাংক খাত মজবুত করতে ৭০ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন
ব্যাংকিং খাতের বর্তমান চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে গভর্নর মনসুর বলেন, “খাতকে স্থিতিশীল রাখতে মোট ৭০ হাজার কোটি টাকা লাগবে। এটি একসঙ্গে পাওয়া সম্ভব নয়। আগামী অর্থবছরের বাজেট থেকেই প্রথম ধাপে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা সমর্থন নেওয়া হবে।”
বাংলাদেশে ‘অনেক লিলিপুট ব্যাংক আছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক মানের একটি বড় ব্যাংকও নেই’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটা আগামী ২০ বছরে সম্ভব নাও হতে পারে। তবে সুশাসন ও সংস্কার অব্যাহত থাকলে ১০-১৫ বছরে ব্র্যাক ব্যাংক সেই পর্যায়ে যেতে পারে।”
মূল্যস্ফীতি কমলেই সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে
সংলাপে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে উচ্চ সুদহার নিয়ে অভিযোগ তোলেন এপেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। তিনি বলেন, “বর্তমান সুদহার নিয়ে ব্যবসা চালানো খুবই কঠিন। ভিয়েতনাম ও ভারতের মতো প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে কস্ট অব ক্যাপিটালে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি।”
‘সুদ কমানোর আগে ইনফ্লেশন টেকসইভাবে ৭ শতাংশের নিচে যেতে হবে’
ব্যবসায়ীর বক্তব্যের জবাবে গভর্নর মনসুর জানান, “মূল্যস্ফীতি যখন ৮ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশের নিচে নামবে, তখনই সুদহার কাঠামো সিঙ্গেল ডিজিটে আসতে পারবে। এর জন্য আমাদের কিছুটা সময় ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। হঠাৎ প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ বিপজ্জনক নীতি-বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “আমার কাছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকবে, আর সুদহার কম থাকবে— এটা হতে পারে না। কারণ তখন প্রকৃত সুদহার নেগেটিভ হয়ে যাবে। এখন কিছুটা রিয়েল ইন্টারেস্ট রেট তৈরি হয়েছে— এটি বাজার স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি।”
মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা ও আগে করা ভুল সংশোধন
গভর্নর জানান, ধারাবাহিক নীতি সুদহার বৃদ্ধির ফলে মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল হয়েছে এবং বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি, চলতি অর্থবছরের শেষে মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের নিচে নামানো যাবে। এরপর সুদহারও কমবে।”
তিনি আরও আহ্বান জানান ভবিষ্যত সরকারের প্রতি— বর্তমান অর্থনৈতিক নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য।
গভর্বনর বলেন, “তাহলে আমরা ইনফ্লেশন ৫, ৪ এমনকি ৩ শতাংশেও নামাতে পারব।”