জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের বিরোধিতা করে ১ হাজার ১ জন শিক্ষকের বিবৃতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়াও এ নিয়ে ‘বাহান্ন নিউজ ডটকম’ নামে একটি সংবাদ মাধ্যমের ওয়েবসাইটে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
এ ঘটনার তদন্ত করে শেখ হাসিনার পক্ষে অবস্থানকারী শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করার দাবি জানিয়ে সম্মলিত বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু)।
বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই বিপ্লবে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে স্বৈরাচারী খুনি শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ঐতিহাসিক রায়ের প্রতি ডাকসু, জাকসু, রাকসু ও চাকসু সন্তোষ প্রকাশ করছে। এই রায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ঘোষিত রায় অনুযায়ী, খুনি হাসিনা ড্রোন ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের অবস্থান নির্ণয়, হেলিকপ্টার ও লেথাল উইপন ব্যবহার করে ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার অধীনস্থদের বাধা না দেওয়ার ফলেই ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চানখাঁরপুলে ও আশুলিয়ায় আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যার মতো ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। এই জঘন্য অপরাধের নির্দেশদাতা হিসেবে খুনি হাসিনাকে যে সর্বোচ্চ শাস্তি (মৃত্যুদণ্ড) প্রদান করা হয়েছে তা সম্পূর্ণভাবে ন্যায়সঙ্গত এবং জুলাই বিপ্লবের শহীদদের আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ।
১ হাজার ১ জন শিক্ষকের স্বাক্ষরিত বিবৃতি নিয়ে ছাত্র সংসদ নেতারা বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মানবতাবিরোধী অপরাধী শেখ হাসিনার পক্ষে ‘বাংলাদেশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকবৃন্দ’ নাম ব্যবহার করে বিবৃতি দেওয়ার সংবাদটি জনগণকে স্তম্ভিত ও বিক্ষুব্ধ করেছে। প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, এই বিবৃতিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০১ জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত বলা হলেও বিবৃতির স্বাক্ষরে ৬৫৯ জন শিক্ষকের নাম রয়েছে। আদালত যাকে মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন সেই খুনির পক্ষে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এমন পক্ষ নেওয়া বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি সরাসরি অবজ্ঞা প্রদর্শন এবং জুলাই বিপ্লবের শহীদ ও আহতদের প্রতি চরম অবমাননাকর।
হাসিনার পক্ষে অবস্থানকারী শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করার দাবি জানিয়ে ছাত্র সংসদ নেতারা বলেন, প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী খুনি হাসিনার পক্ষে দেওয়া এই বিবৃতিতে কিছু শিক্ষককে না জানিয়েই তাদের নাম বিবৃতির স্বাক্ষরে যুক্ত করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে এই বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী শিক্ষকদের চিহ্নিত করার জন্য দ্রুত তদন্ত শুরু করতে হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত খুনির পক্ষে অবস্থান নেওয়া শিক্ষকদের আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে হবে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি সম্মিলিত ছাত্র সংসদের আহ্বান, যে সকল শিক্ষক মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত খুনি হাসিনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তাদের সকল প্রকার ক্লাস ও পরীক্ষা বয়কট করুন। বিবেকহীন এসব শিক্ষকদের সামাজিক ও একাডেমিক সকল ক্ষেত্র থেকে প্রতিহত করুন। মানবতাবিরোধী অপরাধীর পক্ষ নেওয়া এই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিতে শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে সম্মিলিত ছাত্র সংসদ আন্দোলন চালিয়ে যাবে।