দীর্ঘ ১৫মাস অনুপস্থিত থেকে নিয়মিত বিল উত্তোলন করছেন চরমোতাহার দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মো. ফখর উদ্দিন। মাওলানা ফখর উদ্দিন জানিয়েছেন, স্থানীয় কিছু সংখ্যক লোকের সাথে ব্যক্তিগত সমস্যা থাকার কারনে সে মাদ্রাসায় নিয়মিত উপস্থিত থাকতে পারছেনা। মাদ্রাসাটির অবস্থান ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দুলারহাট থানার অন্তর্গত বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মুজিবনগর ৩ নম্বর ওয়ার্ডে। কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় মাদ্রাসার শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহতসহ মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে সত্যতা যাছাই পূর্বক তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি।
জানা যায়, ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর স্থানীয়দের তোপের মুখে পরে চরমোতাহার দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মো. ফখর উদ্দিন মাদ্রাসায় আসা বন্ধ করে দেয়। তবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে নিয়মিত বিল তুলে যাচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে চরমোতাহার দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা ফখর উদ্দিন কর্মস্থলে নিয়মিত আসত না। তিনি মাদ্রাসার নামে যেকোন সরকারি বরাদ্দ নিজেই আত্মসাত করতো। নিয়মবর্হিভূতভাবে নিজের ইচ্ছে মতো মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরীক্ষা ফি ও সেশন ফি বাড়িয়ে নিত। এছাড়াও ক্ষমতা খাটিয়ে স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের প্রায় অর্ধশত একর জমি জবর দখল করে নেন সুপার। এতে অসন্তোষ দেখা দেয় স্থানীয়দের মধ্যে। তবে স্থানীয়রা তার এই কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পেত না।
সরজমিনে গিয়ে সুপারের দেখা মেলেনি। তবে অন্যান্য শিক্ষকদের কাছ থেকে সুপারের উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, মাদ্রাসার সুপার গত ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন। সে একদিনও মাদ্রাসায় আসেনি। মাদ্রাসায় সুপার ফখর উদ্দিন অনুপস্থিত থেকেও কিভাবে বিল তুলছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ওই মাদ্রাসার সহকারী সুপার মাওলানা হারুনুর রশিদ বলেন, ‘তিনি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মাদ্রাসায় উপস্থিত নেই। তবে তিনি কিভাবে বিল তুলছেন এটা আমার জানা নাই।’
এছাড়া শিক্ষকদের হাজিরা বইতে দেখা যায়, ১৫ মাস অনুপস্থিত থেকে হাজিরা খাতায় সুপারের ৫ মাসের স্বাক্ষর রয়েছে। তবে এর মধ্যে ওই হাজিরা খাতায় বেশিরভাগ ইংরেজিতে ঢাকা ও বাংলাতে চরফ্যাশন শব্দ লেখা রয়েছে। তিনি কিভাবে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়েছে? এই বিষয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন কর্মচারী বলেন, ‘সে গোপনে বাসায় এসে একদিনেই হাজিরা বইতে পুরো মাসের স্বাক্ষর দিয়েছে।’
মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা মাদ্রাসায় নিয়মিত আসি। তবে আমাদের প্রতিষ্ঠানে সুপারকে এক বছরের চেয়েও বেশি সময় ধরে দেখতে পাইনি।
স্থানীয় মিজানুর রহমান জানান, আওয়ামীলীগের আমলে চর মোতাহার দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা ফখর উদ্দিন নিয়মনিতির তোয়াক্কা না করে নিজের খেয়াল খুশি মতো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেছে। এমনকি তিনি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়মিত অশোভনীয় আচরন করতো। সাবেক এক ইউএনও’র স্বাক্ষর জাল করে তার এক মেয়ে ও মেয়ের জামাতাকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছে। এছাড়াও সে স্থানীয় বেশ কয়েকজন কৃষকের প্রায় অর্ধশত একর জমি তার এক প্রভাবশালী আত্মীয়র পরিচয় বহন করে নিজের দখলে নিয়েছে। সেজন্যই ৫ আগস্টের পর থেকেই সে এলাকা ছাড়া। এমনকি মাদ্রাসায় আসা বন্ধ করে দিয়েছে।
মাদ্রাসার সুপার মাওলানা ফখর উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার সাথে স্থানীয় একটি গ্রুপ ঝামেলা করতেছে বিদায় আমি মাদ্রাসা উপস্থিত হতে পারিনি।’ এসময় সে প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনি যদি আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেন তাহলে আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাসহ সংবাদ সম্মেলন করবো।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল খায়ের বলেন, ‘মাদ্রাসার সুপার ফখর উদ্দিন টানা ১৫ মাস মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থেকে বেতন উত্তোলন করার কোন সুযোগ নেই। তাছাড়া তিনি তার অনুপস্থিতের বিষয়টি আমাকে অবগত করিনি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি বলেন, ‘মাদ্রাসা সুপারের অনুপস্থিতির বিষয়টি নিয়ে মৌখিকভাবে একটি গুরুতর অভিযোগ পেয়েছি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সত্যতা যাচাই পূর্বক তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’