বাংলা গানের প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোর। সংগীতজীবনে ১৫ হাজারের বেশি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। আজ তার জন্মদিন। শারীরিকভাবে না থাকলেও আগের চেয়ে আরও বেশি আপন হয়ে আছেন ভক্ত ও সহকর্মীদের কাছে। সেটাই জানালেন এন্ড্রু কিশোরের সহকর্মী, দেশবরেণ্য সংগীতশিল্পী কনকচাঁপা।
১৯৫৫ সালের এই দিনে রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। প্লেব্যাক সম্রাটের জন্মদিনে তাকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে স্মৃতিচারণ করেছেন কনকচাঁপা। ‘তোমাকে চাই’ সিনেমার কালজয়ী গান ‘আমার নাকের ই ফুল বলে রে তুমি যে আমার’ রেকর্ডিংয়ের সময় তোলা একটি ছবি পোস্ট করে প্রয়াত শিল্পীকে স্মরণ করেছেন তিনি।
তিনি লিখেছেন, “এই ছবিটি ‘তোমাকে চাই’ সিনেমার গানের রেকর্ডিংয়ের সময় তোলা। সিম্ফনি স্টুডিওতে আমরা গাইছিলাম ‘আমার নাকের ই ফুল বলে রে তুমি যে আমার’। আমাদের ‘এন্ড্রু কিশোর–কনকচাঁপা’ নামের জুটি যে মহাশিল্পী নিজের ভালোবাসার তুলিতে এঁকেছেন, সেই জাতশিল্পী, স্বভাবকবি, বাংলার সুরের যাদুকর আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ভাইকে কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনিও আমাদের মাঝে নেই। তাঁদের জন্য আমার শ্রদ্ধা অবিরাম।”
‘আমার নাকের ই ফুল বলে রে তুমি যে আমার’ গান রেকর্ডিংয়ের সময় তোলা ছবিতে কনকচাঁপা ও এন্ড্রু কিশোর। ছবি: কনকচাঁপার ফেসবুক থেকে
প্লেব্যাক সম্রাটকে স্মরণ করে কনকচাঁপা আরও লিখেছেন, “শুভ জন্মদিন, হে তরল সোনা মাখানো কণ্ঠের রাজা এন্ড্রু কিশোর দাদা! আমরা গর্বিত, আমাদের এন্ড্রু কিশোর আছেন! আছেন বলছি এজন্য-শারীরিকভাবে না থাকলেও তিনি আগের চেয়ে আরও বেশি আপন ও প্রয়োজনীয় হয়ে আছেন আমাদের মাঝে।”
এন্ড্রু কিশোরকে গলিত সোনার নদীর সঙ্গে তুলনা করে কনকচাঁপা লিখেছেন, “একজন এন্ড্রু কিশোর—একটি কণ্ঠ, একটি গলিত সোনার নদী। সিনেমা হলে যখন তাঁর গান বাজে, তখন পুরো হল সেই আওয়াজে ভরে যায়। সে কণ্ঠ ভাসতে, ভাসাতে, কাঁদাতে, রোমান্সে ডুবাতে কোনো ডলবি সারাউন্ড সাউন্ড সিস্টেমের প্রয়োজন হয় না। তিনি যখন ‘ডাক দিয়াছে দয়াল আমারে’ গান, তখন সমস্ত শ্রোতার এই দুনিয়ার উপর অভিমান উপচে পড়ে। আবার তিনিই যখন ‘তুমি আমার জীবন’ গান, তখন সমস্ত পুরুষ ভাবেন-এভাবেই তো প্রিয়াকে বলতে চেয়েছি আমি!”
এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে ৩৪ বছর গান করেছেন কনকচাঁপা। এখনও তিনি যখন মঞ্চে ওঠেন, এন্ড্রু কিশোরের প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত হন। কনকচাঁপার ভাষায়, “কিশোরদার সঙ্গে গেয়েছি ৩৪ বছর। তিনি আজ নেই, অথচ এখনো তাঁর কণ্ঠের প্রতি বিস্ময় আমার কাটে না। মঞ্চে যখন গাই, আমি শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে যাই। বারবার ভাবি—এত সম্মান আমার কপালে ছিল! আল্লাহ, কতই না তুমি দিলা আমায় বিনা কারণে!”
প্রসঙ্গত, ১৯৫৫ সালের এই দিনে রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন এন্ড্রু কিশোর। মা ছিলেন সংগীতানুরাগী, আরেক কিংবদন্তি কিশোর কুমারের ভক্ত। প্রিয় শিল্পীর নামানুসারে তাই নিজের সন্তানের নাম রাখেন ‘কিশোর’। মায়ের সেই স্বপ্ন পূরণ করতেই মূলত সংগীতাঙ্গনে তাঁর পদার্পণ। মাত্র ছয় বছর বয়স থেকেই সংগীতের তালিম নিতে শুরু করেন এন্ড্রু কিশোর।
১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রের ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের প্লেব্যাক জগতে পা রাখেন তিনি। তাঁর কণ্ঠে ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে সুখ–দুঃখ, হাসি–আনন্দ, প্রেম–বিরহের মতো অনুভূতিগুলো। ১০ মাস ক্যান্সারের সঙ্গে লাড়াই করে ২০২০ সালের ৬ জুলাই না ফেরার দেশে চলে যান এই গায়ক।