জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢল নেমেছে সালমান ভক্তদের। শনিবার (১ নভেম্বর) সালমান শাহ হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও আসামিদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ভক্তরা।
এদিন দুপুর আড়াইটার দিকে এই মানববন্ধনে গোটা দেশ থেকে অগণিত সালমান ভক্ত হাজির হন। এ সময় তাদের হাতে প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন দেখা যায়। এসবে লেখা রয়েছে ‘সালমান হত্যার বিচার চাই’, ‘সামিরার ফাঁসি চাই’, ‘আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান।
এই আন্দোলনের অন্যতম নেতা সালমান ভক্ত মাসুদ রানা নকীব বলেন, ‘২৯ বছর ধরে আমরা এই হত্যার বিচারের দাবি করে আসছি। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শুনলো না। এবারও আশায় আছি, যদি প্রশাসনের টনক নড়ে। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি সালমানকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই হত্যার বিচার ছাড়া থামবো না। প্রয়োজনে আরও ২৯ বছর এই দাবি করে যাবো।’
এই মানববন্ধনের মাধ্যমে ৫ দফা দাবি পেশ করা হয়। সেগুলো যথাক্রমে-
১. পিবিআই প্রতিবেদনে যে পাঁচটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছিল তা পুনরায় খতিয়ে দেখতে হবে। র্যাবের তদন্ত স্থগিত করে কেন পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল? পিবিআইয়ের পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদনে যেই অসঙ্গতিগুলো ছিল তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসন্ধান করতে হবে।
২. মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। আসামিদের আত্মগোপন বা পলায়ন প্রমাণ করে তারা অপরাধী। নিরপরাধ কোনও ব্যক্তি পালিয়ে থাকে না। মহামান্য হাইকোর্টের কাছে ভক্তবৃন্দের বিনীত আবেদন থাকছে যে, পালিয়ে থাকা আসামিরা যেন আগাম জামিন না পায়। তাহলে আইন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে আসামিদের আগাম জামিন দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩. আসামিদের অদৃশ্য পেশী-শক্তির প্রভাবে ২৯টি বছর ধরে মামলাটি মিথ্যার মোড়কে আটকে ছিল। যা একটি দীর্ঘ সময়। তাই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আর যেন বিলম্ব না হয় এরজন্যে দেশের চলমান আইনের নিয়মানুসারে হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪. বাংলাদেশ সরকারের কাছে সালমান শাহ ভক্তবৃন্দের আবেদন, বিদেশে পালিয়ে থাকা আসামিদের ইন্টারপোলের সহায়তায় খুঁজে বের করে গ্রেফতার করে দেশে এনে হত্যা মামলাটির বিচারকার্য অতি দ্রুত সম্পন্ন করে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের প্রাণের দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
৫. ডিবি ও সিআইডি থেকে আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করে কেন ভুল রিপোর্ট দেয়া হয়েছিল, সেটারও সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনের বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় সালমান শাহর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর একে একে থানা-পুলিশ, সিআইডি, র্যাব, পিবিআইসহ একাধিক সংস্থা তদন্ত চালায়। সব প্রতিবেদনেই ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলা হলেও সালমানের পরিবারের আপত্তিতে প্রতিবারই তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন করা হয়।
অবশেষে গত ২১ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় সালমান শাহর মামা চলচ্চিত্র পরিচালক আলমগীর হোসেন কুমকুম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যা মামলার এজাহারে সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক, শাশুড়ি লতিফা হক লুসি ও বিতর্কিত ব্যবসায়ী এবং অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনও আছেন আসামি তালিকায়। এসব আসামি কে কোথায় আছেন সুনির্দিষ্ট করে জানাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো।
বলা দরকার, মাত্র ২৫ বছরের জীবনে সালমান শাহ ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন—সব কটিই ছিল বাণিজ্যিকভাবে সফল। নব্বইয়ের দশকে দেশের চলচ্চিত্রে রোমান্টিক হিরোর নতুন ধারা শুরু হয় তাঁর হাত ধরে। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘বিক্ষোভ’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘প্রেমযুদ্ধ’সহ তাঁর প্রতিটি সিনেমাই বক্স অফিসে হিট হয়।