
কখনো
আতঙ্কের নাম ছিল অ্যানথ্রাক্স। গরু বা ছাগলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে পুরো
গ্রামজুড়ে নেমে আসত শঙ্কা। সেই ভয়াবহ চিত্র এখন অনেকটাই ইতিহাস কুড়িগ্রামের
উলিপুরে। উপজেলার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিবিড় তদারকি, সচেতনতামূলক
কার্যক্রম ও নিয়মিত টিকা প্রদানের মাধ্যমে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে তারা গড়ে
তুলেছেন এক দৃষ্টান্ত।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের
তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ১৫ হাজার গবাদিপশুকে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধী
ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। পাশাপাশি ২০টি উঠান বৈঠক, ৫টি পথসভা, ৫টি
কসাইখানা পরিদর্শন এবং এক হাজার লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে জনগণের মাঝে
সচেতনতা সৃষ্টি করা হয়েছে।
এছাড়াও কসাইখানায় নিয়মিত উপস্থিত থেকে
কর্মকর্তারা নজরদারি করছেন যেন কোনো অসুস্থ বা সন্দেহজনক পশু জবাই না হয়।
ফলে এই বছর উলিপুর উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত কোনো প্রাণীর খবর পাওয়া
যায়নি।
উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ক্ষুদ্র খামারি সিরাজুল ইসলাম জানান,
আগে অ্যানথ্রাক্সের নাম শুনলেই ভয় পেতাম। এখন প্রাণিসম্পদ অফিসের পরামর্শে
নিয়মিত টিকা দিই, পশুর যত্ন নেই। এতে ক্ষতি কমেছে, লাভ বেড়েছে। তাদের
পরামর্শ আমাদের মতো ছোট খামারিদের সাহস দিয়েছে।
উলিপুর বাজারের কসাই
বকুল মিয়া বলেন, প্রাণিসম্পদ অফিসের নির্দেশনা ছাড়া এখন আমরা কোনো পশু
জবাই করি না। তারা নিয়মিত কসাইখানায় আসেন, অসুস্থ পশু চিহ্নিত করেন। আগে
বুঝতাম না—রোগ ওলা গরু জবাই করলে মানুষেরও ক্ষতি হতে পারে। এখন বুঝি, সতর্ক
থাকি।
অন্য কসাই চাঁদ মিয়া বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের
কর্মকর্তারা আমাদের পাশে থেকে শেখাচ্ছেন কীভাবে সুস্থ পশু নির্বাচন করতে
হয়। তাদের সহযোগিতা না থাকলে আমরা হয়তো অনেক ক্ষতির মুখে পড়তাম।
অ্যানথ্রাক্স
একটি সংক্রামক রোগ, যা Bacillus anthracis নামক ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে
ছড়ায়। এটি আক্রান্ত প্রাণীর রক্ত, চামড়া বা মাংসের সংস্পর্শে এসে মানুষ ও
প্রাণী উভয়ের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে। তবে সময়মতো টিকা, পরিচ্ছন্নতা ও
সচেতনতার মাধ্যমে এই রোগ শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ
কর্মকর্তা ডা. মোছাঃ রেবা বেগম বলেন, আমরা শুরু থেকেই মাঠ পর্যায়ে কাজ
করছি। লক্ষ্য একটাই—রোগ হওয়ার আগেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা। এজন্য খামারি, কসাই,
সাধারণ জনগণ সবাইকে সম্পৃক্ত করেছি। এখন সবাই বুঝতে পারছেন—প্রতিরোধই
সুরক্ষা।
তিনি আরও বলেন, উলিপুর উপজেলাকে আমরা অ্যানথ্রাক্সমুক্ত
রাখতে চাই। এজন্য টিকাদান ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। আমাদের
কর্মকর্তারা প্রতিদিন মাঠে কাজ করছেন যেন কোনো পশু অসুস্থ না হয়, কিংবা
অসচেতনতায় মানুষ ক্ষতির মুখে না পড়ে।
উলিপুরের স্থানীয় সচেতন মহল
বলছেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এমন কার্যকর পদক্ষেপে আজ অ্যানথ্রাক্স আর
আতঙ্ক নয়, নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি রোগ। প্রশাসন থেকে মাঠকর্মী—সবাই যেভাবে
সমন্বয় করে কাজ করছে, তা সারা জেলার জন্য উদাহরণ।
অ্যানথ্রাক্স
প্রতিরোধে উলিপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাফল্য শুধু একটি রোগ দমন
নয়—এটি একটি গ্রামের অর্থনীতি, মানুষের আত্মবিশ্বাস ও জনস্বাস্থ্যের
নিরাপত্তার প্রতীক।
নিরলস কাজ, দায়িত্ববোধ আর মানবিকতার মেলবন্ধনে উলিপুর দেখিয়ে দিয়েছে—প্রতিরোধই প্রকৃত শক্তি।