
কুড়িগ্রাম মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজে ৪০ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগকে অপপ্রচার বলে মন্তব্য করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আবেদ আলী। তিনি বলেন, আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য একটি কুচক্রী মহল পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য প্রমাণ করতে না পারলে এটি মিথ্যা প্রমাণিত হবে।
অধ্যক্ষ মোঃ আবেদ আলী ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট কুড়িগ্রাম মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজে মেধার ভিত্তিতে অধ্যক্ষ পদে যোগ দেন। এর আগে তিনি ১৯৯৭ সাল থেকে কাঁঠালবাড়ি ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার হাত ধরেই প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপক উন্নয়ন হয়।
সম্প্রতি ১২ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার নাম ক্ষুণ্ণ করার জন্য একটি মহল নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে অপপ্রচার চালায়। অভিযোগে বলা হয়, উপাধ্যক্ষ ও অফিস সহকারী পদে নিয়োগের জন্য প্রায় ৪০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। তবে সরেজমিন খোঁজখবর নিয়ে পাওয়া যায় ভিন্ন চিত্র।
নিয়োগ প্রক্রিয়া যাতে সবার কাছে স্বচ্ছ থাকে তার জন্য গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি দেখে উপাধ্যক্ষ পদে ১৩ জন আবেদন করেন, লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন ৬ জন, এর মধ্যে ২ জন অকৃতকার্য হন এবং ভাইভায় অংশ নেন ৪ জন। সবশেষে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে এটি এম মো. আসাদুল ইসলাম উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পান। অপরদিকে অফিস সহকারী পদে ৩ জন আবেদন জমা দেন, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য প্রমাণিত হয়ে চাকরি পান হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান আউয়াল হোসেন।
নিয়োগের সুষ্ঠুতা নিশ্চিতে বোর্ডে দায়িত্ব পালন করেন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মির্জা নাসির উদ্দিন, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্কর সিদ্দিক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ইস্রাফিল শাহিন। তবে ওই প্রতিনিধির হাতে যাতায়াত ভাতা দেয়ার নিয়মকেই অপপ্রচারে ঘুষ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী অতিথি সদস্যদের যাতায়াত খরচ বহন করতেই হয়।
অভিযোগে অধ্যক্ষকে আওয়ামী লীগের ট্যাগ দেয়ার চেষ্টা করা হলেও তার নিজ এলাকা কাঁঠালবাড়িতে অনুসন্ধান করে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ মেলেনি। স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল আক্তার বলেন, আমি আবেদ আলীকে অনেকদিন ধরে চিনি। তিনি একজন মেধাবী ও সৎ মানুষ। কাঁঠালবাড়ি ডিগ্রি কলেজ তার হাত ধরেই উন্নত হয়েছে। তাকে কখনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হতে দেখিনি।
নিয়োগপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ এটি এম মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে ৩০-৪০ লাখ টাকা থাকার প্রশ্নই আসে না। আমি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি মেধার ভিত্তিতে। যদি এত টাকা আমার কাছে থাকতো তবে কি আমি এই পদে আসতাম?অন্যদিকে অফিস সহকারী আউয়াল হোসেন বলেন, আমি গরীব ছেলে। কষ্ট করে এই চাকরিটা পেলাম। এখন এটাতেও মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে। বিচার একমাত্র সৃষ্টিকর্তার কাছেই দিলাম।
কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও বর্তমান সহকারী অধ্যাপক মোঃ আব্দুস ছালাম বলেন, অধ্যক্ষ আবেদ আলী সবসময় সততার সঙ্গে কাজ করেছেন। নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু ছিলো। সহকারী অধ্যাপক আব্দুল লতিফও একই মন্তব্য করেন। গভর্নিং বডির সভাপতি অধ্যাপক হাসিবুর রহমান হাসিব বলেন, নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে টাকা নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। সব নিয়োগ হয়েছে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে।
অধ্যক্ষ মোঃ আবেদ আলী বলেন, একটি কুচক্রী মহল আমাকে হেয় করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিত্তিহীন অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলে সত্য উদঘাটিত হবে। মজিদা কলেজে নিয়োগ প্রক্রিয়া ছিলো সম্পূর্ণ সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও মেধাভিত্তিক।