৩৩৪ রানে পড়ে গেলো ৭ উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকা এরপর আর কতদূর যেতে পারবে? সর্বোচ্চ সাড়ে তিনশো কিংবা আরেকটু বেশি; কিন্তু না। সেই দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের প্রথম ইনিংসকে নিয়ে গেলো ৪৮৯ রান পর্যন্ত। কিভাবে সম্ভব হলো?
মূলত দুই টেল এন্ডারের সাহসী ব্যাটিংয়ের ওপর ভর করেই গুয়াহাটিতে ভারতের বিপক্ষে বিশাল স্কোর গড়ে তুলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। স্পিনার হিসেবে দলে খেলতে নামা সেনুরান মুথুসামি বাজিমাত করেছেন। ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি ইনিংস খেললেন তিনি। ২০৬ বলে শেষ পর্যন্ত ১০৯ রান করে আউট হন মুথুসামি।
শুধু তাই নয়, পেসার মার্কো ইয়ানসেন ক্যারিয়ার সেরা ৯৩ রানের ইনিংস খেলে প্রোটিয়াদের স্কোরকে বড় করতে ভূমিকা রাখেন। ৯৭ রানের জুটি গড়েন মুথুসামি ও ইয়ানসেন।
ভারতের মাটিতে কোনো দল ৪৮৯ বা তার বেশি রান করে কখনো টেস্ট হারেনি— দক্ষিণ আফ্রিকা সেই রেকর্ড স্পর্শ করে ভারতকে বড় বিপদে ফেলে দিয়েছে। ভারত যদি আর ঘুরে দাঁড়াতে না পারে, তবে ১২ বছরে একবারও না হারলেও ১২ মাসে দ্বিতীয়বার ঘরের মাঠে সিরিজ হারতে পারে তারা। গত এক বছরের মধ্যে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছে সিরিজ হেরেছিল তারা।
দ্বিতীয় দিনের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকার ৪৮৯ রানে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছিল। ৬ উইকেটে ২৪৭ রান থেকে মুথুসামি ও কাইল ভেরেইন জুটি দলকে সামলে তুললেও ধীরগতিতে খেলে তারা ৪০০ ছুঁতে পারবে কি না, সেটাই ছল বড় প্রশ্ন।
কিন্তু ইয়ানসেনের ৯১ বলে ৯৩ রানের বিধ্বংসী ইনিংস— যার মধ্যে ছিল ভারতের মাটিতে কোনো প্রতিপক্ষ ব্যাটারের এক ইনিংসে সর্বাধিক সাতটি ছক্কা’ই পুরো চিত্র পাল্টে দেয়। ইয়ানসেনকে সঙ্গ দিয়ে মুথুসামিও গতি বাড়ান এবং দুজন মিলে ১৭.৪ ওভারে ৯৭ রানের জুটি গড়েন। যা সিরিজের সর্বোচ্চ জুটি। মুথুসামি বছরজুড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার নবম সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে নাম লেখান।
এর আগে ভেরাইনি- মুথুসামি জুটি ভারতকে ভোগায়। প্রথমদিনের তীক্ষ্ণ আচরণকারী উইকেটের আদ্রতা শুকিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় দিনে ব্যাটিং আরও সহজ হয়। ২০৫ বলের ইনিংসে মাত্র ১৩টি ভুল শট খেলেন মুথুসামি।
দুপুরের পর ভেরেইনি আউট হয়ে গেলেও দক্ষিণ আফ্রিকা দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ৩৩৪ রানে। ভারত তখনো মনে করছিল ৪০০ এর কমে অলআউট করলে লড়াই সম্ভব; কিন্তু ইয়ানসেন এসে এক-হাত-না-দেখা ছক্কা দিয়ে শুরু করেন। জাদেজা ও পরে কুলদীপকে লক্ষ্য করে নিয়মিত বড় শট খেলতে থাকেন। তার আগ্রাসনে ভারতের বোলাররা দিশেহারা হয়ে পড়েন। মুথুসামিও ১৬০ বলে ৬৭ থেকে মাত্র ৪৭ বলে আরও ৪৩ রান যোগ করেন।
ইন্ডিয়ান পেসারদের বাউন্সার কৌশলও খুব একটা কাজে আসেনি। বিরতির পর সিরাজ মুথুসামিকে আউট করলেও ইয়ানসেনকে থামাতে পারেনি ভারত। সিরাজকে পরপর বাউন্ডারি-ছক্কা, কুলদীপকে লং-অনে তুলে ছক্কা—ইয়ানসেনের প্রতিটি শটেই আত্মবিশ্বাস ঝরে পড়ে।
শেষে কেশব মহারাজকে নিয়ে ২৭ রানের দশম উইকেট জুটি গড়েন ইয়ানসেন। একটি ভুলে কুলদীপের গুগলি অনুসরণ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে সাত রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন তিনি। কুলদীপ ৪ উইকেট পান; জাদেজা, বুমরাহ ও সিরাজ পান ২টি করে উইকেট।
১৫০ ওভারের বেশি ফিল্ডিং করা ভারতের জন্য ক্লান্তি ছিল স্পষ্ট। এরপর দিনের শেষ আধা ঘণ্টা আলো কমে আসায় ৬.১ ওভার খেলেই (৯ রান) খেলা বন্ধ হয়। গুয়াহাটির মাঠে নিয়মিতই দিনের শেষ অংশে আলো সংকটে চলে যাওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার সিরিজ ধরে রাখার সম্ভাবনা আরও বেড়ে গেল।
ভারতের সামনে এখন সিরিজ বাঁচাতে দীর্ঘ পথ— প্রথম ধাপ, বড় বিপদ এড়াতে প্রথম ইনিংসে টিকে থাকা।