ফিন, কোরি ও স্যাম। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তিনটি প্রশিক্ষিত কুকুর। ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের বিশেষায়িত কে-নাইন দলে বহু বছর কাজ করেছে তারা। বয়সের কারণে তাদেরও সময় হয়েছে অবসরের। দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত এই সঙ্গীদের অবসর জীবন আরামদায়ক ও নিরাপদ করতে নতুন মালিক খুঁজছে ডিএমপি।
সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে বিস্ফোরক এবং বিপজ্জনক বস্তু খুঁজে বের করার কাজে বিশেষ প্রশিক্ষণ রয়েছে এই ইউনিটের কুকুরদের। তিন কুকুরের প্রতিটিরই বয়স পেরিয়েছে আট বছর। ফিন ও কোরি ল্যাব্রাডর জাতের কুকুর। স্যাম জার্মান শেফার্ড। যুক্তরাজ্য থেকে আনা কুকুর তিনটির জন্য এই বিশেষায়িত ইউনিটে কাজ করার সময় ফুরিয়েছে।
নিলামে বিক্রি হবে কুকুর তিনটি
ডিএমপির সিটিটিসি ইউনিটের বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত কুকুরগুলো বিক্রি করার জন্য মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) একটি উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দরপত্র বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ব্যবসায়ী, নিলাম দরদাতা, ঠিকাদার এবং পশুপ্রেমীদের একই দিনে দুপুরে একটি উন্মুক্ত নিলামে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ফিন, কোরি ও স্যাম মিরপুর-১৪ পুলিশ লাইন্সে অবস্থিত পুলিশ ‘কে-নাইন’ টিম সদর দপ্তরে উন্মুক্ত নিলামের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
কুকর তিনটির দক্ষতা
নিলামে তোলা তিনটি কুকুর সম্পর্কে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে ওরা বাংলাদেশ পুলিশের সিটিটিসি গ্রুপের হয়ে নারকোটিক (মাদকদ্রব্য) ও এক্সপ্লোসিভ (বিস্ফোরকদ্রব্য) তল্লাশির মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে। বিশেষ করে বইমেলা, সভা–সমাবেশ, এয়ারপোর্টে কার্গো চেকিংয়ের মতো দায়িত্ব সন্তোষজনকভাবে সামলাতে পারে এই জাতের কুকুরগুলো।
তিনটির মধ্যে ফিন পুরুষ ল্যাব্রাডর কুকুর। কোরি স্ত্রী ল্যাব্রাডর। আর স্যাম পুরুষ জার্মান শেফার্ড। তিনটির বয়সই আট বছর। এত বয়সের কারণে তারা আর বিস্ফোরক শনাক্ত করা, অনুসন্ধান অভিযান বা টহল দায়িত্বের মতো কঠিন কাজ করতে পারছে না। তবে কর্মকর্তাদের ভাষ্য, তাদের স্বাস্থ্য এখনো ভালো আছে এবং সহজেই পোষা প্রাণী হিসেবে স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারবে।
২০১৬ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বিস্ফোরক ও বিপজ্জনক বস্তু শনাক্ত করে জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আরও ভালোভাবে লড়াই করার জন্য একটি বিশেষায়িত কে-নাইন ইউনিট গঠন করে, যা ব্যাপকভাবে ‘K-9’ নামে পরিচিত। ১০টি কুকুরের মধ্যে ছয়টি জার্মান শেফার্ড ও চারটি ল্যাব্রাডর রিট্রিভার যুক্তরাজ্য থেকে কেনা হয়। বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত কুকুরগুলো সিটিটিসি বিভাগের স্পেশাল অ্যাকশন ইউনিটের সদস্য হিসেবে কাজ করতো।
বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত কুকুরের বিষয়ে ডিএমপির পাঁচজন পুলিশ কর্মকর্তা যুক্তরাজ্যে প্রশিক্ষণ নেন। পরবর্তীসময়ে কুকুরদের প্রশিক্ষণ দেন। এই পাঁচজন কর্মকর্তা কে-নাইন স্কোয়াড পরিচালনার প্রশিক্ষণ দেন আরও ২৫ জন পুলিশ সদস্যকে।
সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল হাসান বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যবহৃত কুকুরদের নির্দিষ্ট সেবাকাল থাকে। পুলিশ সদর দপ্তরের অনুমতি নিয়ে তিনটি কুকুর নিলামে তোলা হচ্ছে। আমরা চাই, তারা যেন জীবনের বাকি সময় নিরাপদ ও স্নেহময় পরিবেশে কাটাতে পারে। নিলাম পশু কল্যাণ আইনের নিয়ম মেনে করা হচ্ছে।’
নিলাম কাল, যারা অংশ নিতে পারবেন
জানতে চাইলে কে-নাইন স্কোয়াডের পুলিশ পরিদর্শক ফখরুল আলম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ জনের বেশি মানুষ যোগাযোগ করেছেন। স্পটে এসে একজন নিলামকারী বা তার মনোনীত প্রতিনিধি এক হাজার টাকা জমা দিয়ে নিলামে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। নিলাম চলাকালীন যিনি সর্বোচ্চ দাম বলবেন তিনি কুকুরের মালিক হতে পারবেন।’
যে কুকুরগুলো নিলামে তোলা হচ্ছে তাদের খাবার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্রয়লার মুরগির মাংস এবং চাল-সবজি দিয়ে খিচুড়ি রান্না খায় তারা। দিনে একবেলা খাওয়ানো হয়।’
নিলামে অংশ নিতে ইচ্ছুকদের নগদ এক হাজার টাকা জমা দিয়ে ডাকে অংশ নিতে হবে। চাইলে আগে যোগাযোগ করে কুকুরগুলো দেখেও আসা যাবে। সে ক্ষেত্রে যোগাযোগ করতে হবে উপ-পুলিশ কমিশনারের (স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ) সঙ্গে। প্রতিটি কুকুরের জন্য আলাদাভাবে ডাক অনুষ্ঠিত হবে। তিনটি কুকুর বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত নিলাম চলবে। নিলামের পর তিন দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধ করে কুকুর বুঝে নিতে হবে। বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাবে এই নম্বরে ফোন করে- ০১৩২০০৪৬৩৫৬।