বার্ষিক তীর্থোৎসব উপলক্ষে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ভারত সীমান্তঘেঁষা পোড়াগাঁও ইউনিয়নের পাহাড়ঘেরা বারোমারী সাধু লিওর খ্রিস্টধর্মপল্লী এলাকা মোমবাতির আলোয় আলোকিত হয়ে উঠে। হাজারো খ্রিস্টভক্তরা তাদের পাপ মোচনে মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোর মিছিলে অংশ গ্রহন করেন। শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বেলা সাড়ে বারোটায় সমাপ্তি ঘটে দুই দিনব্যাপী ধর্মীয় ফাতেমা রাণীর ওই তীর্থোৎসবের।
এরআগে বৃহস্পতিবার বিকেলে ‘আশার তীর্থযাত্রী, ফাতেমা রাণী মা মারিয়া’ এই মূল সুরের উপর ভিত্তি করে প্রতি বছরের মতো শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী এই বার্ষিক তীর্থোৎসব।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পাপ স্বীকারের মধ্য দিয়ে দেশের রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের অন্যতম ধর্মীয় এই তীর্থোৎসব আরম্ভ হয়। দুই দিনব্যাপী এই উৎসবে প্রায় ৪০ হাজার দেশি-বিদেশি খ্রিস্টভক্তরা অংশ গ্রহন করেন। তাদের আগমনে তীর্থস্থান জুড়ে তৈরি হয় খ্রিস্টানদের এক মিলন মেলা। উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। এ উপলক্ষে তীর্থ এলাকা সাজানো হয় রঙিন আলোকসজ্জায়। আর নিরাপত্তা জোরদারে নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

আয়োজক কমিটি সুত্র জানায়, বিগত ১৯৯৮ সালে স্থাপিত এই তীর্থস্থানে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ভিন্ন ভিন্ন মুল সুরে দুই দিনব্যাপী নিয়মিতভাবে পালিত হয় তীর্থযাত্রা। শুধু শেরপুর জেলা নয় দেশের বিভিন্ন জেলা এবং প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেও হাজারো রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টান পুণ্যার্থীরা অংশ নেন এই তীর্থযাত্রায়। এখানে স্থাপন করা হয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ ৫৫ ফুট উচু মা মারয়িার মুর্তি। আর এর সামনে রয়েছে বিশাল প্যান্ডেল বা সামিয়ানা। সেখানে রাতদিন প্রার্থনা করেন খ্রিস্টভক্তরা। এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হলো আলোক শোভাযাত্রা বা আলোর মিছিল। হাজার হাজার খ্রিস্টভক্তদের অংশ গ্রহনে রাত আটটার সময় অনুষ্ঠিত হয় ওই আলোর মিছিল। প্রত্যেকে তাদের পাপ মোচনে মোমবাতি জ্বালিয়ে বর্ণিল আলোক শোভাযাত্রায় যোগদান করেন। তখন পুরো পাহাড়ি এলাকা মোমবাতির আলোয় আলোকিত হয়ে উঠে। এছাড়া পাপ স্বীকার, জপমালার প্রার্থনা ও নিশি জাগরণ অনুষ্ঠিত হয়। এমনকি পাশের স্কুল মাঠে বসে এক বিরাট মেলা। সেখানে বাহারী জিনিসপত্র ক্রয় করেন উৎসবে আগত ব্যক্তি ও স্থানীয় ক্রেতারা।
শুক্রবার সকালে জীবন্ত ক্রুশের পথ ও পরে মহা খ্রিস্টযাগ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাড়ে বারোটায় বার্ষিক তীর্থউৎসবের সমাপ্তি ঘটে। এ বারের তীর্থোৎসবে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভ্যাটিকানের এম্বাসেডর ও পোপের বিশেষ প্রতিনিধি আর্চবিশপ কেভিন রেনডাল। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ খ্রিস্টধর্ম প্রদেশের বিশপ পনেন পৌল কুবি সিএসসি।
আয়োজক কমিটির সমন্বয়ক ও বারোমারী সাধু লিওর গীর্জার পালপুরোহিত রেভারেন্ড ফাদার তরুণ বনোয়ারী জানান, এ বারের তীর্থ যাত্রায় প্রায় ৪০ হাজার দেশি-বিদেশি খ্রিস্টভক্তরা অংশ গ্রহন করেন। আর উৎসব মুখর পরিবেশে তীর্থোৎসব সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে কৃতজ্ঞতা জানান।
এদিকে, তীর্থোৎসবে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ র্যাব, বিজিবি, আনসার, ভিডিবি ও স্থানীয় প্রশাসন নিবিড়ভাবে দায়িত্ব পালন করেন। আইন শৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ নজরদারি ছিল পুরো এলাকাজুড়ে।
ময়মনসিংহ খ্রিস্টধর্ম প্রদেশের ধর্মপাল বিশপ পনেন পৌল কুবি সিএসসি জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারের বার্ষিক তীর্থোৎসব ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সাথে সমাপ্ত হয়েছে। ধর্মীয় অনুপ্রেরণায় এখানে হাজারো খ্রিস্টভক্তরা অংশ গ্রহন করেন। এতে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ছাড়াও দেশের মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, শুক্রবার দুপুরে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক তীর্থোৎসব শান্তিপুর্ণভাবে সমাপ্ত হয়েছে। এই উৎসবে নির্বিঘেœ অংশ গ্রহন করে খ্রিস্টভক্তরা তাদের বার্ষিক তীর্থোৎসব সম্পন্ন করতে পেরেছেন।