
দীর্ঘ ১৭ বছরের আইনি লড়াই শেষে নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি ফিরে পেলেন কুড়িগ্রাম পৌরসভার মুন্সিপাড়া এলাকার মৃত আবু ইউসুফ আলীর সহধর্মিণী তহমিনা বেগম। আদালতের নির্দেশে শনিবার (১১ অক্টোবর ২০২৫) দুপুরে কুড়িগ্রাম শহরতলীর হাটিরপাড় এলাকায় পুলিশের উপস্থিতিতে ঢোল পিটিয়ে তার বেদখল হওয়া জমি উদ্ধার করা হয়।
তহমিনা বেগমের বাবার বাড়ি হাটিরপাড় এলাকায়। বহু বছর আগে তার ভাই রওশন আলী ওই জমি দখল করে রাখেন বলে অভিযোগ। জমি ফেরত না পেয়ে তিনি আদালতের শরণাপন্ন হন। মোকদ্দমা নং ১৫/২৫ অনুযায়ী আদালত তহমিনার পক্ষে রায় প্রদান করেন।
এরপর জেলা সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালত দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের অর্ডার ২১, রুল ৩৫ অনুযায়ী জমি হস্তান্তরের পরোয়ানা জারি করেন। আদালতের নির্দেশে নাজির গোলাম রহমানের নেতৃত্বে, পুলিশ ও স্থানীয় গণ্যমান্যদের উপস্থিতিতে ০.০৩৫ একর জমি দখল কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
কার্যক্রম চলাকালে বেদখল জমির উপর থাকা ঘরবাড়ি, গাছপালা অপসারণ করে লাল নিশান টাঙিয়ে টিনের বেড়া দেওয়া হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিভিল কোর্ট কমিশনার দবির উদ্দিন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, স্থানীয় জনগণ ও সাংবাদিকবৃন্দ।
ঘটনাস্থলে উৎসুক জনতার ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। স্থানীয়দের অনেকে বলেন— এমন ন্যায়বিচার এখন বিরল। আদালতের আদেশে ঢোল পিটিয়ে জমি হস্তান্তর আইন ও ন্যায়ের প্রতি মানুষের আস্থা আরও বাড়িয়েছে।
দীর্ঘ ১৭ বছরের সংগ্রামের পর নিজের সম্পত্তি ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত তহমিনা বেগম বলেন— এই জমি আমার বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি। বহু বছর অন্যায়ভাবে দখল ছিল। আমি কখনও হাল ছাড়িনি, কারণ আমি বিশ্বাস করেছি—আইনের পথেই ন্যায়বিচার পাওয়া যায়। আদালত আমার অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছেন, এজন্য আমি কৃতজ্ঞ।
তিনি আরও বলেন— আইনের প্রতি শ্রদ্ধা থাকলে মানুষ কখনও বঞ্চিত হয় না। আদালতের এই রায় শুধু আমার নয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের জয়ের প্রতীক।
তহমিনার বড় ছেলে মামুনুর রশিদ মামুন বলেন— আমাদের পরিবারের সবার ধৈর্য, বিশ্বাস আর দীর্ঘ অপেক্ষার ফল আজ আমরা হাতে পেয়েছি। এটা আমাদের জন্য গর্বের ও আবেগের মুহূর্ত।
এদিকে, বিবাদীপক্ষের দাবি— জমি দখলের সময় তাদের বাড়িতে রাখা শুকনো বাঁশ ও খড়ি লুটপাট করা হয়েছে। তবে এই অভিযোগের বিষয়ে আদালতের নাজির গোলাম রহমান বলেন— আমার নেতৃত্বে পুলিশ, সিভিল কোর্ট কমিশনার, স্থানীয় মানুষ ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। সম্পূর্ণ আইনসম্মত, স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণভাবে জমি হস্তান্তর করা হয়েছে। কোনো লুটপাট বা অনিয়মের প্রশ্নই আসে না। এত মানুষের উপস্থিতিতে এমন অভিযোগ টেকসই নয়।
সিভিল কোর্ট কমিশনার দবির উদ্দিন বলেন— আদালতের আদেশ অনুযায়ী সবার উপস্থিতিতে বেদখল জমি হস্তান্তর করা হয়েছে। কার্যক্রমের প্রতিটি ধাপ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। এতে আইন ও প্রশাসনের প্রতি মানুষের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হবে।
স্থানীয়দের মতে,তহমিনা বেগমের এই লড়াই কেবল একটি পরিবারের সম্পত্তি ফিরে পাওয়া নয়—এটি এক নারীর দৃঢ়তা, ন্যায়বিচারের প্রতি আস্থা এবং আইনের বিজয়ের গল্প।