
দেশের শেয়ারবাজারে ফের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ভালো-মন্দ সব ধরনের কোম্পানির শেয়ার দামের ঢালাও দরপতন কমিয়ে দিয়েছে লেনদেনের পরিমাণও।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে মূল্য সূচকেরও পতন হয়েছে।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ফলে এ বাজারটিতেও মূল্য সূচক কমেছে। এর মাধ্যমে টানা দুই কার্যদিবস এবং শেষ আট কার্যদিবসের মধ্যে পাঁচ কার্যদিবস দরপতন হলো।
গত সপ্তাহের মঙ্গল ও বুধবার দেশের শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন হয়। তবে বৃহস্পতিবার মূল্য সূচকের কিছুটা উত্থান হয়েছিল। অবশ্য চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার আবারও ঢালাও দরপতন হয়। সোমবার দাম কমার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান থাকলেও অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ার দাম বাড়ায় মূল্য সূচক কিছুটা বাড়ে। পরদিন মঙ্গলবার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান। অবশ্য ওই দিন এক মাস পর বাজারে লেনদেন ৬০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে আসে। পরের কার্যদিবস বুধবার আবার শেয়ারবাজারে দরপতন হয়।
এ পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখীতার দেখা মিলে। উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে প্রথম তিন ঘণ্টা সূচক ঊর্ধ্বমুখীই থাকে। কিন্তু শেষ ঘণ্টার লেনদেনে ঢালাও দরপতন হয়। এতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমার পাশাপাশি সবকটি মূল্য সূচক কমেই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৪৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৩০৩টির। আর ৫০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এদিকে ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২৮টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১৬৩টির দাম কমেছে এবং ২৮টির অপরিবর্তিত রয়েছে। মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া সাতটি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ৭২টির কমেছে এবং তিনটির অপরিবর্তিত আছে।
বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে ‘পচা’ জেড গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে নয়টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ৬৮টির এবং ১৯টির অপরিবর্তিত রয়েছে। আর তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে একটির দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১৯টির কমেছে এবং ১৬টির অপরিবর্তিত রয়েছে।
ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৪২ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৪৪৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৯ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১০৭ পয়েন্টে নেমে গেছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৭৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
মূল্য সূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬৫৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭৩৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এ হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৮২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
এ লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে খান ব্রদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩০ কোটি ২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সামিট এলায়েন্স পোর্টের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকার। ১৯ কোটি ৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে টেকনো ড্রাগস।
এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক, ওরিয়ন ইনফিউশন, এনভয় টেক্সটাইল, রবি, সোনালী পেপার, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ ও ইউসিবি ব্যাংক।
অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই কমেছে ৭৮ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০৭ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ১২৭টির এবং ৩২টির অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২২ কোটি ৪ লাখ টাকা।