কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস শিক্ষার মান উন্নয়ন ও প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের শিশুদের শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জেলার মোট ৩৮৮টি চরাঞ্চলের মধ্যে ১৫৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। জেলার মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১ হাজার ২৪১টি।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সহজ করতে ইতোমধ্যে নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২টি সরকারি ও ২টি বেসরকারি নৌকা চিলমারীর ঘাট, নয়ারহাট ঘাট ও অষ্টমীর চর ঘাটে নিয়মিতভাবে চলাচল করছে। এতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েই উপকৃত হচ্ছেন।
চর গোড়াইপিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফারহানা বলেন, আগে নৌকা না থাকায় নদী পার হতে অনেক কষ্ট হতো। এখন বরাদ্দকৃত নৌকায় সহজে যাতায়াত করতে পারছি। এতে ঝুঁকি কমেছে এবং সময়ও বাঁচছে।
চলতি বছরে নদী ভাঙনে জেলার উলিপুর, চর রাজিবপুর ও নয়ারহাট এলাকার ৭টি বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। তারপরও শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়নি, বিকল্পভাবে পড়াশোনা অব্যাহত রয়েছে।
কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) নুসরাত সুলতানা চরাঞ্চলের শিক্ষকদের জন্য বিশেষ ভাতার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। এ উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষকরাও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
রৌমারী উপজেলার দক্ষিণ চর খেদাইমারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছাঃ খাদিজা খাতুন বলেন, প্রতিদিন নৌকায় আসতে হয়, কষ্টও আছে। তবে যদি চরাঞ্চলের শিক্ষকদের জন্য বিশেষ ভাতা বাস্তবায়িত হয়, তাহলে আমাদের আরও প্রেরণা বাড়বে এবং দায়িত্ব পালনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করব।
অন্যদিকে খেদাইমারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, “চরাঞ্চলে কাজ করার পরিবেশ অনেক ভিন্ন। শিক্ষকদের জন্য বিশেষ ভাতা চালু হলে আরও বেশি শিক্ষক চরাঞ্চলে আগ্রহী হবেন। এতে করে শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করা সহজ হবে।
শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়াতে সারাদেশের মতো কুড়িগ্রামেও চালু হতে যাচ্ছে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি। দেশের ১৫০টি উপজেলার মধ্যে কুড়িগ্রামের ৯টির মধ্যে ৭টি উপজেলায় এ কর্মসূচি চালু হবে। পর্যায়ক্রমে বাকি ২টি উপজেলাও এর আওতায় আসবে।
এ কর্মসূচির আওতায় জেলার ৮২৪টি বিদ্যালয়ের প্রায় ১২ হাজার ৮৫১ জন শিক্ষার্থী স্কুল ফিডিং পাবে।
থেতরাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারহানা বলেন, স্কুলে খাবার পাওয়া যাবে বলে আমরা আরও উৎসাহ নিয়ে পড়াশোনা করব।
তার অভিভাবক বলেন, সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে এখন আরও আগ্রহী হচ্ছি। কারণ সরকার থেকে খাবারের ব্যবস্থা হবে।
দক্ষিণ চর খেদাইমারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভীর বলেন, আমরা জানি স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি খাবারও দেওয়া হবে। তাই প্রতিদিন স্কুলে যেতে আরও ভালো লাগছে।
এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার রায় চৌধুরী বলেন,শিক্ষার আলো প্রতিটি শিশুর কাছে পৌঁছে দিতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি। চরাঞ্চলের কষ্ট ও ঝুঁকি সত্ত্বেও শিক্ষকরা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। স্কুল ফিডিং কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ আরও বাড়বে এবং শিক্ষকদের জন্য বিশেষ ভাতার প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে চরাঞ্চলে শিক্ষার মান আরও উন্নত হবে।