বুধবার ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯ ভাদ্র ১৪৩২
 
শিরোনাম:


জাতীয়
ফেরারি আসামিদের ভোটে অযোগ্য রাখার প্রস্তাব ইসির আরপিও সংশোধনীতে
প্রকাশ: বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৪:৪৭ পিএম   (ভিজিট : ১৪)
আদালত ঘোষিত ফেরারি আসামিকে ভোটে অযোগ্য রাখার সুপারিশ করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অনলাইনেও তার মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। এ প্রস্তাব অনুমোদন পেলে ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে পতিত আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।

আজ বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মোহাম্মদ সানাউল্লাহ বলেন, আরপিও (সংশোধন) খসড়া অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালার খসড়া ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। 

তিনি আরও জানান, সংশোধিত আরপিওর প্রস্তাবে শুধু একক প্রার্থিতায় ‘না’ ভোট, অনিয়ম হলে পুরো আসনের ভোট বাতিল, জোটে থাকলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করাসহ অনেকগুলো সংশোধনী আনা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় বিদ্যমান বাহিনীর পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী বলতে সেনা, নৌ, বিমান ও কোস্টগার্ডকে যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া এবার প্রার্থীদের জামানত ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাবও করা হয়েছে।

এর আগে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য আরপিও এবং আচরণবিধি সংশোধনের অনুমোদন দিয়ে রেখেছে কমিশন। তিনি বলেন, ‘‘আরপিও সংশোধন প্রস্তাব আমরা সই করে ফেলেছি। বেশ কিছু প্রস্তাবের মধ্যে সমভোট পেলে লটারি প্রথা বাদ দিয়ে আবার নির্বাচন, বিনা ভোটের বিধান বাদ দিয়ে ‘না’ ভোট যুক্ত করা, অনিয়ম হলে পুরো আসনে ভোট বাতিল, ঋণ খেলাপি হলে ভোটের পরে ব্যবস্থা নেওয়ার মত ইসির ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে।”

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অনেকগুলো বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, মোটামুটি সবগুলোই বহাল রয়েছে। ৪০-৪৪টার মতো সংশোধনী প্রস্তাব রয়েছে। 

আরপিওর সংশোধন প্রস্তাবে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং হলে সরকারের অনুমোদনের জন্য তা উপদেষ্টা পরিষদের সভায় উত্থাপন হবে। সেই ধাপ পেরিয়ে রাষ্ট্রপতি সংশোধনীর অধ্যাদেশ জারি করবেন। অপরদিকে মন্ত্রণালয়ের সায় পাওয়ার পর আচরণবিধি গেজেট আকারে প্রকাশ করবে ইসি।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনি আইন সংস্কার নিয়ে মাসখানেক ধরে দফায় দফায় পর্যালোচনা করে ইসি। এরপর গত ১১ আগস্ট ইসির নবম সভায় আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব চূড়ান্ত করে ইসি। যাতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মতামতের পর সার্বিক প্রস্তাব আমলে নিয়ে এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন ইসি আরপিও সংশোধনের কাজ করে।

৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ সাবেক মন্ত্রী এমপি ও নেতারা দেশ ছেড়েছেন। অনেকে পালিয়ে আছেন। এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণহত্যার অভিযোগে তাদের বিচার চলছে। অনেকের পলাতক ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এমন প্রেক্ষাপটে ইসির আরপিও সংশোধন প্রস্তাবে আদালত ঘোষিত ফেরারি আসামিকে ভোটে অযোগ্য রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া অনলাইনে রাখলে সুযোগ বন্ধ রাখায় আওয়ামী লীগের এইসব নেতা মন্ত্রী এমপিরা আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অযোগ্য বিবেচিত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। 

এর আগে সংস্কার কমিশন এমন বিধান রাখার প্রস্তাব করেছিল। ইসি এর বিরোধিতা করে মার্চে ঐকমত্য কমিশনে চিঠি পাঠিয়ে বলেছিল, এমন বিধান করা হলে তা অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হতে পারে। তবে এখন সেই প্রস্তাব আরপিওতে যুক্ত করার কথা বলেছে ইসি।

‘না ভোটের’ বিধান
নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, “কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলে সেখানেই ‘না’ ভোট হবে। একক প্রার্থী হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হয়ে যেত আগে, আমরা বলছি এখন ‘না’ ভোটের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।”

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২০১৪ সালে ১৫৩ আসনে নির্বাচনের পর এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে বর্তমান ইসি।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকারের বিষয়ে অনলাইনে নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টিও আরপিও সংশোধনীতে যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে ইসি।

আরও যত সংশোধনের প্রস্তাব
অন্য প্রস্তাবের মধ্যে প্রার্থী হতে কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের সুপারিশ রাখা হয়নি বলে তুলে ধরেন কমিশনার সানাউল্লাহ। ইসির প্রস্তাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় বিদ্যমান বাহিনীর পাশাপাশি সশস্ত্রবাহিনী (সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী) যুক্ত করাসহ কোস্টগার্ডকে রাখা হয়েছে। ইভিএম সংক্রান্ত যাবতীয় প্রভিশন বিলুপ্ত করা হয়েছে। প্রার্থীদের জামানত ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা। নির্বাচন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের অবহেলাজনিত যে শাস্তিগুলো আছে সেগুলো সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এটা তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে ইসিকে জানাতে হবে। নির্বাচন কমিশনের অনুমতিপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক এবং সংবাদকর্মীদের কেন্দ্রে প্রবেশের বিধান যুক্ত করা হয়েছে আরপিওতে।

ফলাফল স্থগিত ও বাতিল নিয়ে যে বিধানগুলো ছিল যেখানে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল বা ফলাফল বাতিল করার যে সক্ষমতা সেটাকে সীমিত করা হয়েছিল। এটি আবার পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। অর্থাৎ (অনিয়ম হলে) নির্বাচন কমিশন অবস্থা বুঝে নির্বাচন স্থগিত করা এক বা একাধিক বা সমস্ত আসনের একইভাবে ফলাফল এক বা একাধিক বা সমস্ত আসনের ফলাফল বাতিল করতে পারবে।

আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য শাস্তি কার্যকরের বিধান সেটা সন্নিবেশ করা হয়েছে। অর্থাৎ আরপিওতে এটার বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংবাদমাধ্যম কর্মীরা ভোট গণনার সময় উপস্থিত থাকতে পারবে। তবে শর্ত- গণনা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যারা থাকতে চাইবেন তাদেরকে পুরাটা সময়ব্যাপী থাকতে হবে। মাঝপথে বের হয়ে যাওয়া যাবে না।

সমভোট প্রাপ্তদের জন্য আগে লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত ঘোষণার বিধান বাদ দিয়ে পুননির্বাচনের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। যদি সমান হয়ে যায় তাহলে লটারির মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচনের যে বিধান ছিল কমিশন সেটা থেকে সরে এসে বলছে এক্ষেত্রে পুনঃনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

বিলবোর্ডে শুধু যেগুলো ডিজিটাল বিলবোর্ড সেগুলোতে আলোর ব্যবহার করা যাবে। বিদ্যুতের ব্যবহার করা যাবে। তাছাড়া আলোকসজ্জার উপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে।

প্রার্থীদের ব্যয়ের নিরীক্ষার (অডিট) ব্যাপারটাকে আরো সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং আরেকটু একনিষ্ঠভাবে দেখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এই ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন যেগুলো ব্যত্যয় মনে করা হবে সেগুলোকেই অডিট করবে।

ইতোপূর্বে রাজনৈতিক দলগুলো ব্যক্তি পর্যায় থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত এবং প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ৫০ লাখ পর্যন্ত অনুদান বা ডোনেশন নিতে পারত। এটাকে উভয়ক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এই লেনদেন হতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আয়কর রিটার্নে এটা দেখাতে হবে।

নির্বাচন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন বিশেষ করে পুলিশ এবং প্রশাসনের যাদের বদলি তপশিল ঘোষণা থেকে শুরু করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ১৫ দিন পর পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে করতে হয়। সেখানে সংশ্লিষ্ট রেঞ্জের ডিআইজিদের অন্তর্ভুক্তি ছিল না, সেটা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-এআই ইত্যাদি ব্যবহার করে যেকোনো ধরনের মিথ্যাচার বা অপবাদ ছড়ানো ইত্যাদি ব্যাপারে প্রার্থী, দল, সংস্থাসহ সবার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান করা হয়েছে।

কোনো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দরখাস্ত যদি নাকচ হয় তাহলে ১৫ দিনের মধ্যে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করেই নির্বাচন কমিশন তাদেরকে চিঠি দেবে। অতীতে শুধু নাকচ করে চিঠি দেওয়া হত এবং এই চিঠিটা আদালতে তারা উপস্থাপন করতে পারতেন এবং আদালতে এই কারণগুলো যথাযথভাবে প্রদর্শিত না হওয়ার কারণে অনেকে আবার নিবন্ধন ফেরত পেতেন। ইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে-এতে প্রতিটি কারণ যথাযথভাবে তুলে ধরা হবে।

কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম স্থগিত হলে বা নিষিদ্ধ হলে, নিবন্ধন স্থগিত করার বিষয়টি অস্পষ্ট ছিল। এটা স্পষ্ট করে আরপিওতে যোগ করা হয়েছে।

হলফনামায় যদি মিথ্যা তথ্য দেয় তাহলে সেটার ব্যাপারে তদন্ত করে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আরো সুনির্দিষ্টভাবে আরপিওতে সন্নিবেশ করা হয়েছে। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও (৫ বছর মেয়াদে) এই সময়কালে যদি হলফনামায় কোনো ধরনের অত্যুক্তি, বিচ্যুতি, মিথ্যা তথ্য যদি হয় তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনে তার প্রার্থীতা বাতিল করা হবে এবং নির্বাচিত এমপি হলেও আইনের আওতায় আসতে পারেন। এবং তার পদ চলে যেতে পারে। তবে এই পাঁচ বছরের পরে তা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারের মধ্যে থাকবে না।

এছাড়া প্রিজাইডিং অফিসারদের ক্ষমতা বাড়ানো, ভোটে প্রভাব খাটালে শাস্তিসহ অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে একগুচ্ছ সুপারিশ রয়েছে।

তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সুষ্ঠু ভোটে ‘সার্টিফিকেট’ দেওয়া, ইসির জবাবদিহিতা সংক্রান্ত কিছু সংস্কার সুপারিশ ইসির প্রস্তাবে থাকছে না।







আরও খবর


 সর্বশেষ সংবাদ

বিপ্লবের পর দ্রুত নির্বাচন না হলে গৃহযুদ্ধ হয়: আমীর খসরু
নির্বাচনের আগে আরও দু-একটা সরকার দেখা যেতে পারে: ড. আসাদুজ্জামান রিপন
প্রার্থিতা ফেরত ও ডাকসু নির্বাচন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের জুলিয়াস সিজারের
বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস ৩য় টি-২০ ম্যাচ বৃষ্টিতে বন্ধ
ডাকসু নির্বাচনে বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে: কাদের
আরো খবর ⇒


 সর্বাধিক পঠিত

খুলনা রূপসা সেতুতে সাংবাদিক বুলুর লাশ উদ্ধার
নতুন রূপ কুসুম
হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত ডাকসু নির্বাচন
প্রবাসে এক টুকরো বাংলাদেশ : ফ্রাঙ্কফুর্টে গাজীপুর জেলা অ্যাসোসিয়েশনের সংবর্ধনা
লিগস কাপের ফাইনালে হারল মায়ামি
প্রকাশক: এম এন এইচ বুলু
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মাহফুজুর রহমান রিমন  |   উপদেষ্টা সম্পাদক : রাজু আলীম  
বিএনএস সংবাদ প্রতিদিন লি. এর পক্ষে প্রকাশক এম এন এইচ বুলু কর্তৃক ৪০ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বুলু ওশেন টাওয়ার, (১০তলা), বনানী, ঢাকা ১২১৩ থেকে প্রকাশিত ও শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ফোন:০২৯৮২০০১৯-২০ ফ্যাক্স: ০২-৯৮২০০১৬ ই-মেইল: spnewsdesh@gmail.com