প্রকাশ: রবিবার, ৯ মে, ২০২১, ৮:৩০ PM আপডেট: ১০.০৫.২০২১ ১২:০৬ AM
৫ ই মে ছিলো নভেরা আহমেদের পশ্চম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলাদেশের ভাস্কর্য শিল্পের এই স্বনামধন্য শিল্পি অনেক অভিমান করে এ দেশে দির্ঘদিন বাস করলেও আমরা অনেকেই ব্যাপারটা জানতামনা। তাঁর মৃত্যুর পর ও খবরটা গুটিকতক মানূষের মধ্যেই সিমাবদ্ধ ছিলো। বাংলাদেশে ইতিহাসের সংগে ওনার সম্পৃত্বতা কতোটুকু তার মূল্যায়ন করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়, কিন্তু বাংলাদেশের জাতীয় শহীদ মিনারে নক্সা তৈরীর সেই ঐতিহাসিক দায়ীত্ব পালনের কথা উঠলে অনেকেরই আশ্চর্য হবার কারণ রয়েছে। হাঁ, ইনিই সেই শিল্পি যিনি আমাদের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে ঐ স্মৃতিশোধের স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং তা বাস্তবায়ন করেছিলেন।
জন্ম ১৯৩৯ সালের ২৯ শে মার্চ এবং মৃত্যু ৬ ই মে ২০১৫ সাল।শিক্ষা জীবনে যুক্তরাজ্য, ইতালি, অস্ট্রীয়ায় অবস্থান করেন এবং ১৯৭১ সাল থেকে ফ্রান্সে স্থায়ীভাবে বসবাস আরম্ভ করেন। অতি অভিমানী নভেরা আর কোন দিন বাংলাদেশে ফিরে যাননি। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার ওনাকে সন্মান স্বরূপ ২১ শে পদকে ভূষিত করলেও তিনি এতে কোন আগ্রহ দেখাননি।
প্যারিস থেকে প্রায় দুশ কিলোমিটার দুরে এক গ্রামে তিনি তার ফরাসি স্বামীর সংগে বাস করতেন, ওখানকার পারিবারিক এবং সামাজিক জীবন নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে।
ধারনা করা হচ্ছে ওখানে উনি একটা বিশেষ সম্প্রদায়ের সংঙ্গে ছিলেন, যারা কখনো চায়নি নভেরা আহমেদ তার দেশের সংঙ্গে বা ফ্রান্সে বাংলাদেশী কমুনিটির যোগাযোগ রাখুক।
মুসলমান ধর্মাবলম্বি হলেও তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর মরদেহ একটা কাঠের বাক্সের মধ্যে করে সমাহিত করা হয়, যার উপরে খঁচিত ছিলো মুসলমান, খৃস্টান এবং অন্যান্য কিছু ধর্মীয় চিন্হ। এই দির্ঘদিন এরকম একটা বন্দী জীবন সবার চোখের আড়ালে ঘটলেও মুস্টিমেয় দু চারজন যারা ব্যপারটা জানতেন তারা ও মুখ খোলেনি, এটাই আশ্চর্য। আজ ভাবতে গেলেও আমার অনেক মনোকষ্ট হয়।শুধু না জানার কারণে হয়তো বাংলাদেশের এই ঐতিহাসিক ব্যাক্তিত্ব্যকে আমরা দেখতে ও পারিনি এবং মুক্ত করতে পারিনি।
১লা জুন ২০১৫ সালে শিল্পি ফকির আলমগীরের প্যারিস ভ্রমনের সময় আমরা নভেরা আহমেদকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ওনার গ্রামে গিয়ছিলাম, ওনার স্বামী প্রথমে একটু ইতস্তত করলেও পরে আমাদের ওনার বাড়ীতে ঢুকার অনুমতি দেন।
আমরা অনেক চেস্টা করেই সক্ষম হয়ছিলাম কিছু তথ্য নেয়ার এবং আমাদের শিল্পির কিছু কাজ দেখার। আবেগ অনুভুতির মধ্যেই আমরা তাঁর কবরে অর্পন করেছিলাম আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ।
অনেক ভরাক্রান্ত হৃদয়ে প্যারিস ফিরার পথে ভাবলাম আমরাতো এদেশেই ছিলাম, আমাদের কি কিছুই করার ছিলোনা? শুধু না জানার কারণে আমরা হারালাম একটি ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্যকে আর জাতি হারালো তার এক অভিমানী সন্তানকে।
বিনম্র শ্রদ্ধা নভেরা আহমেদ, আত্মার শাান্তি কামনা করছি।