
রাজধানীর ফরচুন শপিং মলের শম্পা জুয়েলার্স থেকে ৫০০ স্বর্ণালংকার চুরির চাঞ্চল্যকর ঘটনায় রহস্য উদঘাটন করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। দুর্ধর্ষ এই চুরির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ চোরাই স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিবি।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টুরোড ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।
গ্রেফতারকৃতরা হলো শাহিন মাতব্বর ওরফে শাহিন (৪৬), নুরুল ইসলাম (৩৩), উত্তম চন্দ্র সূর (৪৯) ও তার অনিতা রায় (৩১)।
অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) শফিকুল ইসলাম বলেন, ফরচুন মার্কেটের দোতলায় শম্পা জুয়েলার্সে গত ৮ অক্টোবর দিবাগত রাতে চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রমনা থানায় মামলা দায়েরের পর আমরা ছায়া তদন্ত শুরু করি। সিসিটিভি ফুটেজ, তথ্য-প্রযুক্তি ও মাঠ তথ্যের ভিত্তিতে তিন দিনের টানা অভিযানে চোরচক্রকে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, অভিযুক্তরা প্রায় তিন মাস ধরে এই দোকান ও মার্কেট পর্যবেক্ষণ (রেকি) করে। ঘটনার আগের দিন বাথরুমের জানালায় চিকন সুতা বেঁধে যায়। রাতে এসে সেই সুতার সঙ্গে রশি বেঁধে ওপরে উঠে গ্রিল কেটে মার্কেটে প্রবেশ করে চুরি করে।
ডিবির তিনটি টিম টানা ৭২ ঘণ্টা দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। প্রথমে চট্টগ্রাম থেকে শাহিন মাতব্বরকে গ্রেফতার ও ফরিদপুর থেকে স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। পরে বরিশাল থেকে আরও দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঢাকা থেকে ডিবি গ্রেফতার করে এই চক্রের সমন্বয়কারী নুরুল ইসলামকে, যে মোটরসাইকেল ব্যবহার করে মার্কেটের রেকি করতো।
ডিবি কর্মকর্তা বলেন, চক্রটি সংগঠিত ও পেশাদার। তারা এর আগেও ২০২১ সালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী মার্কেটে স্বর্ণ চুরির ঘটনায় জড়িত ছিল। সেই ঘটনায় গ্রেফতারের পর জামিনে এসে আবার একই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তদন্তে জানা গেছে, গ্রেফতার ব্যক্তিদের একজনের স্ত্রীও বিষয়টি জানতেন এবং সহযোগিতা করেছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
উদ্ধার ১৯০ ভরি, বাকি স্বর্ণের কোথায় আছে প্রশ্নে তিনি বলেন, চুরি যাওয়া স্বর্ণের মালিক দাবি করেছেন, তার দোকানে মোট ৫০০ ভরি স্বর্ণ ছিল। তবে উদ্ধার হয়েছে ১৯০ ভরি। বাকি স্বর্ণ কোথায় আছে, তা জানতে ডিবি তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। একজন আসামি এখনও পলাতক। তাকে গ্রেফতার করতে পারলে বাকি স্বর্ণের অবস্থান জানা যাবে।
তিনি আরও জানান, চুরি হওয়া স্বর্ণ বিক্রি করা হয়নি। কিছু অংশ গলানো অবস্থায় পাওয়া গেছে।
মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, চক্রের সদস্যরা সাধারণত কৃষিকাজ ও গরুর ফার্মে কাজ করতো। গোপনে পরিকল্পিতভাবে বড় ধরনের চুরির প্রস্তুতি নিতো। সুযোগ পেলেই স্বর্ণ বা মূল্যবান জিনিস চুরি করতো।
উল্লেখ্য, গত ৮ অক্টোবর দিবাগত রাতে মালিবাগের ফরচুন শপিং মলে ‘শম্পা জুয়েলার্স’ থেকে প্রায় ৫০০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনা ঘটে। সিসিটিভি ফুটেজে বোরকা পরা অবস্থায় দুই ব্যক্তিকে তালা কেটে দোকানে প্রবেশ করে চুরি করতে দেখা যায়।