
গত ২৫ বছর ধরে ৪৯টি সেশনের মাধ্যমে, কান চলচ্চিত্র উৎসবে উদীয়মান প্রতিভাদের আবিষ্কার ও সহায়তার একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘আবাসিক’ কার্যক্রমটি। কান আবাসিক তথা রেসিডেন্সির এবারের ৫০তম আসরটি তাই এক প্রতীকী মাইলফলক হয়ে উঠলো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনে।
কান চলচ্চিত্র উৎসব কর্তৃপক্ষ মেইলবার্তায় জানায়, আবাসিকের ৫০তম আসরে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আসা ছয় তরুণ নির্মাতা প্যারিসে বসবাস করবেন। তারা হলেন—আলিচা বেদনারিকোভা (স্লোভাকিয়া), ফেদেরিকো লুইস (আর্জেন্টিনা), মাকসিম নাকোনেচনি (ইউক্রেন), লাইস সান্তোস আরাউজো (ব্রাজিল), বারান সারমাদ (ইরান) এবং ডিয়ান ওয়েইস (দক্ষিণ আফ্রিকা)। যার শুরুটা হলো ১ অক্টোবর থেকে। শেষ হবে ২০২৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। চার মাসেরও বেশি সময় ধরে এই তরুণ নির্মাতারা উপভোগ করবেন সৃজনশীল ও চ্যালেঞ্জিং চিত্রনাট্য লেখার পরিবেশ, যেখানে থাকছে ব্যক্তিগত পরামর্শ ও চলচ্চিত্র-জগতের পেশাদারদের সঙ্গে দলীয় সেশন।
বলা দরকার, কান চলচ্চিত্র উৎসব তরুণ নির্মাতাদের সহায়তা ও তাদের কাজকে প্রচারের জন্য একাধিক কর্মসূচি চালু করেছে। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই রেসিডেন্সি প্রথমে পরিচালনা করতেন সিলভি পেরাস, পরে জর্জ গোল্ডেনস্টার্ন, আর বর্তমানে এটি পরিচালনা করছেন স্টেফানি ল্যামোম। প্রতিবছর এই রেসিডেন্সিতে নির্বাচিত হন ১২ জন তরুণ নির্মাতা, যারা তাদের প্রথম বা দ্বিতীয় পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য নিয়ে কাজ করছেন। প্রতি বছর দুই দফায় আয়োজিত চার-সাড়ে চার মাসের এই সেশনে অংশগ্রহণকারীরা সৃজনশীলতার জন্য অনুকূল পরিবেশে পুরোপুরি তাদের প্রকল্পে মনোনিবেশ করতে পারেন, পাশাপাশি অভিজ্ঞ নির্মাতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পান।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেলিন সিয়ামা, অ্যালিস রোহরওয়াখার, জাস্টিন ত্রিয়ে, আলবার্ট সেরা এবং সিনেমাটোগ্রাফার ক্লেয়ার মাটনের মতো শিল্পীরা রেসিডেন্টদের সঙ্গে তাদের অভিজ্ঞতা ভাগ করেছেন। এসব সংলাপ তরুণদের কাজকে নতুন সম্ভাবনার দিকে উন্মুক্ত করে বলে মনে করছে কান কর্তৃপক্ষ।
চিলির পরিচালক দিয়েগো সেসপেদেস, যিনি ২০২৫ সালে আঁ সার্তে রিগা বিভাগে ‘দ্য মিস্টিরিয়াস গেইজ অব দ্য ফ্ল্যামিংগো’ চলচ্চিত্রের জন্য পুরস্কার পান। তার প্রকল্পটি ২০১৯ সালের কান আবাসিক থেকেই বিকশিত হয়েছিলো। আবাসিক অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সেই দিনগুলো আমার জীবনের সবচেয়ে মধুর স্মৃতির অংশ। এখানে যে বন্ধুত্বগুলো গড়ে উঠেছিল, তা আজও টিকে আছে।’
এ বছর যারা কান আবাসিকে সুযোগ পেয়েছেন তাদের উদ্দেশ্যে সেসপেদেস বলেন, ‘এটি এক অনন্য স্থান—যেখানে তুমি শেখো, চিন্তা করো, আবেগে ভেসে যাও এবং বিনা চাপেই নিজের প্রকল্প নিয়ে ভাবার সময় পাও। আমার পরামর্শ, সবকিছু একসঙ্গে ঘটবে, এমন আশা করো না। অভিজ্ঞতাটা উপভোগ করো, বাতাসটা অনুভব করো, আর হৃদয়ের গভীরতম কোণ থেকে লেখো—কারণ এখানে কেউ তোমাকে বিচার করবে না।’
বলা দরকার, ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে কান রেসিডেন্সি ৬০টিরও বেশি দেশের ২৫০-রও বেশি নির্মাতাকে স্বাগত জানিয়েছে, যাদের অনেকেই পরবর্তীতে বিশ্ব চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্বাক্ষর রেখেছেন।