
জলাবদ্ধতা আর ঢাকা যেন একই সূত্রে গাঁথা। বৃষ্টি হলেই পথঘাট ভেসে পানি জমে যায় মূল সড়কসহ শহরের অলিগলিতে। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে যায় রাজধানী। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় ২৪ ঘণ্টাতেও পানি নিষ্কাশন হয়নি। ফলে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।
আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টায় ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটি এই সময়ে দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি। এর ফলে শহরজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাতভর টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও বাস-রিকশা আটকে পড়েছে মাঝরাস্তায়। পায়ে হেঁটে পানি পেরিয়ে নগরবাসীকে যেতে হচ্ছে গন্তব্যে। অনেকে দোকানের ভেতর থেকে সেচ দিয়ে পানি বের করছেন। টানা বৃষ্টিতে সড়কগুলোতে রয়েছে দুর্ভোগের চিত্র।
রাজধানীর নিউমার্কেট, লালবাগ, ধানমন্ডি, মিরপুর, বংশাল, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, নাখালপাড়া, কাজীপাড়া-শেওড়াপাড়া, কালশী, বিমানবন্দর, গেন্ডারিয়াসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা এখনও জলমগ্ন অবস্থায় আছে। পানি নিষ্কাশন না হওয়ার কারণে এসব এলাকার বাসিন্দা, ব্যবসায়ী ও পথচারীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।
নিউমার্কেট এলাকায় থৈ থৈ করছে বৃষ্টির পানি। সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সাধারণ মানুষের হেঁটে যাওয়ার উপায় নেই। এ জন্য রিকশা-ভ্যানে পার হচ্ছেন নগরবাসী।
ভ্যানে নিউমার্কেট পার হওয়া ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী শোভন বলেন, টিউশনের সুবাদে হল থেকে বের হয়েছি। এসে দেখি নিউমার্কেট এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। পরে উপায় না দেখে ভ্যানে সড়ক পার হয়েছি।
নিউমার্কেটের হকার্স মার্কেটের ভেতরে ঢুকে পড়েছে বৃষ্টির পানি। সেই পানি মেশিন দিয়ে বের করছেন ব্যবসায়ীরা। হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার বলেন, বৃষ্টি হলেই নিউমার্কেট এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এটা যে শুধু এ বছর হয়েছে তা নয়, প্রতি বছরই নিউমার্কেটের এই চিত্র থাকে। বছরের পর বছর যায় কিন্তু নিউ মার্কেট এলাকার উন্নয়ন হয় না। বৃষ্টি হলে এই এলাকার বাসিন্দাদের ভোগান্তির সীমা থাকে না।
এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, বৃষ্টিতে এখানে হাঁটু সমান পানি জমে যায়। দোকানে পর্যন্ত পানি উঠে যায়। আজকেও দোকানে পানি উঠেছে। পরে সেই পানি সেচ দিয়ে বের করেছি আমরা। বৃষ্টি হলে দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। এক দুর্ভোগ পানির কারণে আরেক দুর্ভোগ বেচাকেনা বন্ধ থাকার কারণে।
মৌচাক এলাকার বাসিন্দা রাতুল ইসলাম বলেন, সকালে বাসা থেকে বের হয়ে দেখি সড়কে হাঁটু সমান পানি। অফিসে যাওয়ার জন্য কোনও পাবলিক বাস পাচ্ছিলাম না। জলাবদ্ধতার কারণে যানজট আরও বেড়ে যাওয়ায় এ সমস্যা হয়েছে। ৩০ টাকা রিকশা ভাড়া ১০০ টাকা চাচ্ছিল। উপায় না পেয়ে ৮০ টাকা ভাড়া দিয়ে অফিসে গিয়েছি।
পুরান ঢাকার বংশাল এলাকার বাসিন্দা শমসের মুবিন বলেন, বছরের অধিকাংশ সময় বংশাল এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়ে থাকে। প্রতি বছর সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করে ড্রেনেজের কাজ করে সিটি করপোরেশন। তবুও কোনও উন্নতি হয় না। বৃষ্টি হলেই পানি জমে। এই এলাকার মূল সমস্যা যে কোথায়, তা কেউ বলতে পারে না। একদিনের বৃষ্টিতে এক সপ্তাহ পানি জমে থাকে বংশালে। পরে সিটি করপোরেশনের লোকেরা এসে কোনোরকমে পানি সরিয়ে যায়।
গেন্ডারিয়ার বাসিন্দা মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, এই এলাকার সড়কগুলো খানা-খন্দে ভরা। একটু বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে যায়। সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে প্রতিনিয়ত ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। তার ওপর বৃষ্টি হলে আমাদের জন্য এই এলাকা অভিশপ্ত হয়ে যায়। আগেতো কাউন্সিলরকে পানি সরানোর জন্য চাপ দিতে পারতাম। এখন সিটি করপোরেশনকে কল দিলেও তারা তেমন সাড়া দেয় না।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্ট জলজট নিরসনে কাজ করছে বলে জানায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। ঢাকা দক্ষিণ সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রাসেল রহমান বলেন, রাতেই পানি নিষ্কাশনের কাজ শুরু হয়েছে। তবে এলাকাগুলোর পুরনো ও অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা আমাদের কাজকে ব্যাহত করছে। তাছাড়া এখন ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নত করার কাজ চলমান।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, উত্তর সিটির কিছু এলাকায় সাময়িক জলজট সৃষ্টি হয়েছে, তবে সেটা সিটি করপোরেশনের লোকজন তাৎক্ষণিক নিরসনে কাজ করছে। একইসঙ্গে গত বছরের তুলনায় এবার উত্তর সিটি এলাকায় উল্লেখযোগ্যভাবে জলাবদ্ধতা কমেছে বলেও দাবি করেন তিনি।