প্রকাশ: শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৫:৫৭ পিএম (ভিজিট : ৪১)

দেশের ভেতরে নদী দখল বা দূষণের ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্য থাকলেও উদ্ধারে জাতীয় ঐক্য নেই বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, একটা প্রশ্ন প্রায় উঠে আসে যে, যৌথ নদী কমিশন কেন কাজ করে না? শুধু যৌথ নদী কমিশন না, আমরা অনেক ক্ষেত্রেই দেখি, আমাদের যেসব কমিটি বা কমিশন হয় অন্যান্য দেশের সঙ্গে কিংবা আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে দর কষাকশি বা আলোচনার জন্য, সেইখানে আমাদের দিক থেকে প্রস্তুতি দক্ষতার বড় ধরনের ঘাটতি থাকে। আমাদের দেশে সরকারগুলোর একটা একটা অভিন্ন প্রবণতা দেখি যে, তারা সবসময় আন্তর্জাতিক কিছু প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে। নদী নিয়ে যে ডেলটা প্ল্যান হচ্ছে, সে ডেলটা প্ল্যান নেদারল্যান্ডের গোষ্ঠী এসে করছে।
আজ শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে নোঙর কর্তৃক জাতীয় নদী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আনু মুহাম্মদ বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ক্ষমতায় তারা বলছেন যে আমরা ক্ষমতা নেইনি, দায়িত্ব নিয়েছি। সে দায়িত্ব নেওয়ার পর সবারই প্রত্যাশা ছিল যে কিছু পরিবর্তনের সূচনা হবে। নদীকে নিয়ে কাজ করা সরকারের পক্ষে সম্ভব ছিল। প্রথম তারা যেটা করতে পারত, নদী নিয়ে ইতিমধ্যে যারা এ দেশে কাজ করছেন, তাদের সবাইকে নিয়ে একটি নদী সংস্কার কমিটি তৈরি করা। দ্বিতীয় সহজ কাজ ছিল- জাতিসংঘের ১৯৯৭ সালের আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষর করা।
প্রধান অতিথি আরও বলেন, ভারতের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি রয়েছেন, যারা ফারাক্কা বাঁধের বিরোধিতা করেছিলেন... এবং ভারতে বর্তমানে ফারাক্কা বাঁধ ভাঙ্গার দাবিও উঠছে। সুতরাং ভারতের জনগণের মধ্যে যারা এ ধরনের কথাবার্তা বলছেন বা চিন্তা করছেন- তাদের সঙ্গে আমাদের একটা যোগাযোগ তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ।
আনু মুহাম্মদ বলেন, আমাদের নদী বিপর্যয়ের তিনটা কারণ রয়েছে। এর মধ্যে এক হলো ভারত। বাকি দুইটা কারণ আমাদের নিজের। একটি হলো- উন্নয়ন প্রকল্প। বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষি সেচের নামে এমন সব প্রকল্প করা হয়েছে, যেগুলোর কারণে বহু নদী আজকে বিপর্যস্ত। তৃতীয় কারণ হচ্ছে, আমাদের দেশের ভেতরে যারা ক্ষমতাবান গোষ্ঠী বিভিন্ন দলের সঙ্গে যুক্ত, তাদের নদী দখলদারি। অথচ এসব বিষয়ে আমরা সরকারের কার্যকরী উদ্যোগ দেখিনি। দেশের ভেতরে নদী দখল বা দূষণের ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্য রয়েছে, কিন্তু উদ্ধারে জাতীয় ঐক্য নেই।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সরকার সারভেলেন্স স্টেটে পরিণত হয়েছে। এখন জনগণের উপরে সারভেলেন্স বা নজরদারি চলে। আমাদের জনগণের পক্ষ থেকে কাউন্টার সারভেলেন্স বা পাল্টা নজরদারি চালাতে হবে সরকারের উপরে... এবং এই নজরদারি চলবে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার উপরে। রাজনৈতিক দলের যে জাতীয় ঐক্য তার বিপরীতে জনগণের জাতীয় ঐক্য তৈরি করে নদী রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।