
ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মালীপাড়া গ্রামে ঢুকতেই ভেসে আসে কাদামাটির গন্ধ। টুপটাপ হাতুড়ির শব্দ, বাঁশের কাঠামো আর শুকোতে দেওয়া প্রতিমার সারি যেন ঘোষণা দিচ্ছে—আর ক’দিন পরই শারদীয় দুর্গোৎসব। এই দৃশ্যের মাঝেই মগ্ন হয়ে আছেন গ্রামের বিখ্যাত প্রতিমাশিল্পী শ্রী টুনুরাম মালাকার।
সকালে গিয়ে দেখা গেলো টুনুরামের বাড়ির উঠোনে সাজানো একের পর এক প্রতিমা। কারো চোখে ইতিমধ্যেই রঙ তুলির ছোঁয়া, কারো শরীরে এখনও শুকোতে থাকা কাদামাটি। পাশে বসে আছেন তার সহধর্মিণী, হাতে রঙের তুলি। আরেক কোণে শালক সঞ্জয় মালাকার প্রতিমার গায়ে শেষ মুহূর্তের পালিশ করছেন। তিনজনের ব্যস্ততায় বোঝা যায়, এই উৎসবকে ঘিরে তাদের পরিশ্রম কতটা নিবেদিত।
টুনুরাম মালাকার বললেন, আমাদের পূর্বপুরুষরাও প্রতিমা তৈরি করতেন। ছোটবেলা থেকেই শিখেছি। আজও মনে হয় আমি যেন মায়ের রূপকে গড়ে তুলি, শুধু মাটি নয়—ভক্তি দিয়েও।
তিনি জানালেন, প্রতিবছর প্রায় ২০টি মণ্ডপের জন্য প্রতিমা তৈরি করলেও এবার বাড়তি চাহিদার কারণে ২১টি প্রতিমা বানাচ্ছেন। ইতিমধ্যে কাঠামো শেষ, এখন চলছে রঙের পালা।
তার সহধর্মিণী জানালেন, সময়মতো প্রতিটি মণ্ডপে প্রতিমা পৌঁছে দিতে দিন-রাত পরিশ্রম করছি। তবে পূজার দিন মানুষের মুখে হাসি দেখলে সব কষ্ট ভুলে যাই।
শালক সঞ্জয় মালাকার হাসিমুখে যোগ করলেন, দুলাভাইয়ের কাছে থেকেই কাজ শিখেছি। একসাথে প্রতিমা বানাতে ভীষণ ভালো লাগে। দুর্গাপূজার সময়টা শুধু কাজ নয়, আনন্দও।
প্রতিমা নিতে আসা আনন্দ চন্দ্র বলেন, প্রতিবারই আমরা টুনুরামের কাছে প্রতিমা বানাই। তার হাতে প্রতিমা যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে।
শ্রী পবিত্র বর্মনও যোগ করলেন, টুনুরামের তৈরি প্রতিমার মান নিয়ে কারো প্রশ্ন নেই। সময়মতো সুন্দরভাবে বানিয়ে দেন, তাই এলাকার সবাই তার ওপর নির্ভর করে।
তবে এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কিছুটা শঙ্কা থাকলেও মালীপাড়ার মানুষ নিরাশ নন। তারা বিশ্বাস করেন, মানুষের ভেতরের মানবতাই সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা।
অবশেষে বলা যায়—শারদীয় দুর্গোৎসবের রঙ-আলো-আনন্দের আড়ালে যে অদম্য শ্রম, সেই গল্পের নায়ক কুড়িগ্রামের শ্রী টুনুরাম মালাকার। তার হাতে প্রতিমা শুধু মাটির তৈরি নয়, মানুষের ভক্তি ও আনন্দের রঙে রঙিন হয়ে ওঠে।