প্রকাশ: শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৫:৩৯ পিএম (ভিজিট : ১০৭)
দেশবরেণ্য লালন-সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীনকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গতকাল বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী।
আজ (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে ফরিদা ফরিদা পারভীনের শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে কথা হয় ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তার (ফরিদা পারভীনের) ক্রিটিক্যাল কন্ডিশন। তিনি লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। তিনি মাল্টিঅর্গান ফেইলিয়রের রোগী। গত পরশুদিন (১০ সেপ্টেম্বর) তার অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। তার ব্লাড প্রেশার পাওয়া যাচ্ছিল না, ভেন্টিলেটর দিতে হয়েছে। গতকাল (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরের পর থেকে একটা সুসংবাদ হচ্ছে, কালকে দুপুরের পর থেকে তার ব্লাড প্রেশারটা একটু একটু উঠে আসছে। তবে তাতে খুব বেশি আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ তার অন্য অর্গানগুলো আরও ঝুঁকিপূর্ণ। তার জ্ঞানের মাত্রা কম, রক্তে ইনফেকশন বেড়েছে। কিডনি ফাংশন একদমই খারাপ। কিডনি ঠিকমতো কাজ করেছ না। ব্লাড প্রেশার কম থাকায় আমরা ডায়ালাইসিস দিতে পারছি না। হিমোগ্লোবিন অনেক কম।’
এদিকে ফরিদা পারভীনের ছেলে ইমাম জাফর নোমানী গতকাল (১১ সেপ্টেম্বর) বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে জানিয়েছেন, তার মায়ের জন্য চিকিৎসার জন্য আর্থিক বা অন্যকোনো ধরনের কোন সহযোগিতার দরকার নেই।
ফরিদাপুত্র সেই পোস্টে লিখেছেন, ‘সকলের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আম্মাকে (ফরিদা পারভীন) গত বুধবার বিকাল থেকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেল থেকেই ওনার স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া সম্পুর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে এবং ব্লাডপ্রেশার নেই।’
এরপর তিনি যোগ করেন, ‘এখন ডাক্তাররা সর্বোচ্চমাত্রার ঔষধ দিয়ে কৃত্রিমভাবে তার ব্লাড প্রেশার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে এবং মেশিনের মাধ্যমে তার ফুসফুসটা চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, এই পরিস্থিতিতে আম্মার শারীরিক অবস্থার উন্নতির আর তেমন কোনো আশা নেই। তারপরও, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরামর্শে আমরা আরও কিছু সময় ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে এই লাইফ সাপোর্টটা চালিয়ে নিচ্ছি।’
ফরিদা পারভীনের ছেলে আরও লিখেছেন, ‘খুবই বেদনাদায়ক যে, আম্মার এই শেষ মুহূর্তেও কিছু অ-মানুষ এখনো নানা পরিচয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে আর্থিক প্রতারণামূলক কাজ করছে। এ ব্যাপারে আবারও সকলকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করছি। আমাদের পরিবারের সাথে সরকারের সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মন্ত্রণালয় থেকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে। পরিবারের পক্ষ থেকে আবারও নিশ্চিত করছি যে, আম্মার চিকিৎসার জন্য আর্থিক বা অন্যকোনো ধরনের কোন সহযোগিতার প্রয়োজন নেই।’
১৯৬৮ সালে রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে নজরুলসংগীত গেয়ে সংগীতাঙ্গনে পথচলা শুরু করেন ফরিদা পারভীন। ১৯৭৩ সালে দেশাত্মবোধক গান গেয়ে জনপ্রিয়তা পান তিনি। পরে সাধক মোকসেদ আলী শাহর কাছে লালনগীতির তালিম নেন এবং ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন লালনগীতির জীবন্ত কিংবদন্তি।
সংগীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৮৭ সালে তিনি লাভ করেন একুশে পদক। পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে লালনের গান শেখাতে গড়ে তোলেন ‘অচিন পাখি স্কুল’।