জুলাই গণ-অভুত্থানে রাজধানীর রামপুরা এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর।
অভিযোগ গঠনের পক্ষে প্রসিকিউশনের শুনানি শেষ। আর অভিযোগ থেকে আসামিদের অব্যাহতির বিষয়ে আংশিক শুনানি হয়েছে। আগামী রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বাকি শুনানি হবে।
এরপর ১৬ সেপ্টেম্বর আদেশ দেবেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১।
ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
মামলার সব আসামিই ডিএমপিতে ছিলেন। পাঁচ আসামির মধ্যে চারজনই পলাতক।
তাঁরা হলেন ঢকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির খিলগাঁও জোনের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মশিউর রহমান ও একই থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) তুরিকুল ইসলাম ভূইয়া। আসামি চঞ্চল চন্দ্র সরকারকে গত ২৬ জানুয়ারি গ্রপ্তার করে ডিএমপি পুলিশ। পরে ২৮ জানুয়ারি তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তদন্ত সংস্থার আবেদনে ট্রাইব্যুনাল তাঁকে কারাগারে পাঠান।
অভিযোগ গঠনের শুনানিতে তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তিনি রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই)।
অদালতে অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। পলাতক আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। গ্রেপ্তার আসামি চঞ্চল চন্দ্র সরকারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সারওয়ার জাহান নিপ্পন।
শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর আসামিদের সংঘটিত অপরাধের বিবরণ তুলে ধরেন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে তাঁদের বিচারের মুখোমুখী করার আরজি জানান ট্রাইব্যুনালের কাছে। বিপরীতে মামলার অভিযোগ থেকে পলাতক আসামিদের অব্যাহতি চান তাঁদের আইনজীবী আমির হোসেন। আসামি চঞ্চল চন্দ্র সরকারেরও অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর এই আবেদনে শুনানির পর ১৬ সেপ্টেম্বর আদেশ দেবেন ট্রাইব্যুনাল।
পরে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আশা করছি আগামী মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হবে এবং আইন অনুযায়ী যথারীতি বিচারকাজ পরিচালিত হবে।
গত ১০ আগস্ট এ মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে ধরতে পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগ গঠনের শুনানির এক পর্যায়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, পলাতকদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
গত ৩১ জুলাই চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। যাচাই-বাছাইয়ের পর গত ৭ আগস্ট তা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়। হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।
যে তিন ঘটনায় মামলা
গত বছর ১৯ জুলাই ছিল শুক্রবার। জুমার নামাজ পড়ে বাসায় ফিরছিলেন আমির হোসেন। রাজধানী রামপুরা এলাকায় তখন পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলছিল। এর থেকে বাঁচতে তিনি নির্মাণাধীন ওই ভবনের চারতলায় গিয়ে আশ্রয় নেন। একপর্যায়ে আন্দোলকারীদের ধাওয়া করে পুলিশ ভবনটিতে উঠে যায়। ভয়ে কার্নিশের রড ধরে নিচে লাফিয়ে পড়ার চেষ্টা করেন আমির হোসেন। তখন এক পুলিশ সদস্য ঝুলতে থাকা আমির হোসেনকে লক্ষ্য করে ছয়টি গুলি করেন। সবকটি গুলি তাঁর পায়ে লাগে। পরে সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর সেখান থেকে তাঁকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান আমির হোসেন।
রামপুরার মেরাদিয়া হাট এলাকায় বাসার নিচের দোকান থেকে সাত বছরের নাতি বাসিত খান মুসাকে আইসক্রিম কিনে দিতে যান দাদি মায়া ইসলাম (৬০)। এ সময় তাঁর পেটে এবং মুসার মাথায় গুলি লাগে। মায়া ইসলাম পরদিন মারা যান। মুসাকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসা দেওয়া হয়। সংকটাপন্ন অবস্থায় মুসাকে সিএমএইচ থেকে গত বছরের ২২ অক্টোবর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে পাঠায় সরকার। পাঁচ মাস ১২ দিন পর গত ৪ এপ্রিল দেশে আনা হয় শিশুটিকে। বেঁচে গেলেও শিশুটি কথা বলছে না বলে সাংবাদিকদের জানান প্রসিকিউটর তামীম।
গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসায়ী নাদিম মিজান স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বনশ্রী এলাকায় থাকতেন। ওইদিন (গত বছর ১৯ জুলাই) জুমার নামাজ পড়তে বাসা থেকে বেরিয়েই পুলিশের গুলিতে শহীদ হন তিনি। ওইদিন রাতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়।