প্রকাশ: শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৬:২৯ পিএম (ভিজিট : ৩৩)
উত্তরবঙ্গের সীমান্তঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রামকে অনেকেই চরের জেলা, নদী ভাঙনের জেলা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেলা হিসেবে চেনে। কিন্তু এই জেলার আরেকটি মুখ আছে—তা হলো খেলাধুলার সম্ভাবনা। এখানকার তরুণ সমাজ ফুটবল, ক্রিকেট, সাঁতার, অ্যাথলেটিক্সসহ নানা খেলায় প্রতিভার ঝলক দেখাচ্ছে নিয়মিতভাবে। এই প্রতিভাকে বিকশিত করতে সামনের সারিতে কাজ করছে জেলা ক্রীড়া অফিস, যাদের নিরলস প্রচেষ্টা আজ কুড়িগ্রামের খেলাধুলাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে দেখা গেছে, কুড়িগ্রামে ফুটবলের জনপ্রিয়তা সর্বাধিক। গ্রামের মাঠ থেকে শহরের স্টেডিয়াম—সবখানেই তরুণরা বলের পিছে ছুটছে। অনেকেই বিকেএসপি, নামকরা ক্লাব এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার সুযোগ পেয়েছে। তবে মাঠের সংকট খেলোয়াড়দের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবুও হার মানেনি কুড়িগ্রামের তরুণরা।
জেলা ক্রীড়া অফিসের উদ্যোগে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় নানা প্রতিযোগিতা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ফুটবল, সাঁতার, অ্যাথলেটিক্স ও গ্রামীণ খেলা এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। এছাড়াও কাবাডি, ক্রিকেট, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, হ্যান্ডবল, প্রতিযোগিতা ক্রীড়াঙ্গনকে করেছে সমৃদ্ধ। প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও জেলা ক্রীড়া অফিস এগিয়ে। বর্তমানে ফুটবল, সাঁতার ও অ্যাথলেটিক্সে নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় কুড়িগ্রাম জেলা রংপুর বিভাগীয় পর্যায়ে জাতীয় গোল্ডকাপ অনূর্ধ্ব-১৭ (২০২৪) টুর্নামেন্টে রানার্সআপ হয়ে গৌরব অর্জন করেছে।
খেলাধুলার প্রসার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে স্থানীয় ক্রীড়াপ্রেমী হযরত আলী বলেন, জেলা ক্রীড়া অফিস নিরলসভাবে কাজ করছে। তবে জেলার চাহিদার তুলনায় বাজেট খুব সীমিত। যদি উপজেলা পর্যায়ে আলাদা ক্রীড়া অফিস থাকতো, তবে যুবসমাজকে মাদক ও অনলাইন জুয়ার মতো ক্ষতিকর প্রবণতা থেকে আরও কার্যকরভাবে দূরে রাখা যেত। সচেতন মহলও মনে করে, কুড়িগ্রামের তরুণদের সুস্থ ধারায় গড়ে তুলতে খেলাধুলার বিকল্প নেই। জেলায় মাদক ও অনলাইন জুয়া-ক্যাসিনোর বিস্তার রোধে খেলাধুলাই হতে পারে কার্যকর মাধ্যম। ইতিমধ্যেই জেলা ক্রীড়া অফিসের কার্যক্রম এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
এ বিষয়ে জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা মোঃ আকরাম হোসাইন বলেন, আমরা কুড়িগ্রামের খেলাধুলার মান উন্নয়নে নিয়মিত কাজ করছি। বার্ষিক প্রতিযোগিতা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নিয়মিতভাবে সম্পন্ন করছি। খেলোয়াড়দের প্রতিভা বিকাশে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। আশা করি, আগামী দিনে কুড়িগ্রামের সন্তানরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও সাফল্য বয়ে আনবে।
কুড়িগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন এখন নতুন সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে। জেলা ক্রীড়া অফিসের প্রচেষ্টা, খেলোয়াড়দের স্বপ্ন আর ক্রীড়াপ্রেমীদের ভালোবাসা মিলেই গড়ে উঠছে এক নতুন ইতিহাস। মাঠ সংকট ও সীমিত বাজেটের বাধা পেরিয়ে কুড়িগ্রাম হয়ে উঠতে পারে দেশের অন্যতম ক্রীড়াকেন্দ্রিক জেলা—এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।