এক সময় ব্যস্ত সময় পার করলেও মাঝে অনেকটাই হারিয়ে গিয়েছিলেন সুকণ্ঠী শিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি। তবে স্বেচ্ছায় নয়, নানা বাধার মুখে পড়েই আড়ালে থাকতে হয়েছে তার।
তবে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে সুদিন ফিরেছে ন্যান্সির। কিন্তু জীবনের লম্বা সময়ের সেই ট্রমা তিনি ভুলতে পারেননি।
সম্প্রতি এ নিয়ে খোলামেলা কথাও বলেছেন এই গায়িকা। স্টার নাইট নামের এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে ন্যান্সিকে জিজ্ঞেস করা হয়, ২০০৫ সাল থেকে আপনার সঙ্গীতাঙ্গনে যাত্রা, এসেই সবার মন জয় করেন। পেয়েছেন বড় বড় পুরস্কার। কিন্তু প্রথম কবে থেকে মনে হয়েছিল আমি আর সাধারণ মানুষের কাতারে নেই, তারকার কাতারে চলে এসেছন?
এমন প্রশ্নে ন্যান্সি বলেন, শোবিজে প্রায় এক দশক পার হবার পরও আমার নিজেকে তারকা মনে হত না। আমি বরাবরই খুব সাদামাটা জীবন যাপন করি। কিন্তু ২০১৪ সালে যখন আমার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে চারপাশে ভীষণ রকম হইচই শুরু হল, অনেকেই তা নিয়ে লেখালেখি করছে, ফেসবুক তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে, বাড়ির সামনে পুলিশ ভ্যান চলে এসেছে- তখন মনে হলো, তা আমি সাধারণ কেউ নই। আমি হয়তো বিশেষ কেউ, নয়তো আমার একটা স্ট্যাটাসকে কেন সবাই এতো গুরুত্ব দেবে?
অনেকেই জানেন সেই স্ট্যাটাসটি কী ছিল। ন্যান্সির ভাষ্য, বিগত সরকার বিরোধী একটা পোস্ট ছিল। আসলে আমি তো আমার মতামত প্রকাশ করেছি কেবল। আমি লিখেছিলাম যে, ‘এখনই সময় আমাদের এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার। ’ ওটা ছিল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আগে।
এ বিষয়ে ন্যান্সি আরও বলেন, ২০১৩ সালের শেষের দিক থেকে এবং ২০১৪ থেকেই তো একের পর এক আমার জীবনে অ্যাটম বোমা ফেস করতে হয়েছে। আমি যে ধরনের গান করি সেটা তো আসলে ওপেন এয়ার কনসার্টের উপোযোগী নয়। মূলত কর্পোরেট শো আর টেলিভিশনেই আমার গাওয়ার জায়গা। এইসব জায়গাতে আমি নিষিদ্ধই ছিলাম।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বেশিরভাগ প্রোগ্রামেই তো প্রধান অতিথি হিসেবে কোন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা সচিবকেই রাখা হয়। ফলে অনুষ্ঠানের আগেই তাদের কাছে শিল্পীর তালিকা পাঠাতে হত। আমার নাম দেখলেই বাদ দেওয়া হত, অনেক সময় আয়োজকরাই ঝামেলা এড়াতে আমাকে নিতেন না তাদের অনুষ্ঠানে। নিষিদ্ধ ছিলাম, অনেক প্রোগ্রাম চূড়ান্ত করার পরও বাতিল হয়ে যেত।
এমন অবস্থায় ড্রিপেশনের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন ন্যান্সি। তার কথায়, মন খারাপ যে হত না, তা নয়। আমার কাজ করার সক্ষমতা থাকা স্বত্ত্বেও করতে দেওয়া হচ্ছে না এ নিয়ে প্রচণ্ড রকম ক্ষোভ ছিল। আমার সহশিল্পীদের প্রতিও আমার ক্ষোভ ছিল। প্রথম দুই তিন বছর ড্রিপেশনের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছিলাম। আমাকে ওষুধও খেতে হত, সেটাকে অনেকে আত্মহত্যা চেষ্টা বলেও রটিয়েছে।
তবে ২০১৭ থেকে তারকা খ্যাতি বা কাজ করার সক্ষমতা থাকতেও করতে না পারার বিষয়ে ভাবনা বন্ধ করে দেন বলেই জানান ন্যান্সি।
প্রসঙ্গত, মাছরাঙা টেলিভিশনে গত সপ্তাহে প্রচারিত সেলিব্রিটি শো ‘স্টার নাইট’-এ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ন্যান্সি। উল্লেখিত অংশ ছাড়াও অনুষ্ঠানে সংগীতজীবনের পথচলায় ভালো-মন্দ নানা রকম অভিজ্ঞতা, প্রতিবন্ধকতা, সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প তুলে ধরেছেন তিনি।