জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি’র সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, ‘ঐকমত্য কমিশনে একমত হওয়া বিষয়গুলোর টেকসই বাস্তবায়নের জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। কারণ যেভাবে জুলাই সনদের অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে, এতে স্পষ্ট বোঝা যায় তা কার্যকরের বিষয়টি পরবর্তী সরকারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমরা মনে করি সেগুলো টেকসইভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।’
শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে জুলাই সনদের খসড়া সম্পর্কে এনসিপি’র পর্যবেক্ষণ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আখতার হোসেন বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে মানুষের যে বিপ্লবী আকাঙ্ক্ষা আছে, তা ধারণ করার জন্য রাষ্ট্র কাঠামো পরিচালনার জায়গায় যে বিষয়গুলোতে অনেক রাজনৈতিক দল একমত হয়েছি, শুরুতে কথা ছিল সে বিষয়গুলো চূড়ান্ত হওয়ার পর এর নামকরণ হবে জুলাই সনদ হিসেবে। কিন্তু আমরা লক্ষ করছি ঐকমত্য কমিশন এটিকে জুলাই জাতীয় সনদ হিসেবে প্রচার করছে। এই জায়গায় আমাদের আপত্তি আছে। আমরা মনে করি জুলাই জাতীয় সনদের মধ্য দিয়ে জুলাইয়ের আন্দোলনে দেশের মানুষের অবদানকে তুলনামূলক দুর্বলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, যে জুলাই সনদের বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি, তার বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, সে বিষয়টি এখন পর্যন্ত অস্পষ্ট।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, সংবিধান সংশোধন, উচ্চকক্ষ, নারী প্রতিনিধিত্ব, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, ক্ষমা প্রদর্শনের বিধান, জরুরি অবস্থা জারি, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকা, সংসদীয় কমিটিতে বিরোধী দল থেকে সভাপতি করা, বিচারক নিয়োগ ও সাংবিধানিক নিয়োগসহ প্রতিটি বিষয় সরাসরি সংবিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কমিশনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি হাইকোর্টের শাখা বিভাগীয় শহরগুলোতেও স্থাপন করা হবে। সেখানেও বেঞ্চ থাকবে। একই পরিবর্তন অষ্টম সংশোধনীর মধ্য দিয়ে করা হয়েছিল। সেই পরিবর্তনগুলো টেকসই করতে হলে নতুন করে সংবিধান লিখতে হবে। যে সংবিধানকে তার ভিত্তিমূল নিয়ে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে আর কোনও প্রশ্ন উত্থাপন করার সুযোগ থাকবে না। কিন্তু এখানে দুই নম্বর ধারায় যে প্রস্তাবনার বা সংশোধনীগুলোর ব্যাপারে বলা হলো, সেগুলো সংবিধানের কাঠামো হবে। আমরা মনে করি, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হলে গণপরিষদ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। সনদে একমত হওয়া বিষয়গুলোকে গাইডলাইন্স হিসেবে গ্রহণ করে নতুন সংবিধানে তা যুক্ত করতে হবে।’
আখতার হোসেন বলেন, ‘যেসব বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছি, তার টেক্সট কীভাবে প্রস্তুত হবে তাও এখনও চূড়ান্ত হয়নি। গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে যারা প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন, তারাই সে টেক্সট তৈরি করবেন। আমরা দেখি যতগুলো জায়গায় পরিবর্তন করতে হবে, তা বর্তমান সংবিধানে ৬০ থেকে ৭০ বা তারও বেশি পরিবর্তন করতে হবে। যা সংবিধান পুনর্লিখনেরই সমান।’
তিনি বলেন, ‘গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করার বিষয়টিকে অনেকে কেন ভিন্নভাবে দেখেন, সেটা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। আমরা মনে করি বাংলাদেশে জুলাই সনদের অঙ্গীকারগুলো সত্যিকার অর্থে বাস্তবায়ন করতে হলে, দেশের রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখতে হবে। বাংলাদেশ যেন আর কখনও ফ্যাসিবাদের দিকে না যায়, সে বিষয়ে সোচ্চার থাকতে হবে। হাসিনার রেখে যাওয়া সংবিধানের উপাদান যেন আর ফিরে না আসে, সেই আকাঙ্ক্ষার জায়গা থেকেই সবাইকে এক হতে হবে।’
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (মিডিয়া) মুশফিক উস সালেহীনের সঞ্চালনায় এতে আরও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন, যুগ্ম সদস্যসচিব সাঈদ মোস্তাফিজ ও জয়নাল আবেদীন শিশিরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।