শনিবার ৯ আগস্ট ২০২৫ ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২
 
শিরোনাম:


নোয়াবের বিবৃতির জবাবে
নোয়াবের মিথ্যা ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচারের পরও ব্যবস্থা নিইনি: প্রেস উইং
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শুক্রবার, ৮ আগস্ট, ২০২৫, ৯:৩৫ PM

সম্প্রতি সংবাদপত্র মালিক সমিতি (নোয়াব) বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্যপ্রাপ্তির পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিবৃতি দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার আজ (৮ আগষ্ট) বিকেলে ফেসবুকে একটি প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। পরে একই প্রতিক্রিয়া শেয়ার করেন প্রেস সচিব শফিকুল আলমও। 

লম্বা প্রতিক্রিয়ায় আজাদ মজুমদার বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে প্রায়ই মিথ্যা ও উসকানিমূলক তথ্য ও বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। তারপরও আমরা না সেন্সর করেছি, না কোনো ব্যবস্থা নিয়েছি। এমনকি আমরা কোনো অভিযোগও করিনি, কারও লাইসেন্সও স্থগিত করিনি।

তিনি বলেন, সম্প্রতি নোয়াব গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্যপ্রাপ্তি পরিস্থিতি নিয়ে যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, আমরা তা স্বীকার করছি। তবে গত এক বছরে ‘অন্তর্বর্তী সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করেছে’- নোয়াবের এমন ইঙ্গিত আমরা দৃঢ়ভাবে ও স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। 
তিনি নোয়াবের দেওয়া বিবৃতিতে আসা বিভিন্ন বিষয়ে আলাদা আলাদা ব্যাখ্যা দেন।

গণমাধ্যমের কার্যক্রমে সরকারের হস্তক্ষেপ নেই

দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো গণমাধ্যমের সম্পাদকীয়, পরিচালনা বা ব্যবসায়িক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করেনি। বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার মুখেও আমরা অসাধারণ সংযম দেখিয়েছি। টেলিভিশন টক শো ও কলামে এই সরকারের বিরুদ্ধে প্রায়ই মিথ্যা ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচারিত হয়েছে। তারপরও আমরা সেন্সরও করিনি, কোনো ব্যবস্থাও নিইনি। এমনকি আমরা কোনো অভিযোগও করিনি, কারও লাইসেন্সও স্থগিত করিনি। বরং আগের সরকারের সময় জোরপূর্বক বন্ধ করে দেওয়া কিছু গণমাধ্যমকে আমরা পুনরায় প্রকাশ বা সম্প্রচারের সুযোগ করে দিয়েছি।

সীমিত প্রবেশাধিকারের অভিযোগের বিপরীতে সাংবাদিকরা আমাদের উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীদের সঙ্গে সরাসরি ও উন্মুক্তভাবে যোগাযোগের সুযোগ পেয়েছেন। কোনো সাংবাদিককে তার গণমাধ্যমের পরিচয় বা সম্পাদকীয় অবস্থানের কারণে সাক্ষাৎকার বা ব্রিফিং থেকে বঞ্চিত করা হয়নি। আমরা স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি এবং আমাদের আচরণে সেটির প্রতিফলন ঘটেছে।

সচিবালয়ের অ্যাক্রেডিটেশন প্রক্রিয়ার সংস্কার

অ্যাক্রেডিটেশন ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে নোয়াবের সমালোচনা ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর। আগের পদ্ধতিটি ছিল মারাত্মকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত; প্রবেশপত্র এমন ব্যক্তিদের হাতে পৌঁছেছিল যাদের কোনো বৈধ সাংবাদিকতার ভূমিকা ছিল না। যাদের মধ্যে কিছু ছিল রাজনীতিবিদ, লবিস্ট ও সুযোগসন্ধানী, যারা এই বিশেষ সুবিধা ব্যবহার করে নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় অন্যায্য প্রভাব বিস্তার করত।

আমরা সেই ভাঙা কাঠামো ভেঙে দিয়ে একটি অস্থায়ী পাস ব্যবস্থা চালু করেছি যা নিশ্চিত করছে যে প্রকৃত সাংবাদিকরা সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার পাচ্ছেন। এটি প্রবেশাধিকার সীমিত করার জন্য নয়, বরং একটি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার জন্য।

আগের অ্যাক্রেডিটেশন নীতিমালায় সাংবাদিকদের সরকারপন্থি অবস্থান নিতে বাধ্য করার শর্ত ছিল। এমনকি এতে কিছু অপমানজনক ধারা ছিল যা সাংবাদিকদের সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থি। অন্তর্বর্তী সরকার সেটি সংশোধন করেছে। দীর্ঘমেয়াদি নবায়ন সুবিধাসহ নতুন অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড প্রদানের প্রক্রিয়া চলছে।

চাকরির নিরাপত্তা

স্পষ্ট করে বলা প্রয়োজন, যেসব সাংবাদিক তাদের চাকরি হারিয়েছেন, তা সরকারের নির্দেশে নয় বরং গণমাধ্যম মালিকদের সম্পাদকীয় বা করপোরেট কৌশলগত পুনর্বিন্যাসের কারণে হয়েছে। এগুলো সম্পূর্ণরূপে মালিকপক্ষের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের ফল, সরকারের কোনো চাপ বা নির্দেশ নয়।

সাংবাদিকদের নিরাপত্তা : যৌথ দায়িত্ব

আমরা সব নাগরিকের মতো সাংবাদিকদের শারীরিক নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের অগ্রাধিকার, তবে এই দায়িত্ব গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গেও যৌথভাবে ভাগ করে নিতে হবে।

এই বছরের শুরুর দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গঠিত মিডিয়া সংস্কার কমিশন একটি নতুন ‘সাংবাদিক সুরক্ষা আইন’ প্রণয়নের প্রস্তাব করেছে, যাতে আইনি সুরক্ষা বৃদ্ধি পায় এবং সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ের কারণে স্ব-সেন্সরশিপ কমে। সরকার প্রস্তাবিত আইনটি প্রণয়নের বিষয়টি বিবেচনা করছে।

আমরা গঠনমূলক সমালোচনার জন্য উন্মুক্ত আছি। নোয়াবকে পরামর্শ দিচ্ছি প্রথমে নিজেদের ভেতরে নজর দিন। নিজেদের সদস্যদের কার্যকলাপ পরীক্ষা করা উচিত আপনাদের- বিশেষ করে সাংবাদিকদের বেতন বঞ্চনা, শ্রম অধিকার হরণ, সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়া শত্রুভাবাপন্ন পরিবেশে কাজ করানো এবং অসহনীয় কর্মপরিবেশ সৃষ্টির অভিযোগে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে।

একটি সূক্ষ্ম রূপান্তরের সময়কালে সরকার পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন হিসেবে আমরা ইচ্ছাকৃতভাবেই ‘হ্যান্ডস-অফ’ পদ্ধতি বজায় রেখেছি, যাতে গণমাধ্যম ভয় বা হস্তক্ষেপ ছাড়া কাজ করতে পারে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের কাছে কেবল একটি স্লোগান নয়; এটি এমন একটি নীতি, যা আমরা পালন করি।

তথ্যের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্টভাবে দায়ী পক্ষকে লক্ষ্য করে উপস্থাপিত হলে নোয়াবের উদ্বেগ অধিক গুরুত্ব পেত। ঘটনাবলির ভুল ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে করা সাধারণীকৃত অভিযোগ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অগ্রসর করে না, বরং বাংলাদেশের গণমাধ্যম খাতের প্রকৃত সমস্যাগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেয়।

আমরা স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এই মৌলিক মূল্যবোধ রক্ষায় ও উন্নত করতে আমরা সকল অংশীজনকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই।







আরও খবর


 সর্বশেষ সংবাদ

সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে গফরগাঁওয়ে মানববন্ধন
রোববার থেকে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু, ৮০ টাকায় মিলবে চিনি
জোকোভিচের ১৫ হাজার ইউরো জরিমানা
ভারতে পালানোর সময় দীপু মনির ভাগ্নে রিয়াজ আটক
মজলুম সাংবাদিকদের দুর্দশা লাঘবে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি
আরো খবর ⇒


 সর্বাধিক পঠিত

গাজীপুরে পছন্দের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে না দেয়ায় যুবকের আত্মহত্যা
গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অটোয়ায় যুবকণ্ঠে গণ-আন্দোলনের চেতনা প্রতিধ্বনিত
৬ দিন মনে হচ্ছে ছয় হাজার বছর, বাবাকে হারিয়ে মিষ্টি জান্নাত
প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মেয়েকে হত্যা: বাবা ও চাচাসহ ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবসে নতুন সিনেমা ঘোষণা নিরবের
প্রকাশক: এম এন এইচ বুলু
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মাহফুজুর রহমান রিমন  |   উপদেষ্টা সম্পাদক : রাজু আলীম  
বিএনএস সংবাদ প্রতিদিন লি. এর পক্ষে প্রকাশক এম এন এইচ বুলু কর্তৃক ৪০ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বুলু ওশেন টাওয়ার, (১০তলা), বনানী, ঢাকা ১২১৩ থেকে প্রকাশিত ও শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ফোন:০২৯৮২০০১৯-২০ ফ্যাক্স: ০২-৯৮২০০১৬ ই-মেইল: spnewsdesh@gmail.com