কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বছরের শেষ মুহুর্তে পর্যটকের ঢল নেমেছে। প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি ও বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে ছুটে আসেন লাখো পর্যটক। প্রতিবছরই ইংরেজি নতুন বছরকে বরণ ও পুরোনো বছরকে বিদায় দিতে এখানে দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন।
তবে এ বছর সমুদ্র সৈকতে থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে কনসার্ট বা গান-বাজনার অনুষ্ঠান না থাকায় পর্যটকের উপচে পড়া ভিড় থাকছে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। অবশ্যই তারকা মানের হোটেলগুলোতে পর্যটকদের জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, পর্যটকদের একটি বড় অংশ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি দেশের একমাত্র প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনে ভ্রমণের জন্য আসেন। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল আগামী ৬-৮ জানুয়ারি বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এছাড়া এই সময়ে কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনে আবাসিক হোটেল-রিসোর্টে পর্যটক বা বহিরাগত বাসিন্দা অবস্থানে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

রোববার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে কক্সবাজার শহরের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে ঘুরে দেখা গেছে, কয়েক হাজার পর্যটক সমুদ্র সৈকতে স্নান ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছেন । বিভিন্ন বয়সের পর্যটকদের কেউ টায়ার টিউবে গা ভাসাচ্ছেন, কেউ জলযান (জেটস্কি) নিয়ে সাগর দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, কেউ আবার ঘোড়া ও বিচ বাইকে উঠে সৈকত দর্শনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। অনেকেই মেরিন ড্রাইভ ধরে দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক ও টেকনাফ সৈকতেও ছুটছেন। এছাড়া সেন্টমার্টিন, মহেশখালী আদিনাথ মন্দির, রামু বৌদ্ধপল্লী, চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, নিভৃতে নিসর্গসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটক সমাগম রয়েছে বলে জানান পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
সৈকতে গোসল করতে আসা পর্যটক শফিক আহমেদ জানান, ২৯ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসলাম। আজ ৩১ ডিসেম্বর রাতে চলে যাব। কক্সবাজারে এসে ভালো লাগছে। কিছুদিন এখানে থাকার কথা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতায় অবস্থান করা যাচ্ছে না।
মরিয়ম চৌধুরী নামের আরেক পর্যটক বলেন, বছরের শেষ তাই কক্সবাজার বেড়াতে এসে খুব ভালো লাগছে। তবে থার্টি ফার্স্ট নাইটের আয়োজন থাকলে আরও বেশি ভালো লাগতো। কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় এবার নতুন বছরে পর্যটকের চাপ কম। কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনের কলাতলী ও মেরিন ড্রাইভ সড়কে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, কটেজ ও রিসোর্ট রয়েছে। বর্তমানে অধিকাংশ হোটেলে ৩০ শতাংশের উপরে পর্যটক নেই। তবে নির্বাচনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পর্যটক আগমন বাড়তে পারে।
এদিকে, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ, বিচকর্মী ও লাইফ গার্ডের সদস্যরা।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় বাড়তি টহল ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পর্যটক হয়রানি ও দালালের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে মাঠে কাজ করছে প্রশাসন। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইয়ামিন হোসেন বলেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগামী ৬, ৭ ও ৮ জানুয়ারি টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে সকল জাহাজ চলাচলও বন্ধ থাকবে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের সকল হোটেল-মোটেল এবং গেস্ট হাউজও বন্ধও থাকবে। এছাড়াও সেন্টমার্টিনে আপাতত পর্যটকদের আসা-যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে ভোটের দিন কক্সবাজারের সকল হোটেল-মোটেল জোন বন্ধ রাখার কথা জানান এ কর্মকর্তা।