ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৈঠকে নির্বাচনের সময় সশস্ত্র বাহিনী কোন ভূমিকায় থাকবে, তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
আখতার আহমেদ বলেন, ডেপ্লয়মেন্ট প্ল্যানের আউটলাইন দেওয়া হয়েছে—এখন সংশ্লিষ্ট বাহিনী বিস্তারিত সাজাবে। কেন্দ্রে স্ট্যাটিক না রিজার্ভ না স্ট্রাইকিং— ওনারাই ঠিক করবেন। কতজন থাকবে, কতদিন থাকবে—সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলবে। তারা গাইডলাইনস প্রিন্সিপালস যেগুলো আছে— কীভাবে কী কাজ করবেন, না করবেন— সে সম্পর্কে তারা অন্যান্যবারের মতো দিকনির্দেশনা দেবেন। ইলেকশন কমিশনে আমরা ওভারঅল মনিটরিং এবং কোঅর্ডিনেশনটা দেখবো।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব বাহিনী নেই— আইনশৃঙ্খলা-সংশ্লিষ্ট বাহিনীর সমন্বিত প্রচেষ্টার ওপর আমরা নির্ভরশীল। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন— প্রথম দিন থেকেই মাঠে কাজ করবেন এবং কার্যকর ভূমিকা পালন করবেন।
সেনাবাহিনীকে বর্তমানে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া আছে। তফসিল ঘোষণার পর সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হিসেবে কাজ করছেন এবং তাদের ম্যাজিস্ট্রিয়াল পাওয়ার ২০২৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
তফসিল ঘোষণার পর এই এখতিয়ার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে কিনা, প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, বিষয়টি সাংঘর্ষিক হওয়ার মতো কিছু আমি দেখছি না।
ডেপ্লয়মেন্ট প্ল্যানের আউটলাইন সম্পর্কে ইসি সচিব বলেন, আমাদের ডেপ্লয়মেন্ট প্ল্যানে মূলত তিনটা ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। সেগুলো হচ্ছে—
স্ট্যাটিক: কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা কর্মী থাকবেন।
চেকপোস্ট: বিভিন্ন জায়গায় স্ট্যাটিক বা মোবাইল চেকপোস্ট হতে পারে। মোবাইল চেকপোস্ট হলে স্থান পরিবর্তন করে একইভাবে কাজ করবে।
মোবাইল কম্পোনেন্ট: মোটামুটি ঘুরে ঘুরে পর্যবেক্ষণ করবে। কতগুলো মোবাইল কম্পোনেন্ট থাকবে— এটা জিওগ্রাফিক্যাল লোকেশন, এক্সেস রোড ইত্যাদির ওপর নির্ভর করবে। সংশ্লিষ্ট বাহিনী সিদ্ধান্ত নেবে।
তিনি বলেন, অপতথ্য সংস্কৃতি থেকে মুক্ত থাকতে বিভিন্ন গণমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম পর্যবেক্ষণের জন্য একটি সাইবার নিরাপত্তা সেল গঠন করা হবে। এই সেলে ইউএনডিপির প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের পাশাপাশি তথ্য মন্ত্রণালয়, সিআইডি এবং অন্যান্য তথ্য যাচাইয়ে সক্ষম এজেন্সিগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
যোগাযোগ কৌশল ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন পরিকল্পনার বিষয়ে সচিব জানান, যোগাযোগ কৌশলে দ্বিমুখী প্রবাহ নিশ্চিত করা হবে। ওপর থেকে নিচে এবং নিচ থেকে ওপরে। অর্থাৎ, গ্রাউন্ড লেভেল বা তৃণমূল থেকেও তথ্য ওপরে এসে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করা হবে, শুধু নির্দেশনা ওপর থেকে নিচে যাবে না।
অতিরিক্ত বিবেচনা ও চ্যালেঞ্জগুলো বৈঠকে কিছু অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সবসময় একটি বিকল্প পরিকল্পনা (‘এ’ কার্যকর না হলে) প্রস্তুত রাখতে হবে, যাতে একইসঙ্গে দুই-তিনটি জায়গায় সমস্যা হলে, তা মোকাবিলা করা যায়। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো সীমিত নেটওয়ার্কের স্থানে ইন্টারনেট সুবিধা সেবাদাতাদের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। বডিওর্ন ক্যামেরার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া হারানো বা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াতে হবে। সন্ত্রাসীদের নজরদারি করে প্রয়োজনে আইনের আওতায় আনতে হবে। বৈধ অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে।
আখতার আহমেদ বলেন, বিদেশ থেকে আসা পোস্টাল ভোটের জন্য এয়ারপোর্ট ও তেজগাঁও ডাক বাছাইকেন্দ্রে দ্বিগুণ নিরাপত্তা রাখতে হবে। বাছাই থেকে রিটার্নিং অফিসারের কাছে পৌঁছানো, সংরক্ষণ ও গণনা সব পর্যায়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে কোনও ধরনের সুযোগ-সুবিধা না নেওয়া প্রসঙ্গে ইসি সচিব বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনও সদস্য স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে যেন কোনও আপ্যায়ন গ্রহণ না করেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে যানবাহনের সংকট মোকাবিলায় দফতরের যানবাহন অধিগ্রহণ বা ভাড়ায় সংগ্রহের বিষয়ে বাহিনী বাস্তবসম্মত সমাধান দেবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে এসময় বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার, সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, ডিএমপি কমিশনারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।