আওয়ামী ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর দুলারহাট থানাধীন মুজিবনগর ইউনিয়নের ১০০ একর কৃষি জমি অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালী পাঁচ ব্যক্তি। এদের ক্ষমতার প্রভাবে নিরুপায় কৃষকরা তাদের ভোগ দখলীয় কৃষিজমি হারিয়ে বিপাকে রয়েছেন। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উভয় পক্ষের কাগজ পত্র দেখে প্রকৃত কৃষকদের জমি ভোগ দখল নেয়ার জন্য আদেশ দিলেও প্রভাবশালীরা সেই আদেশ অমান্য করে রাতের আঁধারে জমিতে ধান বপন করে। এসব অভিযোগ করেছেন ওই এলাকার প্রায় অর্ধশত কৃষক। মুজিবনগর ইউনিয়নটি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দুলারহাট থানার বিচ্ছিন্ন একটি দ্বিপ এলাকা। এখানে প্রায় ১৩ হাজার মানুষের বসতি।
জানাযায়, মুজিবনগর ইউনিয়নের চর মনোহর মৌজায় ৪ ও ৫ নম্বর সীটে বন্দোবস্ত, ক্রয় ও ওয়ারীশ সূত্রে একশ একর জমির মালিক রয়েছেন অর্ধশত কৃষক। দীর্ঘ বছর ধরে ওইসব জমিতে কৃষকরা বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করে আসছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকার পলায়নের পর স্থানীয় প্রভাবশালী পাঁচ ব্যক্তি মো. সিরাজ বেপারী, মো. হারিছ বেপারী, রুবেল বেপারী, আলিম হাওলাদার ও বাবুল কন্ট্রাক্টর তাদের নিজস্ব ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অধর্শত কৃষকের একশ একর ভোগ দখলীয় জমি অবৈধভাবে দখল করে নেন। এসব কৃষকরা তাদের নিজেদের জমি ফিরে পেতে বিভিন্ন দপ্তর ও ব্যক্তির কাছে গিয়েও কোন প্রতিকার পাননি। সাম্প্রতিক স্থানীয় সালীশি বৈঠকে উপস্থিত কৃষকদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন ওই পাঁচ প্রভাবশালী ব্যক্তি। ৫ আগস্টের পর থেকে তাদের অব্যহত হুমকি-ধামকিতে অনেক কৃষক এলাকা ছাড়া।
কৃষক মো. ইউনুস হাওলাদার বলেন, ‘আমি মুজিবনগর ইউনিয়নের চর মনোহর মৌজায় ৪ নম্বর সীটে ৪১৮ ও ৪১০ বন্দোবস্তীয় খতিয়ানের মালিক। আমি দীর্ঘ বছর ধরে এসব জমি চাষাবাদ করে আসছি। তবে কোন আমলেই আমার জমি হাত ছাড়া হয়নি। কিন্তু ৫ আগস্টের পর মো. সিরাজের নেতৃত্বে আমার জমি ভোগ দখল করে নিয়ে যায়। আমি এক বছরেরও অধিক কোনসময়ে ধরে জমি চাষাবাদ করতে পারছিনা। এই নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেছি এবং স্থানীয় কয়েকজন গন্যামান্য ব্যক্তিদের জানিয়ে সমাধান পাইনি। এই বিষয়ে আমরা কৃষকরা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ করি। তিনি উভয় পক্ষকে ডেকে কাগজ পত্র পর্যালোচনা করেন দেখেন, আমরা সঠিক রয়েছি। তাই আমাদেরকে জমি দখল নিতে তিনি আদেশ দিয়েছেন।’
একই এলাকার কৃষক আঃ খালেক ফরাজী বলেন, ‘এই চরে আমার পরিবার নিয়ে প্রায় ৩০ বছর ধরে বসবাস করছি। কৃষি কাজই আমার মূল পেশা। নিজের ও অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করছি। দিয়ারা ২১ ও ২২ খতিয়ানে ৩ একর জমি মালিক। তবে ৫ আগস্টের পর মো. সিরাজ বেপারী, মো. হারিছ বেপারী, রুবেল বেপারী, আলিম হাওলাদার ও বাবুল কন্ট্রাক্টর ক্ষমতা খাটিয়ে আমার জমি জোর করে দখল করে নিয়েছে। এমনকি আমার বর্গা চাষের জমিও তারা নিয়ে গেছে। আমি এখন নিরুপায়। চাষাবাদের আয় দিয়ে আমার ৫ সদস্যের পরিবারের ভরণ পোষণ চলে। আমি এক বছর ধরে বেকার, আয়ের পথ বন্ধ। বিভিন্ন জনের ধারে ঘুরেও জমি ফিরে পাইনি।’ একইভাবে আনিছ পাটোয়ারী, খোকন হাওলাদার, রশিদ, আঃ হাসেম, মন্নান, ইউনুছ ও আঃ মালেকসহ অর্ধশত কৃষক তাদের ভোগ দখলীয় জমি হারিয়ে বিপাকে রয়েছেন।
অভিযুক্তদের মধ্যে রুবেল বেপারী মুঠোফোনে বলেন, আমরা প্রকৃত মালিকদের কাছ থেকে জমি রাখিনি। আগে যারা এই জমি দখলে ছিল, তাদের কাছ থেকে আমরা জমি দখলে নিয়ে অন্যান্য চাষাদের কাছে লগ্নি দিয়েছি। কিন্তু প্রকৃত কৃষকরা জমি ফিরে পাবে কিভাবে? এই প্রশ্নের জবাব রুবেল এড়িয়ে যায়। অভিযুক্ত মো. সিরাজ বেপারী, মো. হারিছ বেপারী, আলিম হাওলাদার ও বাবুল কন্ট্রাক্টকে সরজমিনে গিয়ে পাওয়া যায়নি। এবং তাদের মুঠোফোনে বন্ধ থাকায় বক্তব্য জানা যায়নি।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এমাদুল হোসেন বলেন, জমির প্রকৃত মালিকদের কাগজ পত্র সঠিক। তাদেরকে জমি ভোগ দখল করার জন্য বলা হয়েছে।