যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অনুমোদন পেয়েছে। পরিকল্পনাটিতে একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী (আইএসএফ) গঠনের কথা বলা হয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে—অনেক দেশ এই বাহিনীতে সদস্য পাঠাতে আগ্রহ দেখিয়েছে।এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়া ১৩ দেশের মধ্যে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও সোমালিয়াও রয়েছে। কোনো দেশ এর বিপক্ষে ভোট দেয়নি। রাশিয়া ও চীন ভোটদানে বিরত ছিল।
হামাস প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদের দাবি—এটি ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও দাবি পূরণ করে না।
টেলিগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় তারা বলেছে, পরিকল্পনাটি গাজা উপত্যকার ওপর একটি আন্তর্জাতিক অভিভাবকত্ব চাপিয়ে দিচ্ছে, যা আমাদের জনগণ ও প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো প্রত্যাখ্যান করে।
তারা আরও যুক্ত করেছে, আন্তর্জাতিক বাহিনীকে গাজায় দায়িত্ব পালন করানো, যার মধ্যে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের নিরস্ত্রীকরণও রয়েছে, তাদের নিরপেক্ষতা নষ্ট করবে এবং এটিকে দখলদারের স্বার্থে সংঘাতের পক্ষ হিসেবে দাঁড় করাবে।
সর্বশেষ খসড়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, আইএসএফ-এর কাজের একটি অংশ হবে ‘অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অস্ত্র স্থায়ীভাবে অপসারণ’— যার মধ্যে হামাসও রয়েছে। পাশাপাশি তারা বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা ও মানবিক সাহায্যের রুটগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
এতে হামাসকে তাদের অস্ত্র জমা দিতে হবে, যা ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার শর্তের মধ্যে পড়ে।
আইএসএফ গঠনের পাশাপাশি খসড়ায় বলা হয়েছে—এই বাহিনী ইসরায়েল ও মিসরের সঙ্গে কাজ করবে। একই সঙ্গে গাজায় নতুনভাবে প্রশিক্ষিত একটি ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনী গঠনের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত গাজার পুলিশ হামাসের অধীনে কাজ করে এসেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত মাইক ওয়াল্টজ পরিষদকে বলেন, আইএসএফের দায়িত্ব হবে অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, গাজার সামরিকীকরণ বন্ধে সহায়তা করা, সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংস করা, অস্ত্র সরানো এবং ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
পরিকল্পনার প্রথম ধাপ, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের বিনিময়, যা ১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়েছে। ওয়াল্টজ এটিকে খুবই নাজুক একটি প্রথম পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করেছেন।
আইএসএফ যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার কেন্দ্রীয় অংশ। পাশাপাশি একটি শান্তি বোর্ড গঠনের কথাও আছে, যার নেতৃত্বে থাকবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই।
দুই বছরের যুদ্ধের পর গাজা পুনর্গঠনের অর্থায়ন বিশ্বব্যাংকের তহবিল থেকে আসবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
খসড়ায় একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনার কথাও বলা হয়েছে, ইসরায়েল দৃঢ়ভাবে এর বিরোধিতা করে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আরব দেশের চাপের মুখে এই ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র গঠনের পথ পরিকল্পনায় যোগ করা হয়েছে।
ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা কার্যত ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান লড়াই বন্ধ করেছে। এই সংঘাত শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র হামলার পর, যেখানে প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়।
এরপর থেকে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে গাজায় ৬৯,৪৮৩ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।