
ভারতের লাদাখের লেহ শহরে বিক্ষোভকারী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষে চারজন নিহতের ঘটনায় এখনো উত্তপ্ত গোটা লাদাখ। লাদাখের রাজ্যের মর্যাদা এবং সাংবিধানিক সুরক্ষার দাবিতে হাজারো বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে আসে। তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে মুহূর্তে শহরজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। লাদাখে আন্দোলনের সঙ্গে রয়েছেন সোনম ওয়াংচুক, যিনি একজন প্রকৌশলী, উদ্ভাবক ও সমাজসংস্কারক। এই সোনমের জীবনকাহিনি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল বলিউডের বহুল আলোচিত ও ব্লকবাস্টার সিনেমা ‘থ্রি ইডিয়টস’। বর্তমানে কেন্দ্রশাসিত লাদাখ অঞ্চলে চলমান বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন তিনি।
এর ফলে আরো হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে যোগ দেন। এ সময় তারা বিজেপির একটি অফিস এবং পুলিশের একটি গাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি চালায়। চলমান রাজ্যের মর্যাদা আন্দোলনের সময় এটিই সহিংসতার প্রথম ঘটনা।
এদিকে, লাদাখে আন্দোলনের সঙ্গে রয়েছেন সোনম ওয়াংচুক, যিনি একজন প্রকৌশলী, উদ্ভাবক ও সমাজসংস্কারক। সোনম ২০১৮ সালে র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার লাভ করেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সোনমের জীবনকাহিনি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল বলিউডের বহুল আলোচিত ও ব্লকবাস্টার সিনেমা ‘থ্রি ইডিয়টস’। বর্তমানে কেন্দ্রশাসিত লাদাখ অঞ্চলে চলমান বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন তিনি।
এনডিটিভির রিপোর্ট অনুযায়ী, সোনম ওয়াংচুক এ মাসের শুরুতে লাদাখকে আলাদা রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে অনশন শুরু করেন। অনশন দীর্ঘদিন চলার পরও দাবি মেনে না নেওয়ায় বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) লাদাখে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই অবশ্য অনশন প্রত্যাহার করেন সোনম ওয়াংচুক। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ পথের বার্তা ব্যর্থ হয়েছে। আর সরকার সংঘর্ষের জন্য সোনম ওয়াংচুকের কর্মীদের দায়ী করেছে।
সোনম ওয়াংচুক একজন বিখ্যাত ব্যক্তি হওয়ায় ২০০৯ সালে তার জীবনকাহিনি নিয়ে নির্মাণ করা হয় বলিউডের ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমা। এতে ফুনসুক ওয়াংড়ু নামে একটি চরিত্রে অভিনয় করেন বলিউডের মিস্টার পারফেকশনিস্ট খ্যাত তারকা আমির খান। সিনেমাটিতে তিনজন ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের জীবনকে অনুসরণ করা হয়েছে। যারা তাদের আবেগ অনুধাবনের পাশাপাশি শিক্ষা ও সামাজিক প্রত্যাশার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করেছেন।
প্রখ্যাত নির্মাতা রাজকুমার হিরানি পরিচালিত ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমায় ফুনসুখ ওয়াংড়ু মূলত র্যাঞ্চো নামে পরিচিত ছিলেন। এতে তাকে একজন মেধাবী, কৌতূহলী ও মুক্তমনা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে দেখানো হয়েছে। মৌলিক চিন্তা-ভাবনা ও ধারণার মাধ্যমে ইম্পেরিয়াল কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (আইসিই) ক্লাসের সব বন্ধুদের প্রভাবিত করেছিলেন তিনি। এতে র্যাঞ্চোর সঙ্গে বন্ধু হিসেবে ছিলেন ফারহান ও রাজু, চরিত্র দুটিতে অভিনয় করেন মাধবন ও শারমন যোশী। র্যাঞ্চো তার এই দুই বন্ধুকে স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে এবং সামাজিক চাপের ফাঁদে না পড়তে উৎসাহিত করেন। সিনেমায় একটি দৃশ্যে দেখা যায়, র্যাঞ্চো তার বন্ধু ফারহানকে তার বাবাকে বলতে অনুপ্রাণিত করে যে, সে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় না এবং বন্য প্রাণীর ফটোগ্রাফি করতে আগ্রহী সে।
র্যাঞ্চো একজন প্রতিভাবান ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে দয়ালু ছাত্র ছিলেন। তার চারপাশে যা দেখেন এবং পড়েন, তা সহজেই আত্মস্থ করে নিতে পারতেন। তবে তিনি মুখস্থ করার বিরুদ্ধে ছিলেন এবং লক্ষ্য বাস্তবায়নে ব্যবহারিক শিক্ষা ও সৃজনশীলতা প্রয়োগ করতেন। ‘থ্রি ইডিয়টস’-এ তিনি প্রায়ই বলতেন, নিজের আবেগ অনুসরণ করলে সাফল্য পাওয়া যায়। সিনেমাটির কিছু আইকনিক দৃশ্যের শুটিং লাদাখে করা হয়েছিল। এর ক্লাইম্যাক্স, যেখানে প্রধান চরিত্রদের আবেগঘন পুনর্মিলন হয়, তা প্যাংগং লেকের পাড়ে দৃশ্যায়ন করা হয়েছিল। আবার ফুনসুখ ওয়াংড়ু চরিত্রটি যে আবাসিক স্কুলে কাজ করে, সেটি হচ্ছে ড্রুক হোয়াইট লোটাস স্কুল, যা লাদাখের শে’র কাছে অবস্থিত।