অভিযোগ রয়েছে, রুবেল তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এবং উপমন্ত্রী নওফেলের সখ্যতায় যেভাবে চাইতো এনসিটিবি সেইভাবেই পরিচালিত হতো। প্রভাবশালীর সহায়তায় তারা এনসিটিবিতে প্রবেশ করে এবং অল্প সময়েই শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও সরবরাহ খাতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন তারা।

শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, নিম্নমানের বই সরবরাহ, চালান না দিয়েও স্বাক্ষর করানো, বিল উত্তোলন, দরপত্র প্রক্রিয়ায় অনিয়ম এবং ইন্সপেকশন কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণ—সবকিছুই এই সিন্ডিকেটের কর্মকাণ্ডের অংশ ছিল। একাধিক সংবাদমাধ্যমেও এ সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।

এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মো. জহুরুল ইসলাম ২০২৩ সালে দূর্নীতি দমন কমিশন- দুদকে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই সময় দুদকও এই প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে  কোন ব্যবস্থা নিতে পারিনি।

ক্রিকেটার মশারাফি বিন মুর্তজার চাচা এনসিটিবির তৎকালীন চেয়ারম্যান ফরহাদুল ইসলাম চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও পুরো এনসিটিবির একক প্রভাব বিস্তার করেন রুবেল। পরবর্তীতে পানি জাহাঙ্গীরের প্রভাবে তারা বোর্ডের বিভিন্ন পদে কর্মরতদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেন। একই সঙ্গে জাহাঙ্গীরের প্রভাবে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতিতে  রুবেল নিজে সেক্রেটারি, রবিন স্ট্যান্ডিং কমিটির আহবায়ক এবং হুমায়ুন কবীর ভাইস চেয়ারম্যান পদে আসীন হন। সেই থেকে নিন্মমানের পাঠ্যপুস্তক সরবরাহের এক মহাযজ্ঞ চালু হয়। বিভিন্ন জায়গায় বই না দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে চালান স্বাক্ষর করিয়ে এনে বিল নিয়ে নিত। অভিযোগ রয়েছে এই দুই ভাই কাগজ ব্যবসার সাথেও জড়িত। জামান ট্রেডার্স নামে তাদের এই প্রতিষ্ঠান থেকে নিন্ম মানের কাগজ সরবরাহ করে  বিল প্রাপ্তির শর্তে সরবরাহ করতো।

আওয়ামী লীগ আমলে এই দুই ভাইয়ের পছন্দ না হলে কোন কর্মকর্তাই এনসিটিবিতে চাকরী করতে পারত না। তাদের ব্যবসার মূল পূজি দাতা পানি জাহাঙ্গীর। ৫ই আগস্ট ২০২৪ এর পট পরিবর্তনের এই দুই ভাই নিজেদেরকে পরিবর্তন করে রাতারাতি বিএনপি বনে যায়। এক সাবেক মন্ত্রীর ছত্রচ্ছায়ায় তাদেন প্রভাব আগের চেয়েও বেড়ে যায় । রুবেল বর্তমানে নিজেকে যুবদলের কর্মী হিসেবে দাবী করে ।

২০২৪ শিক্ষা বর্ষের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের দরপত্রে শুরু হয় নতুন খেলা। বিভিন্ন পত্রিকার মাধ্যমে মানুষকে নাজেহাল করে, ধমক দিয়ে দরপত্র এক সাথে করার চেষ্টা শুরু হয়। রুবেল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও কিছু মিডিয়াকে খুশি করার নামে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নেয়।

জানা যায়, রুবেল সিন্ডিকেট ২০১৯ সাল থেকে ২০২৫ পর্যন্ত প্রায় ১২০০ কোটি টাকার কাজ নিয়ে নিয়েছে এনসিটিবি থেকে। ২০২৫ শিক্ষা বর্ষে একই পরিবারের ৩ জন পেয়েছে ২৫০ কোটি টাকার বই মুদ্রনের কাজ। ২০২৬ শিক্ষা বর্ষেও কাজ পেয়েছে প্রায় ২১০ কোটি টাকার কাজ ! মুদ্রণ ও প্রকাশনা জগতে আওয়ামী লীগের নাম নিলে প্রথম কাতারে এই দুই ভাইয়ের নাম আসে।

এই সব অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য ফোনে যোগাযোগ করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

এই বিষয়ে বাংলাদেশ মুদ্রন শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান জানান- বিষয়টি নিয়ে ইতোপূর্বে আমাদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম দুদক বরাবর একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন। তৎকালীন সময়ে জাহাঙ্গীর সাহেবের প্রভাবে আমরা কোন প্রতিকার ও ন্যায় বিচার পাইনি। আমরা প্রকৃত মুদ্রন ব্যবসায়ীরা এই সিন্ডিকেটের প্রভাব মুক্ত এনসিটিবি চাই।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব অনিয়ম ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের কারণে বছরের পর বছর পাঠ্যপুস্তকের মান ও সরবরাহে সংকট তৈরি হয়েছে। এই বিষয়ে তারা স্বাধীন তদন্ত ও আইনি ব্যবস্থা এবং সুষ্ঠু তদন্তের  দাবি তুলেছেন।