এক-এগারোর পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে বলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি এক লাইনের এই স্ট্যাটাসের শেষে আশ্চর্যবোধক চিহ্ন জুড়ে দেন। এই স্ট্যাটাস দেয়ার কিছু সময় পর তিনি এটি আবার এর সংশোধনী দেন। সেখানে তিনি নতুন এটি লাইন যুক্ত করে লিখেন, তবে, জুলাই জয়ী হবে। জনগণের লড়াই পরাজিত হবে না। নিজের দেয়া এই স্ট্যাটাসের একটি ব্যাখ্যাও তিনি দেন কমেন্ট বক্সে।
‘১/১১ এর পদধ্বনির কথা কেন বলসি’ এই শিরোনামে দেয়া ব্যাখ্যায় তিনি লিখেন, ‘জুলাইয়ের শক্তিগুলোর ঐক্য নাই এবং এ ঐক্য ধরে না রাখার ক্ষেত্রে আমাদের যতটা দায়, তারচেয়ে বেশি পুরাতন ১/১১ শক্তিগুলোর অন্তর্ঘাতক কর্মকান্ড দায়ী।
জুলাইয়ের শক্তিগুলোর আত্মতুষ্টির সুযোগে পুরাতন ১/১১ পন্থীদের বিভাজন এবং অন্তর্ঘাতের সুযোগ বৃদ্ধি। আওয়ামীলীগকে স্বাভাবিকীকরণ এবং জুলাইয়ের ছাত্র-জনতাকে ভিলিফিকেশন মূলধারা হয়ে উঠসে। পুরাতন অর্থনৈতিক এবং কালচারাল বন্দোবস্ত ফিরিয়ে আনার তোড়জোড়, যার পথ ধরে লীগকে ফিরিয়ে আনার পথ প্রশস্ত হবে। ক্ষমতার দ্বন্দে দলগুলো নিয়ে জনগণের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি এবং বিরাজনীতিকরণের পুরাতন প্রচেষ্টা। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যর্থ দেখিয়ে জনগণের মধ্যে হতাশা তৈরি এবং হতাশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্যাভিওর ক্রাইসিস তৈরির প্রচেষ্টা।
জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানকে অন্য দশটা ইভেন্টের মত বানিয়ে জনগণ বিশেষ করে ছাত্রদের মধ্যে হীনম্মণ্যতা তৈরির প্রচেষ্টা।
জুলাইয়ের পক্ষের শক্তিকে ধীরে ধীরে অরাজকতাকারী অযোগ্য , ব্যর্থ হিসাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে জুলাইয়ের সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়া। নির্বাচন নিয়ে ধোয়াশা তৈরি, যেখানে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উল্লেখেযোগ্য টানাপোড়েন নেই। রাজনৈতিকতার অবসান, বিরাজনীতিকরণের প্রচেষ্টা, রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে হতাশা তৈরি এবং স্যাভিওর ক্রাইসিস তৈরি- সবই ১/১১ এর পুনরাবৃত্তির প্রচেষ্টা হিসাবে উল্লেখ্য।’
গতকাল উপদেষ্টা জুলাই আন্দোলনে বিভিন্ন পক্ষের ভূমিকা নিয়েও আরেকটি স্ট্যাটাস দেন। ‘জুলাই আমাদের সবার’ ওই শিরোনামের স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘দলীয় বা আদর্শিক বিরোধের জেরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে কারো অবদান অস্বীকার করা উচিত না। এখানে শিবির ভূমিকা রেখেছে তাদের ‘জনশক্তি’ ও কো-অর্ডিনেশন দিয়ে। বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে শিবিরের কর্মীরা অভ্যুত্থানকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, ক্ষেত্র বিশেষ চালিয়ে নিয়ে গেছেন।
ছাত্রদল ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফ্যাসিস্ট বাহিনীকে প্রতিরোধ করেছে, প্রতিরোধ স্পটগুলোতে লড়াই করেছে, তৃণমূলে লীগকে প্রতিরোধ করেছে। ছাত্রশক্তি কো-অর্ডিনেট করছে মাঠে-সামনে থেকে, সিভিল সোসাইটি আর কালচারাল সার্কেলে এবং আস্থা তৈরি করতে পেরেছে। ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মীরা সারাদেশে প্রতিরোধ গড়েছেন এবং আগের কোটা আন্দোলনের লড়াইয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন। ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ, ছাত্র ফেডারেশন ও অন্যান্য বাম ছাত্র সংগঠনগুলো মাঠ ও বয়ান ধরে রাখছে, বামপন্থি সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো জুলাইয়ের শেষ দিনগুলোতে মাঠে নেমে জনগণের মধ্যে সাহস সঞ্চার করেছে।
আলেম ও মাদ্রাসা ছাত্ররা রাজপথে নেমে দীর্ঘসময় প্রতিরোধ ধরে রেখেছিলেন। যাত্রাবাড়ী যার উজ্জ্বল উদাহরণ।
শ্রমজীবীরা এবং প্রাইভেটের শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধের স্পটগুলোতে দীর্ঘসময় লড়াই করেছে, রিকশাচালক ও নিম্ন, নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষেরা প্রতিরোধ গড়েছেন।
নারীরা রাজপথে লড়েছে এবং আহতদের সহযোগিতা করেছে। অভিভাবক বিশেষ করে মায়েরা, বোনেরা কারফিউর দিনগুলোতে এবং জুলাইয়ের শেষ থেকে রাস্তায় নেমে সাহস জুগিয়েছেন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধের স্পটগুলোতে নিজেরাই নেতৃত্ব দিয়ে অভ্যুত্থান এগিয়ে নিয়ে গেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাংবাদিক সমিতি ও অন্যান্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন অভ্যুত্থানের পক্ষে নীরব অথচ কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে। ছাত্রলীগের একটা অংশ বিদ্রোহ করে অভ্যুত্থানে যুক্ত হয়েছেন।
উঠতি মধ্যবিত্ত জুলাইয়ের শেষদিকে নেমে অভ্যুত্থানকে আরো ব্যাপক করেছেন। পেশাজীবী সংগঠনগুলো এবং সাংস্কৃতিক ও মিডিয়া কর্মীরা জুলাইয়ের শেষদিকে একাত্মতা প্রকাশ করে অভ্যুত্থানকে শক্তিশালী করেছেন।
প্রবাসী শ্রমিক, চাকুরে এবং প্রফেশনালরা জুলাইকে, বাংলাদেশের লড়াইকে বৈশ্বিক করতে ভূমিকা রেখেছেন। সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার এবং র্যাপাররা জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছেন, অনুপ্রাণিত করেছেন। জনগণের লড়াইয়ের কার কোন অবদান অস্বীকার করবেন?’