‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে মুন্সীগঞ্জ শহরে পথসভা ও পদযাত্রার আয়োজন করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। কর্মসূচিতে দলের শীর্ষ নেতারা দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যাতায়াতসহ নানা সংকট তুলে ধরে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য লড়াইয়ের ঘোষণা দেন। পথসভাটি অনুষ্ঠিত হয় শহরের কৃষি ব্যাংক চত্বরে শুক্রবার (১৮ জুলাই) দুপুরে।
এতে অংশ নেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরউদ্দীন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা ও সামান্তা শারমিনসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। সকাল থেকেই কর্মসূচিকে ঘিরে শহরে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এ ছাড়া পুলিশ ও সেনাবাহিনীকেও সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে।
পথসভায় বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জে ছিল এই উপমহাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা কেন্দ্র, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। আজ মুন্সীগঞ্জে স্বাস্থ্যসেবার বেহাল অবস্থা। ঢাকার এত কাছে হওয়া সত্ত্বেও যাতায়াত ব্যবস্থার বেহাল দশার কথা আমরা জানি। শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের দুর্গতি রয়েছে মুন্সীগঞ্জে। মুন্সীগঞ্জ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়। মুন্সীগঞ্জ সেই বিক্রমপুর, সেই ইদ্রাকপুরের ঐতিহ্যকে ধারণ করে দাঁড়াতে চায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেকটি লড়াই সামনে আসছে। আমরা সেই লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা জানি, মুন্সীগঞ্জবাসী নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের সেই লড়াইয়ে আমাদের সঙ্গে থাকবেন। গোপালগঞ্জে হামলা চালানো হয়েছে। বাংলাদেশের আরও দশটা জায়গায় হামলা চালানো হবে। কিন্তু, আমাদের দমন করা যাবে না। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মুজিববাদের বিরুদ্ধে যে লড়াই আমরা ঘোষণা করেছি, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে লড়াই শুরু করেছি, সেই লড়াই শেষ না করে আমরা থামবো না।’
প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে তিনি বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জের হাজারো মানুষ প্রবাসে থাকেন। আমরা প্রবাসীদের ভোটাধিকারের পক্ষে কথা বলছি। আপনাদের স্বজন প্রবাসীদের এ ব্যাপারে সরব হতে বলুন। আমরা তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবো।’
তিনি বলেন, ‘আজ জুম্মাবার। আমরা আপনাদের সঙ্গে একত্রে নামাজ পড়বো। শহীদদের জন্য দোয়া করবো। বাংলাদেশের উপর আল্লাহর রহমতের জন্য দোয়া করবো।’
পথসভায় সারজিস আলম বলেন, ‘জুলাই গণহত্যার নির্দেশদাতা, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা, শাপলাচত্বরে গণহত্যার নির্দেশদাতা দিল্লিতে বসে থাকা হাসিনাকে দেশে এনে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এই বাংলাদেশে হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেখে মরতে চাই। দেশের বাইরে বসে যারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় গণহত্যার সশস্ত্র হামলার ষড়যন্ত্র করছে তাদের অচিরেই গ্রেফতার করে জুলাই সহযোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
এ সময় হাসনাত আবদুল্লাহ পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব দল-মতের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
এর আগে কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সকাল থেকে মুন্সীগঞ্জ শহর উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী নানাস্তরের মানুষ সভাস্থলে আসতে থাকেন। পথসভায় দলটির অর্ধশতাধিক কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। পথসভা শেষে দুপুরে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে তারা রওনা দেন।