বিশ্বের সবচেয়ে বড় ওয়েব সিকিউরিটি ও নেটওয়ার্ক অবকাঠামো প্রদানকারী কোম্পানি ক্লাউডফ্লেয়ারের সাম্প্রতিক বড় ধরনের বিভ্রাট বিশ্বজুড়ে অসংখ্য জনপ্রিয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে একযোগে অচল করে দেয়। ঘড়ির কাঁটা যেন একসঙ্গে থেমে যায় বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন অনলাইন গণমাধ্যম, এক্স, চ্যাট জিপিটি, জেমিনি, ক্যানভা, ট্রুথ সোশ্যাল, এমনকি অনলাইন গেম লীগ অব লেজেন্ডস–এর মতো সেবাগুলোর।
প্রশ্ন উঠছে, টেক জায়ান্টরা ক্লাউডফ্লেয়ারের ওপর এতটা নির্ভরশীল কেন? কী এই ক্লাউডফ্লেয়ার?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্লাউডফ্লেয়ার আসলে ইন্টারনেটের পর্দার আড়ালের সেই ‘গোপন স্তম্ভ’, যার ওপর দাঁড়িয়ে থাকে অসংখ্য বড় টেক প্ল্যাটফর্ম।
ওয়েবসাইটকে দ্রুত লোড করানো, সার্ভারকে সুরক্ষা দেওয়া, বট ও ফেইক ট্র্যাফিক প্রতিরোধ, ডিডস আক্রমণ ঠেকানো—এসব কাজেই ক্লাউডফ্লেয়ার জুড়ে থাকে হাজার হাজার প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্কে। ফলে ক্লাউডফ্লেয়ারে এক মুহূর্তের সমস্যা মানে শতভাগ নয়, কিন্তু ইন্টারনেটের বড় একটি অংশে তাৎক্ষণিক ধাক্কা।
ক্লাউডফ্লেয়ার: ইন্টারনেটের আড়ালের নিরাপত্তা-প্রহরী
অনেকে ক্লাউডফ্লেয়ারের নাম শোনেন না, কিন্তু তাদের সেবা না থাকলে লাখো ওয়েবসাইট বিপর্যয়ের মুখে পড়ে—এ ঘটনাই আবার তা প্রমাণ করল।
জেনে রাখা ভালো, ক্লাউডফ্লেয়ার বিশ্বব্যাপী ৩৩০টি শহরে নেটওয়ার্ক সেন্টার পরিচালনা করে, বিশ্বজুড়ে ১৩'শ নেটওয়ার্ক সরাসরি তাদের সঙ্গে যুক্ত এমনি ইন্টারনেটের প্রায় ২০ শতাংশ ওয়েবসাইট তাদের সাপোর্ট ব্যবহার করে। সুতরাং ক্লাউডফ্লেয়ারের সামান্য বিচ্যুতিও বোঝায় ইন্টারনেটের বড় অংশে বড় ধরনের বিপর্যয়।
মজার বিষয় হলো, এবার বিভ্রাটের মাত্রা এত বেশি ছিল যে ডাউন ডিডেক্টর–ই কিছু সময় অচল হয়ে পড়ে। কারণ প্ল্যাটফর্মটি নিজেও ক্লাউডফ্লেয়ারের অবকাঠামোর ওপর নির্ভরশীল।
পরে সাইটটি পুনরুদ্ধার হলে তারা জানায়— স্পটিফাই, ক্যানভা, এক্স, চ্যাটজিপিটিসহ বড় বড় প্ল্যাটফর্ম থেকে বিপুল সংখ্যক ত্রুটি–সংক্রান্ত রিপোর্ট পাওয়া গেছে।
ক্ষমা প্রার্থনা এবং মূল কারণ
ক্লাউডফ্লেয়ারের নির্বাহী প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) ডেইন নেক্ট তার এক ক্ষমাপ্রার্থনামূলক পোস্টে জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক ব্যাপক আউটেজের মূল কারণ ছিল একটি ল্যাটেন্ট বাগ—অর্থাৎ দীর্ঘদিন ধরে অদেখা থাকা একটি সফটওয়্যার ত্রুটি।
নেক্ট বলেন, কোম্পানির বট মিটিগেশন সিস্টেমের ভরসার একটি সার্ভিসে থাকা ওই বাগটি রুটিন কনফিগারেশন পরিবর্তনের পর সক্রিয় হয়ে যায়। এর ফলে সার্ভিসটি ক্র্যাশ করতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে পুরো নেটওয়ার্ক ও বিভিন্ন সেবায় বিরূপ প্রভাব পড়ে। তিনি পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেন— ‘এটি কোনও সাইবার আক্রমণ ছিল না।’
নেক্ট আরও বলেন, এই আউটেজের কারণে গ্রাহক ও বৃহত্তর ইন্টারনেট অবকাঠামোর যে ক্ষতি হয়েছে, তার সম্পূর্ণ দায় ক্লাউডফ্লেয়ার স্বীকার করছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, এমন ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে পুনরায় না ঘটে তা নিশ্চিত করতে কোম্পানি জরুরি পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ক্লাউডফ্লেয়ার শুধু একটি সাইবার সিকিউরিটি টুল নয়—এটি আজকের ইন্টারনেটের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর এ ধরনের ঘটনা স্পষ্ট করে দিচ্ছে, ইন্টারনেট যতই বিকশিত হোক—মাত্র কয়েকটি কোম্পানির ওপর তার নির্ভরশীলতা এখনও ভয়াবহভাবে বেশি।