প্রকাশ: শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ২০২৫, ৫:২৮ PM
ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পসহ দুঃস্থদের ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নিয়ে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক উধাও হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া নানা অজুহাতে কয়েক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আর ফেরত দেননি বলে দাবি করেছেন তার সহকর্মীরা। সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ জুলাই থেকে মোজাম্মেল হক অফিসে আসছেন না।
এর আগে সমাজসেবা কার্যালয়ের ব্যাংক হিসাব থেকে দুঃস্থদের ঋণ কার্যক্রম ও নানা ভাতার ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা অবৈধভাবে তুলে হাতিয়ে নেন মোজাম্মেল হক। বিষয়টি জানাজানি হলে তদন্তের উদ্যোগ নেন জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা। দুর্গাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাসুল তালুকদারকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্তে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি উঠে আসে। গত ১৪ আগস্ট জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়।
মোহনগঞ্জ সমাজসেবা কার্যালয় ও তদন্ত সূত্রে জানা যায়, সমাজসেবা কর্মকর্তা মোজাম্মেল সই জাল করে প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তির ৪ লাখ ৭৫ হাজার, মাতৃকেন্দ্রের ঋণ কর্মসূচির ৫ লাখ ১৩ হাজার, ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের ১ লাখ ৪০ হাজার ও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের ২২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নেন। এ ছাড়া অফিসের কর্মীদের থেকে ঋণ হিসেবে ২ লাখ ও উপজেলার বিভিন্ন কর্মকর্তাদের থেকে মায়ের অসুখসহ নানা অজুহাতে আরও কয়েক লাখ টাকা নিয়েছেন।
উপজেলার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, একজন সমাজসেবা কর্মকর্তা পরিবারের কারও অসুস্থতার কথা বলে টাকা ধার চাইলে কে দেবে না বলেন? আমিও বেশ কয়েক হাজার টাকা
দিয়েছি। পালিয়ে যাওয়ার পর অনেক কর্মকর্তাই জানিয়েছেন, তাদের কাছ থেকে একইভাবে টাকা ধার নিয়েছেন মোজাম্মেল হক। এর পরিমাণ কয়েক লাখ হবে। অনেকে আবার মানসম্মানের ভয়ে বলতে চাইছে না।
মোজাম্মেল হক ২০২৪ সালের মে মাসে মোহনগঞ্জ উপজেলায় সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকেই নানা অনিয়ম শুরু করেন।
এ বিষয়ে জানতে মোজাম্মেল হকের মোবাইল ফোনে একাধিকার কল করা হলেও বন্ধ পাওয়া যায়।
জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক শাহ আলম বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হয়েছে। মোজাম্মেল হক ৩৩ লাখ টাকার বেশি অবৈধভাবে অফিসের ব্যাংক হিসাব থেকে উত্তোলন করেছেন বলে তদন্তে পাওয়া গেছে। তদন্তের প্রতিবেদন অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারি টাকা আত্মসাৎ করার কোনো সুযোগ নেই। তার বিরুদ্ধে মামলা হবে। টাকাও ফেরত দিতে হবে। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুর্গাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা পদে দায়িত্ব পালন করেন মোজাম্মেল। সেখানেও তিনি আর্থিক অনিয়ম করেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে তাকে তিরস্কার দণ্ড দিয়ে মোহনগঞ্জে বদলি করা হয়।