জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ- সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, প্রতিটি অনুচ্ছেদ ধরে আলোচনা করার সুযোগ না থাকলেও সংশোধনী ও সংযোজনীগুলো দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ বা আপত্তির বিষয়গুলো বৃহস্পতিবারের (৩১ জুলাই) মধ্যে কমিশনকে জানাতে আহ্বান করেন তিনি।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকাল ৩টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২২তম দিনের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে— সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব (অনুচ্ছেদ ৪৮-৩), রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, ইলেক্ট্রোরাল কলেজ, উচ্চকক্ষের গঠন, সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি, এখতিয়ার, নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ সম্পর্কিত প্রস্তাব ও রাষ্ট্রের মূলনীতি।
অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তা আজ বিকালের মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। আজকের আলোচনা সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতে পারে এবং প্রয়োজনে কালও কিছুটা সময় বাড়ানো হতে পারে। আমাদের লক্ষ্য— একটি গ্রহণযোগ্য ঐক্যমতের খসড়া সনদ চূড়ান্তভাবে সবার হাতে তুলে দেওয়া।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, আজকে এবং আগামীকালই এই প্রক্রিয়ার আলোচনা শেষ করতে পারবো। আমাদের লক্ষ্য তাই।’
আলী রীয়াজ জানান, সকালে কমিশনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো কিছু বিষয় আলোচনার দায়িত্ব দিয়েছে, যার মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয় আছে। সেগুলো নিয়ে আলোচনা অব্যাহত আছে এবং আমরা আশা করছি— সিদ্ধান্তগুলো আগামীকালের মধ্যেই গ্রহণ করতে পারবো।
তিনি বলেন, ‘দিনের আলোচ্য সূচিতে থাকা বেশ কিছু বিষয়ে এরইমধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। বিশেষভাবে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আলোচনার একটি লিখিত খসড়া প্রস্তাব আজ দলগুলোর কাছে হস্তান্তর করা হবে।’
‘মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) যে বিষয়ে আলোচনা শেষের দিকে আমরা এক জায়গায় এসেছি, এর একটি লিখিত ভাষা সবাইকে দেওয়া হবে।’
তিনি আরও জানান, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব সংক্রান্ত আলোচনা হয়নি। কারণ বিষয়টি এখনও উপস্থাপন করা হয়নি। এছাড়া নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ সংক্রান্ত প্রস্তাব আলাদাভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে আলোচনার সময় নাগরিকের মৌলিক অধিকারগুলো সম্প্রসারিত করার বিষয়ে সব দলই একমত হওয়ার কথা বলেছিল। সেই নীতিগত অবস্থান থেকেই সংবিধানে পরিবর্তন ও সংশোধনের প্রস্তাব এসেছে।’
তিনি জানান, কমিশনের পক্ষ থেকে যে পাঁচটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে দলগুলোর মধ্যে পূর্ণ ঐকমত্য হয়নি। বিএনপি তাদের সুস্পষ্ট পরামর্শ ও অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে— যেখানে একমত, সেখানে সেটা বলা হয়েছে এবং যেখানে নয়, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছে।
এ বিষয়ে তিনি বিএনপিকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এখন প্রশ্ন হলো, এসব বিষয়কে তৃতীয়ভাবে কীভাবে সংবিধানে সন্নিবেশিত করা যায়? সেটা আমরা বিবেচনায় এনেছি।’
তিনি আরও জানান, আজকের আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব ছাড়া বাকি সব বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনার মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চান তারা। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবিপার্টি-সহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেছেন।
বৈঠকে কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন— বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।